প্রতীকী ছবি।
এক রোগিণীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন তাঁর ভাই। সেই ঘটনার জেরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে মৃতার ভাই-সহ সাত জনকে গ্রেফতার করল বাগুইআটি থানার পুলিশ।
গত ১০ ফেব্রুয়ারি তেঘরিয়ার ওই বেসরকারি হাসপাতালে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জেরে মৃত্যু হয় বারাসতের বাসিন্দা পম্পা মজুমদারের (৫০)। চিকিৎসায় গাফিলতির জেরেই তাঁর মূক ও বধির দিদি পম্পার মৃত্যু হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মৃতার ভাই পুলক মজুমদার। বিষয়টি গড়ায় স্বাস্থ্য কমিশন পর্যন্ত। পুলকের দাবি, দিদির চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু নথি বারবার চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সেগুলি দিচ্ছিলেন না। দিদির চিকিৎসা বাবদ ৬ লক্ষ ৬৬ হাজার টাকার বিল হয়েছিল। সেই টাকা মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলকের অভিযোগ, এর পরেও নথি দেয়নি ওই হাসপাতাল। দু’মাস ধরে এ নিয়ে টানাপড়েন চলার পরে শনিবার বিকেলে সাত জন প্রতিবেশীকে নিয়ে ওই বেসরকারি হাসপাতালে হাজির হন পুলক। চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি কেন দেওয়া হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। আর তা করতে গিয়ে পুলক ও তাঁর সঙ্গীরা হাসপাতালে রীতিমতো তাণ্ডব চালান বলে অভিযোগ।
ওই বেসরকারি হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সোনালি চক্রবর্তীর দাবি, মার্চে স্বাস্থ্য কমিশন তাঁদের কাছে মৃতার চিকিৎসা সংক্রান্ত সব আসল নথি চেয়ে পাঠান। তাই এখন আর তাঁদের কাছে কোনও নথি নেই। অভিযোগ, পুলকবাবু সে কথা শুনতে চাননি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলক ও তাঁর সঙ্গীদের আচরণে হাসপাতালের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। তাঁরা উপরে ওঠার চেষ্টা করলে নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দেন। অভিযোগ, ওই রক্ষী এবং চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীকে পুলক ও তাঁর দলবল মারধর করেন। এর পাশাপাশি তাঁরা অশ্রাব্য ভাষায় চিকিৎসক, নার্স এবং হাসপাতালের কর্মীদের গালিগালাজ করেন বলেও অভিযোগ। এক সময়ে তিনতলায় আইসিইউ রুমে ঢুকে চিৎকার-চেঁচামেচি জুড়ে দেন অভিযুক্তেরা। সোনালির অভিযোগ, ‘‘মৃতার ভাইয়ের আচরণে আইসিইউ-এর রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। ওপিডি-র কর্মীরা কোথায় পালিয়ে বাঁচবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না! বাধ্য হয়ে আমরা পুলিশ ডাকি।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, এক সময়ে উত্তেজিত হয়ে হাসপাতালে আগুন লাগানোর হুমকি দেন মূল অভিযুক্ত। অভিযোগ, আইসিইউ-এর কাচ ভাঙারও চেষ্টা করেন তাঁরা।
এ দিন সোনালি বলেন, ‘‘এর আগেও ওঁর আচরণে রোগীরা বিব্রত হয়েছেন। কিন্তু বিষয়টি আমরা সহানুভূতির সঙ্গে আমরা দেখছিলাম। শনিবার কিছু করার ছিল না।’’ যদিও পুলকের দাবি, ‘‘শুধু দিদির চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজগুলো চেয়েছিলাম। দিনের পর দিন আমায় ঘোরানো হচ্ছে। বিষয়টি সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।’’ রবিবার ধৃতদের বারাসত আদালতে তোলা হয়।