পিঠ বাঁচাতে হাসপাতালের ডেঙ্গি-খাতা

বেসরকারি হাসপাতালের খরচ সামলাতে না পেরে প্রতি বছর ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশ দমদম পুরসভার হাসপাতালের দ্বারস্থ হন। পুরসভার এক কর্তা জানান, ওই রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বাসিন্দা।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:০১
Share:

দমদম পুর-হাসপাতালে রোগীর ভিড়। ফাইল চিত্র

পরিষেবা নাও। বিপদে ফেল না! বলছে দমদম পুরসভা। আর সে জন্যই পুর হাসপাতালে ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ‘বহিরাগত’ চিহ্নিত করতে তৎপর হয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

বেসরকারি হাসপাতালের খরচ সামলাতে না পেরে প্রতি বছর ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের একটি বড় অংশ দমদম পুরসভার হাসপাতালের দ্বারস্থ হন। পুরসভার এক কর্তা জানান, ওই রোগীদের মধ্যে বেশির ভাগই দক্ষিণ দমদম পুর এলাকার বাসিন্দা। এ ছাড়া উত্তর দমদম, বিধাননগর পুর নিগমের রাজারহাট-গোপালপুর এলাকা, ব্যারাকপুর, মধ্যমগ্রামের বাসিন্দারাও ওই হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। দমদমের পুর কর্তাদের একাংশের দাবি, অন্য পুরসভার বাসিন্দাদের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরের খাতায় তাঁদের নামের নীচে লাল কালির দাগ পড়ছে! পুর কর্তাদের একাংশের দাবি, হাসপাতালে কত জন রোগী ভর্তি রয়েছেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে পাঠাতে হয়। এক পুর কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন মানেই স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা ধরে নিচ্ছেন তাঁরা দমদমের বাসিন্দা! কিন্তু পরে ঠিকানা যাচাই করে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা সকলে দমদমের নয়। রোগীর তালিকায় অন্য পুরসভার বাসিন্দারাও রয়েছেন।’’

তাই ‘বহিরাগত’দের চিহ্নিত করতে নতুন বছরে পৃথক খাতা চালু করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কী রকম? এক পুর কর্তা জানান, এ বছর থেকে ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ে কোনও রোগী ভর্তি হলে, হাসপাতালের খাতায় রোগীর নামের পাশে বয়স, কোন এলাকা, ওয়ার্ড নম্বর এবং সর্বোপরি কোন পুরসভা এলাকার, তা লিখে রাখা হবে। ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কারা দমদমের এবং কারা দক্ষিণ দমদম বা অন্য পুর এলাকার বাসিন্দা, তা বুঝতে এই ব্যবস্থা! দমদম পুরসভার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘অন্য পুর এলাকার বাসিন্দাদের পরিষেবা দিতে আপত্তি নেই। কিন্তু তা করতে গিয়ে বদনামের ভাগ নিতে হচ্ছে!’’ পুরসভা সূত্রের খবর, গত বছরের তিক্ত অভিজ্ঞতার নিরিখে এ কথা বলছেন ওই আধিকারিক।

Advertisement

পুরসভা সূত্রের খবর, জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে তথ্য পৌঁছয় স্বাস্থ্য ভবনে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে ডেঙ্গি সংক্রমণ নিয়ে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তাদের অস্বস্তিকর প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে দমদম পুরসভা। বস্তুত, গত বছর ডেঙ্গি যখন উদ্বেগজনক আকার নিয়েছিল তখন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে পুরসভাগুলিকে সতর্ক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সতর্কবার্তার সেই তালিকায় বিধাননগর পুরনিগমের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী দমদমের নাম করেছিলেন। অথচ ডেঙ্গিতে মৃত্যুর হার অনেক বেশি ছিল দক্ষিণ দমদম পুর এলাকায়। সেই প্রেক্ষিতে দমদম পুরসভার এক কর্তা বলেন, ‘‘এই বিড়ম্বনার তো কোনও অর্থ হয় না! তাই স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের ধারণা বদলাতে খাতায়-কলমে চলতে চাইছি।’’

দমদমের পুর প্রধান হরীন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের পুর এলাকার বাসিন্দা বলে যে তালিকা দেওয়া হচ্ছে, অনেক সময়ে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা অন্য পুর এলাকার বাসিন্দা। সেই বিভ্রান্তি কাটাতেই এই উদ্যোগ।’’ অন্য পুরসভার অভ্যন্তরীণ বিষয় বলে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দক্ষিণ দমদমের পুর প্রধান। উত্তর দমদমের চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) মহুয়া শীল বলেন, ‘‘গত বছর থেকে আমাদের হাসপাতালে একই ব্যবস্থা চালু করেছি। তবে ব্যক্তিগত ভাবে বিশ্বাস করি, ডেঙ্গি রোধে রেষারেষি নেই। কে কোন পুর এলাকার বাসিন্দা, তা না দেখে সকলে ঝাঁপাতে হবে।’’ যার প্রেক্ষিতে দমদমের আবার এক পুর কর্তা বলেন, ‘‘ঝাঁপাতে আপত্তি নেই। শুধু রোগীর নাম-গোত্র-পরিচয় উল্লেখ করে তা করতে চাইছি!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement