হাসপাতালে রবীন। —নিজস্ব চিত্র
শেষ পর্যন্ত ডান হাত বাদই গেল পথ দুর্ঘটনায় আহত যুবকের!
৩১ মার্চ ইএম বাইপাসে একটি বাসের ধাক্কায় ডান হাতে গুরুতর চোট পান হরিদেবপুরের বাসিন্দা, পেশায় হোটেলের রাঁধুনি রবীন বিশ্ব। বছর তিরিশের ওই যুবককে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এসএসকেএমের অস্থি বিভাগের প্রধান, অধ্যাপক আনন্দকিশোর পাল রবিবার বলেন, ‘‘রবীনের ডান হাত এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল যে অনেক চেষ্টা করেও জোড়া লাগানো সম্ভব হয়নি। শীঘ্রই ওঁর প্লাস্টিক সার্জারি করা হবে। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে কৃত্রিম অঙ্গের সাহায্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন রবীন।’’
এখনও দুর্ঘটনার আতঙ্ক ভুলতে পারেননি রবীন। চিকিৎসার জন্য তাঁকে মাসখানেক থাকতে হবে হাসপাতালে। একটানা ঘুমোতে পারছেন না। ক্ষত জায়গায় যন্ত্রণাও হচ্ছে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ট্রমা কাটাতে বেশ কিছু দিন সময় লাগবে তাঁর। রবিবার এসএসকেএমের জরুরি বিভাগের দোতলায়, নিউ অর্থোপেডিক বিভাগের ২০ নম্বর শয্যায় গিয়ে দেখা গেল, ঘুমোচ্ছেন রবীন। পাশে বসে স্ত্রী মৌসুমী। বললেন, ‘‘নিজের কাটা হাতের দিকে তাকাতে পারছেন না। ডান দিকে মাথা ঘোরালেই চোখেমুখে আতঙ্ক স্পষ্ট হচ্ছে। তবে চিকিৎসকেরা নানা ভাবে সাহায্য করছেন।’’ ঘুম থেকে উঠে রবীন বললেন, ‘‘পরিবারে আমি একমাত্র রোজগার করি। ডান হাতটাই তো চলে গেল, জানি না কী করব। আমি হাসপাতালে শুয়ে থাকলে সংসারই চলবে কীভাবে?’’
তবে হাত খোয়া গেলেও যে রবীন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন, তা নিশ্চিত করছেন চিকিৎসকেরাই। আনন্দকিশোর পাল বলেন, ‘‘প্লাস্টিক সার্জারির পর হাসপাতালের তরফে বিনামূল্যে কৃত্রিম হাত দেওয়া হবে। ওই হাতের সাহায্যে বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, ফের নিজের পেশায় ফিরতে পারবেন রবীন।’’ একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের অস্থি বিভাগের শল্য চিকিৎসক চন্দ্রশেখর ধরের কথায়, ‘‘মনের জোরে কৃত্রিম অঙ্গ নিয়ে অনেকেই অসাধ্য সাধন করেছেন। রবীনবাবুও স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন।’’
তাঁরা মনে করাচ্ছেন, অস্কার পিস্টোরিয়াস বা সুধা চন্দ্রনের কথা। ১১ বছর বয়সে দু’পা হারানো পিস্টোরিয়াস হয়ে উঠেছিলেন ‘ব্লেড রানার’। ১৬ বয়সে দুর্ঘটনায় পা হারানো সুধা চন্দ্রন কৃত্রিম পায়ের সাহায্যে হয়েছিলেন নৃত্যশিল্পী। ‘‘পিস্টোরিয়াস বা সুধা চন্দ্রনের অঙ্গ বাদ গেলেও তাঁরা থেমে থাকেননি। একই ভাবে রবীনও স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন,’’ বলছেন আনন্দকিশোর।