নতুন মুখ সামনে এনেই কঠিন লড়াইয়ের মোকাবিলায় নামল বামফ্রন্ট। কলকাতা পুরসভার জন্য বাম প্রার্থী তালিকায় এ বার নয়া মুখেরই প্রাধান্য। কলকাতার ১৪৪টির মধ্যে ১২৫টি ওয়ার্ডের যে তালিকা প্রথম দফায় বামেরা প্রকাশ করেছে, তার মধ্যে ৫০%-এর বেশি এমন প্রার্থী আছেন, যাঁরা আগে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন না। মহিলা এবং সংখ্যালঘু মুখের সংখ্যাতেও এ বার তৃণমূলকে ছাপিয়ে যাচ্ছে বামেরা।
কলকাতার সিপিএম এবং অন্যান্য বাম শরিক দলের নেতৃত্বকে পাশে নিয়ে রবিবার আলিমুদ্দিনে কলকাতা পুরসভার জন্য প্রথম দফার প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। তৃণমূলের সার্বিক প্রার্থী তালিকায় এ বার মহিলা আছেন ৬৬ জন। বামেদের প্রথম দফায় ঘোষিত ১২৫ জনের মধ্যেই ৬৭ জন মহিলা। যে ১৯টি ওয়ার্ডের (কলকাতার পাঁচটি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা অংশে ১০১ থেকে ১১৪ নম্বর ওয়ার্ড) প্রার্থীর নাম এখনও ঘোষণা বাকি আছে, তার মধ্যে অন্তত চার জন থাকবেন মহিলা। সুতরাং, অন্তত ৭১ জন মহিলা প্রার্থী থাকছেন বামেদের হয়ে ময়দানে। তৃণমূলের তালিকায় সংখ্যালঘু ২০ জন। সেখানে বাম তালিকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু ২৩ জন, ভাষাগত সংখ্যালঘু ২১ জন। বিমানবাবুর ব্যাখ্যা, মহিলা, সংখ্যালঘু মিলে তাঁরা প্রার্থী তালিকায় যথাসম্ভব ভারসাম্য রাখার চেষ্টা করেছেন। বোঝাই যাচ্ছে, তৃণমূলের পরে তালিকা ঘোষণার ফায়দা নিয়ে মহিলা ও সংখ্যালঘু মুখে শাসক দলকে টেক্কা দিতে চাইছে বামেরা।
সচরাচর বামেরা নির্বাচনের আগে কাউকে মেয়র পদপ্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করে না। এ বার সম্ভাব্য মেয়র পদপ্রার্থী নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি বলে বিমানবাবু জানিয়েছেন। প্রার্থী তালিকায় সিপিএমের পরিচিত কাউন্সিলর হিসাবে সুধাংশু শীল, রূপা বাগচি, রাজীব বিশ্বাস, ঝুমা দাস, দীপু দাসদের নাম আছে। চার বছর আগে বিধানসভা ভোটের প্রার্থী কনীনিকা বসু (ঘোষ)-কেও মহিলা মুখ হিসাবে প্রার্থী করা হয়েছে। শরিকদের মধ্যে সিপিআইয়ের মৌসুমী দাস, আরএসপি-র প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র কল্যাণ মুখোপাধ্যায়দের মতো কাউন্সিলরেরাও প্রার্থী হয়েছেন। তৃণমূলের তুলনায় দেরিতে হলেও প্রথম তালিকা ঘোষণার পরে এ দিন থেকে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বামেদের প্রচার শুরু হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মধ্যে বামেদের তরফে যে অংশের দায়িত্ব দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের হাতে, সেখানে অবশ্য এখনও জটিলতা আছে। শরিক দলের সঙ্গে ওয়ার্ড অদলবদলের প্রশ্নে সিপিএমের আলোচনা এখনও মেটেনি। আবার কলকাতা শহরের অংশে সিপিআইকে এ বার একটি বাড়তি আসন ছাড়তে পারে সিপিএম। কিন্তু যে ওয়ার্ড তারা দিতে চায়, সিপিআই তা নিতে নারাজ। এমতাবস্থায় কাল, মঙ্গলবার রাজ্য বামফ্রন্টের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে মধ্যস্থতা করা হবে। সম্ভব হলে সে দিনই বাকি তালিকা ঘোষণা করে দেওয়া হবে।
বিমানবাবুর বক্তব্য, তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক বেনিয়ম এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতি লঙ্ঘনের অভিযোগকেই তাঁরা হাতিয়ার করবেন। রাজ্য বামফ্রন্টের তরফে পুরভোটের ইস্তাহারে সার্বিক বক্তব্য লেখা হবে। তার পরে কলকাতা-সহ আলাদা পুরসভাগুলির জন্য আলাদা ‘আবেদন’ প্রকাশ করা হবে। বিমানবাবু এ দিন বলেন, “কলকাতা পুরসভা যখন ৪০টা ওয়ার্ড নিয়ে ছিল, তখনও গণতান্ত্রিক পরিবেশ এর চেয়ে ভাল ছিল! একটি অগণতান্ত্রিক শক্তির হাতে ক্ষমতা রয়েছে! গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার লড়াই করতে হবে বামেদের।”
লোকসভা ভোটের নিরিখে দেখলে বামেরা পুর-লড়াইয়ে অনেক পিছিয়ে! লোকসভা ভোটের ফল অনুযায়ী কলকাতায় ১১টি ওয়ার্ডে এগিয়ে বামেরা, ৬০টিতে তারা দ্বিতীয় স্থানে। সাম্প্রতিক একটি জনমত সমীক্ষায় বামেদের ২৫টি ওয়ার্ড জয়ের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফলাফল যা-ই হোক, বামেরা যখন ময়দানে নামছে, তত দিনে শহরের সব দেওয়ালই তো প্রায় তৃণমূল নিয়ে নিয়েছে! সিপিএমের কলকাতা জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “শুধু দেওয়াল লেখাই তো সব নয়! আমাদের লোকজন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিজেদের কথা বলবে।” লড়াই কঠিন জেনেই এ বার ঢালাও নতুন মুখ এনে এবং মহিলা ও সংখ্যালঘু মুখ বাড়িয়ে মরিয়া চেষ্টা করতে চাইছেন নিরঞ্জন, দিলীপ সেনেরা।