Shampa Das

ভাড়াটে খুনিকে ঘরে বসিয়ে শম্পাকে স্বামীর ফোন: বাড়ি ফেরো

সুপ্রতিম ছাড়াও এই খুনের ঘটনায় সুপ্রতিমের মা মীরা এবং পরিচারিকা মায়ার ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে পুলিশের। তাঁদেরও জেরা করে হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৮ ০৯:৪২
Share:

নিহত শম্পা দাস।

শুক্রবার ফোন করে শম্পাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বলেছিলেন তাঁর স্বামী সুপ্রতিম। বলা হয়েছিল, বাড়িতে মাংস কেনা রয়েছে।রান্না করতে হবে।শম্পা যেন থানা থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরেন। তাই নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাড়ি ফিরে আসেন নিউটাউন থানার সিভিক ভলান্টিয়ার শম্পা দাস। কিন্তু, ঘুণাক্ষরেও তিনি বুঝতে পারেননি, বাড়িতে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে ভাড়াটে খুনিরা।

Advertisement

কৈখালির চিড়িয়াবাগানে সিভিক ভলান্টিয়ার শম্পা দাসকে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে খুন করিয়েছিলেন তাঁর স্বামী সুপ্রতিম। টানা জেরার পর সুপ্রতিম রবিবার গোটা ঘটনাটি স্বীকার করেন। সুপ্রতিমের সঙ্গেই গোটা ষড়যন্ত্রে শরিক ছিল তার মা মীরা।মা-ছেলে দু’জনকেই গ্রেফতার করেছে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশ।

ছ’মাস আগে থেকেই স্ত্রীকে খুনের ছক শুরু করে সুপ্রতিম। তদন্তকারীদের দাবি, কৈথালিতেই থাকে বিধাননগর পুরনিগমের সাফাই কর্মী রশিদ মোল্লা।মাঝে মাঝে সুপ্রতিমকে মালিশ করতে আসত সে। সেই সূত্রেই সুপ্রতিমের সঙ্গে ঘণিষ্ঠতা বাড়ে তার। রশিদকেই প্রথম খুনের পরিকল্পনা জানায় শম্পার স্বামী।রশিদের মূল বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ এলাকায়। সেখান থেকে সে আরও দু’জন সঙ্গীকে এই কাজের জন্য নিয়ে আসে শুক্রবার। তাদের একজন ওই এলাকার কুখ্যাত দুষ্কৃতী।বিধাননগর পুলিশের ডিসি(সদর) অমিত জাভালগি বলেন, “ ওই তিন ভাড়াটে খুনি নিজেরাই অস্ত্র নিয়ে এসেছিল। খুনের পর সেই অস্ত্র নিয়ে পালায়।”

Advertisement

রশিদকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি দু’জনের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

পুলিশের দাবি, শম্পার রক্তাক্ত দেহ পাওয়া গিয়েছিল বাড়ির সিঁড়ির উপর। আর সুপ্রতিমকে একটি চেয়ারের সঙ্গে বাঁধা অবস্থায় পাওয়া যায়। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী হওয়া সত্ত্বেও তাঁর বক্তব্যে অনেক অসঙ্গতি খুঁজে পান তদন্তকারীরা।জাভালগি বলেন,“ঘটনার দিন শম্পার শাশুড়ি মীরা তার তিন বছরের নাতি এবং পরিচারিকা মায়াকে নিয়ে বাজারে গিয়েছিলেন। বাড়িতে কেউ ছিল না।”

দেখুন ভিডিয়ো...

এই বিষয়টিও পুলিশের মনে সন্দেহ তৈরি করে। মা-ছেলের পাশাপাশি জেরা শুরু হয় পরিচারিকার। জেরায় পরিচারিকাই প্রথম স্বীকার করে সে এই খুনের পরিকল্পনা জানত। ওই দিন শম্পাকে খুল করা হবে জেনেই নাতিকে নিয়ে বাজারে গিয়েছিল মীরা। পরিচারিকা যাতে মুখ না খোলে, সেই কারণে তাকেও বাজারে নিয়ে যায় মীরা। পরিচারিকার বয়ানের ওপর ভিত্তি করেই সুপ্রতিমের ওপর চাপ বাড়ায় পুলিশ।জেরার মুখে সুপ্রতিম স্বীকার করেন, ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে শম্পাকে খুন করানোর কথা। জেরায় তিনি জানিয়েছেন, শম্পার সঙ্গে নিউটাউন থানার অন্য এক সিভিক ভলান্টিয়ারের ঘণিষ্ঠতা ছিল। সেই আক্রোশ থেকেই খুনের পরিকল্পনা। অন্যদিকে মীরার দাবি, শম্পা থানায় চাকরি করায় সবসময় পুলিশের ভয় দেখিয়ে সুপ্রতিম এবং তার ওপর অত্যাচার করত। বাড়িতে সুপ্রতিমের ভাগ মায়ের নামে লিখে দেওয়া নিয়ে শম্পা মীরাকে মারধর করে বলেও অভিযোগ মীরার। সেই আক্রোশেই খুনের পরিকল্পনায় সায় দিয়েছিল মীরা।

আরও পড়ুন: সিভিক ভলান্টিয়ার খুনে কি পরিচিতেরা

কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ায়, তার পক্ষে শম্পাকে খুন করা সম্ভব ছিল না। তাই ভাড়াটে খুনিদের সাহায্য নেওয়া হয়। ওই ভাড়াটে খুনিরাই শুক্রবার পরিকল্পনা মাফিক বাড়িতে অপেক্ষা করছিল। শম্পা বাড়ি ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা। তার পর শম্পাকে খুন করে সুপ্রতিমকে বেঁধে রেখে যায়। লণ্ডভণ্ড করে দেয় ঘর-আলমারি।যাতে মনে হয় ডাকাতির জন্য দুষ্কৃতীরা ঢুকেছিল। বাঁধা দিতে গিয়ে খুন হন শম্পা।

সুপ্রতিমের এই বয়ান খুব বিশ্বাসযোগ্য মনে করছে না পুলিশ। এক তদন্তকারীর কথায়, “আমরা শম্পার সহকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। যে সিভিক ভলান্টিয়ারের বিরুদ্ধে ঘণিষ্ঠতার কথা বলা হচ্ছে, তিনি শম্পার ভাল বন্ধু ছিলেন। এর থেকে বেশি আর কিছু নয়।’’

আরও পড়ুন: বাড়িতে ঢুকে হামলা, ‘নিগ্রহ’ মহিলাকে

অন্য দিকে শম্পার ভাই রবিবার তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, শম্পার নামে রাজারহাটে একটি জমি আছে। সেই জমি সুপ্রতিমের নামে লিখে দেওয়ার জন্য দীর্ঘ দিন ধরেঅ চাপ দিচ্ছিলেন শম্পার শাশুড়ি এবং সুপ্রতিম। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সুপ্রতিম সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করলেও, শারিরীক প্রতিবন্ধকতার জন্য বাড়িতেই থাকতেন। শম্পার আয় এবং সুপ্রতিমের বাবার রেখা যাওয়া টাকা দিয়েই চলত সংসার। সুপ্রতিমের এক মাসি বিদেশে থাকেন। সুপ্রতিমের মায়ের ইচ্ছে ছিল, সব সম্পত্তি বিক্রি করে ছেলেকে নিয়ে বিদেশে পাকাপাকি চলে যাওয়া। তাই তদন্তকারীদের সন্দেহ, সম্পত্তির লোভেও খুনের পরিকল্পনা করা হতে পারে। সোমবারই সুপ্রতিম এবং মীরাকে আদালতে তোলা হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement