—প্রতীকী ছবি।
শহর জুড়ে পানীয় জলের পাইপ লাইনের পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল মানচিত্র তৈরির কাজ শুরু করল কলকাতা পুরসভা। সম্প্রতি পুরসভায় এই সংক্রান্ত বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে পানীয় জল সরবরাহ বিভাগের শীর্ষকর্তারা ছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ১০০ ইঞ্জিনিয়ারকে ডাকা হয়েছিল। কী ভাবে কাজ করতে হবে, তার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে ওই বৈঠকে। কোন ওয়ার্ডে, কোন রাস্তার তলায় কত ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ রয়েছে, কোথায় ক’টি ভালভ আছে, ক’টি পাম্পিং স্টেশন, কোথায় কোথায় পাইপলাইনগুলি সংযুক্ত হয়েছে, রাস্তার ধারে কতগুলি কল রয়েছে— এ সবই মানচিত্রে নথিভুক্ত হবে। কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, এই ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি হয়ে গেলে আগামী দিনে তার উপর ভিত্তি করে তৈরি হবে পানীয় জল সংক্রান্ত উন্নয়নের যাবতীয় কাজ।
কলকাতা পুরসভার প্রতিটি ওয়ার্ড ধরে ধরে এই মানচিত্র তৈরির কাজ করা হবে। পানীয় জলের ডিজিটাল মানচিত্র তৈরির প্রয়োজনীয়তা কেন অনুভব করল কলকাতা পুরসভা? এমন প্রশ্নের জবাবে কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে,
কোন রাস্তার ধারে ক’টি পানীয় জলের কল রয়েছে, কোন কোন বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ চালু রয়েছে, শহরের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বস্তিগুলিতেই বা কত সংখ্যক কল আছে, তা-ও জানা যাবে। কোথায় কত সংখ্যায় বুস্টার পাম্পিং স্টেশন রয়েছে কিংবা কোন বুস্টার থেকে কোথায় পানীয় জলের সরবরাহ করা হচ্ছে, এই সব বিষয়গুলি ডিজিটাল মানচিত্রে নথিভুক্ত করা হবে। এ ছাড়াও কোন দৈর্ঘ্য-প্রস্থের রাস্তায় কত ইঞ্চির পাইপ থাকে, তার একটি পূর্বনির্ধারিত মাপ রয়েছে। ফলে প্রতিটি রাস্তা মেপে বুঝে নেওয়া হবে তার তলায় কত ইঞ্চির জলের পাইপলাইন রয়েছে। সেই লাইনের ভালভগুলি কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে, তা জানার সহজ উপায় এই মানচিত্র মারফত পাওয়া যেতে পারে বলেই কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর।
কলকাতা পুরসভার ১৪ নম্বর বোরোর অধীন বেহালার ১২৮ নম্বর ওয়ার্ডে মানচিত্র তৈরির কাজ চলছে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। এ প্রসঙ্গে পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের এক আধিকারিক বলেন, “পুরসভা এলাকায় মূলত দু’ধরনের পাইপলাইন রয়েছে। একটি ছয় ইঞ্চি এবং অন্যটি চার ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ। কোন রাস্তার নীচ দিয়ে কত ইঞ্চির পাইপ গিয়েছে, তার একটি পুরনো ম্যাপ রয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেটির তথ্যে একাধিক বার সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। সেই পরিবর্তনের পর পানীয় জলের লাইনের কোনও পুনঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পুরসভার হাতে নেই। তাই ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি করে নতুন প্রযুক্তি দিয়ে মাটির তলায় থাকা পানীয় জল সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য হাতে রাখাই লক্ষ্য কলকাতা পুরসভার।” ইতিমধ্যেই শহরে ওয়ার্ডভিত্তিক ভূগর্ভস্থ নিকাশি নালার মানচিত্র বানিয়েছে কলকাতা পুরসভা। সেই মানচিত্র তৈরির দায়িত্বে ছিলেন মেয়র পরিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ। সেই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পানীয় জলের ডিজিটাল মানচিত্র তৈরির দায়িত্ব তাঁকে দিয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে,
আগামী দিনে ডিজিটাল মানচিত্রের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতের উন্নয়নের রূপরেখা তৈরি করা যাবে। যদি কখনও মনে হয় যে, কোথাও চার ইঞ্চির বদলে ছয় ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ বসাতে হবে কিংবা কোথাও নতুন বুস্টার তৈরি হলে সেখানে জলের চাপ বাড়ানো যাবে, সে সবই এই ম্যাপের নিরিখে করা যাবে। তবে এই ডিজিটাল মানচিত্র তৈরির ক্ষেত্রে আরও একটি লক্ষ্য রয়েছে কলকাতা পুরসভার। পানীয় জলের অপচয় নিয়ে চিন্তিত পুরসভা কর্তৃপক্ষ। এই ডিজিটাল মানচিত্রটি তৈরি হয়ে গেলে পানীয় জলের অপচয় রোধের ক্ষেত্রেও একটি নতুন পদ্ধতি কার্যকর করার ভাবনায় রয়েছেন পানীয় জল বিভাগের আধিকারিকেরা। অবশ্য, এখনই সে বিষয় খোলসা করতে নারাজ তাঁরা। ডিজিটাল মানচিত্র তৈরি হয়ে গেলে এই বিষয়ে যাবতীয় পদক্ষেপ করার বিষয়ে মনস্থির করেছেন তাঁরা।