দিনে ক্যাব চালিয়ে রাতে ক্যাব ছিনতাই

পুলিশ জানিয়েছে, গত ৩১ তারিখ মাঝরাতে বাঙালবাবু ব্রিজের কাছে যাত্রী সেজে একটি অ্যাপ-ক্যাবে ওঠে চার দুষ্কৃতী। কিছু দূর যাওয়ার পরে চ্যাটার্জিপাড়ার কাছে চালককে ছুরি মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় ওই চার জন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

পাকড়াও: থানায় ধৃতেরা। মঙ্গলবার, হাওড়ায়। নিজস্ব চিত্র

এ যেন সেই ডক্টর জেকিল আর মিস্টার হাইডের গল্প!

Advertisement

দিনের বেলা যাদের হাতে থাকত অ্যাপ-ক্যাবের স্টিয়ারিং, রাতে তারাই ছুরি-পিস্তল নিয়ে বেরিয়ে পড়ত লুঠপাট করতে!

গত ৩১ মার্চ গভীর রাতে চালককে কুপিয়ে রাস্তায় ফেলে দেওয়ার পরে তাঁর অ্যাপ-ক্যাব নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। হাওড়ার সেই ঘটনার তদন্তে নেমে গোলাবাড়ি থানার পুলিশ গ্রেফতার করেছে অভিযুক্ত চার যুবককে। প্রত্যেকেরই বয়স ১৮ থেকে ২০-র মধ্যে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম রবিঠাকুর তিওয়ারি, অভয়কুমার সিংহ ওরফে বিট্টু, ধর্মেন্দ্র যাদব ওরফে ভিকি এবং পিন্টু যাদব। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, এদের মধ্যে রবিঠাকুর ও অভয়কুমার পেশায় অ্যাপ-ক্যাব চালক। দিনে ক্যাব চালালেও রাতে ওদের কাজ ছিল, যাত্রী সেজে গাড়ি ছিনতাই, লুঠপাট-সহ নানা দুষ্কর্ম করা। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ধৃতেরা স্বীকার করেছে যে, হাওড়ায় গাড়ি চুরি, ডাকাতি, দোকান ভেঙে লুঠপাট ও মোবাইল ছিনতাই-সহ একাধিক ঘটনায় সরাসরি যুক্ত ছিল ওই যুবকেরা। ধৃতদের তিন জনের বাড়ি হাওড়ায়। এক জনের কোন্নগরে।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, গত ৩১ তারিখ মাঝরাতে বাঙালবাবু ব্রিজের কাছে যাত্রী সেজে একটি অ্যাপ-ক্যাবে ওঠে চার দুষ্কৃতী। কিছু দূর যাওয়ার পরে চ্যাটার্জিপাড়ার কাছে চালককে ছুরি মেরে রাস্তায় ফেলে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চম্পট দেয় ওই চার জন। দু’দিন পরে গাড়িটিকে পাওয়া যায় গোলাবাড়ি থানা এলাকার ভাগাড়ের কাছে। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ রাস্তার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে ওই চার জনকে চিহ্নিত করে। সেই ছবি দেখানো হয় জখম ক্যাব-চালককে। ছবি দেখেই চার দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করেন তিনি। প্রথমে ওই দুষ্কৃতীদের নাগাল না পেলেও সোমবার বেশি রাতে সালকিয়ার ভাগাড়ের কাছে চার যুবককে সন্দেহজনক ভাবে ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। গোলাবাড়ি থানার পুলিশ তাদের ঘিরে ফেলে। ওই যুবকদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি পিস্তল, দু’রাউন্ড গুলি ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র। গ্রেফতার করা হয় তাদের। এর পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে পাওয়া ছবি ধৃতদের ছবির সঙ্গে মিলে যায়। রাতেই শুরু হয় জেরা।

পুলিশ জানায়, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, রাত হলেই হাওড়ার গুলমোহর, ডবসন রোড অথবা হাওড়া স্টেশন চত্বরে জড়ো হতো ওই চার দুষ্কৃতী। সেখানে মোটরবাইক রেখে যাত্রী সেজে অ্যাপ-ক্যাব ভাড়া নিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় চলে যেত তারা। তার পরে ডাকাতি বা ছিনতাই করে অন্য ক্যাব নিয়ে ফিরে আসত নিজেদের মোটরবাইকের কাছে।

তদন্তকারীরা জানান, গত ৩১ তারিখ রাতে ঠিক এ ভাবেই বাঙালবাবু ব্রিজের উপরে যাত্রী সেজে দাঁড়িয়ে ওই অ্যাপ-ক্যাবে উঠেছিল চার দুষ্কৃতী। কিছুটা যাওয়ার পরে চালককে এলোপাথাড়ি ছুরির কোপে জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে পালিয়ে যায় তারা। পরে গুরুতর আহত ওই চালককে এলাকার লোকজন উদ্ধার করেন। তাঁরাই পুলিশে খবর দিলে ব্যাঁটরা থানার পুলিশ এসে ওই চালককে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে।

গোলাবাড়ি থানার ওসি তথাগত পাণ্ডে বলেন, ‘‘ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, অ্যাপ-ক্যাব ছিনতাই করার পরে ওই রাতেই গাড়ি নিয়ে কলকাতার মানিকতলায় চলে যায় চার দুষ্কৃতী। সেখানে দু’জনের মোবাইল ছিনতাই করে। তার পরে হাওড়ায় ফিরে এসে সালকিয়া ভাগাড়ের কাছে গাড়ি ফেলে রেখে পালায়।’’ তথাগতবাবু জানান, ওই চার জন নিয়মিত এই ধরনের কাজকর্ম করে বেড়াত। মঙ্গলবার বিকেলে ধৃতদের হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের আট দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement