স্যালাইন দিতে হচ্ছে ঘোড়াদের

তীব্র গরমে কাবু কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীর পাঁচটি ঘোড়ার নিয়মিত স্যালাইন চলছে। 

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৯ ০১:৪৩
Share:

চিকিৎসা: তীব্র গরমে কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীর ঘোড়াদের সুস্থ রাখতে দেওয়া হচ্ছে স্যালাইনও। নিজস্ব চিত্র

সকালে জলের সঙ্গে গ্লুকোজ। কাঁচা ছোলার সঙ্গে গুড়-জল। দিনে কমপক্ষে তিন বার স্নান। পেট খারাপ হওয়ার মতো খাবার একেবারেই নয়।

Advertisement

তীব্র গরমে কাবু কলকাতা পুলিশের ঘোড়সওয়ার বাহিনীর পাঁচটি ঘোড়ার নিয়মিত স্যালাইন চলছে।

গরম থেকে ওই ঘোড়াদের বাঁচাতে খাবারের মেনুতে একাধিক পরিবর্তন করা হয়েছে। পশু-চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে দিনরাত পরিচর্যা চলছে তাদের। প্রচণ্ড গরম থেকে রেহাই মেলার সুখবর এখনও দিতে পারেনি হাওয়া অফিস। গত কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রার পারদ চড়ায় হাঁসফাঁস দশা মানুষ থেকে প্রাণী, সকলেরই। তীব্র দাবদাহ থেকে রেহাই মিলতে ইতিমধ্যেই চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের খাবারের মেনু পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। একই ভাবে গরম থেকে বাঁচাতে বাহিনীর ঘোড়াগুলিকেও বিশেষ পর্যবেক্ষণে রেখেছেন কলকাতা মাউন্টেড পুলিশ কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

এস এন ব্যানার্জি রোডে কলকাতা পুরসভার সদর দফতরের বিপরীতে কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের আস্তাবলে এখন ৪৮টি ঘোড়া রয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, গত কয়েক দিনে তীব্র গরমের জেরে পাঁচটি ঘোড়াকে নিয়মিত স্যালাইন দিতে হচ্ছে। কলকাতা মাউন্টেড পুলিশের পশু-চিকিৎসক সুরজিৎ বসু বলেন, ‘‘গত কয়েক দিনে গরম এতটাই বেড়েছে যে, তা রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়। এমনিতেই ঘোড়া খুব বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। গরম থেকে বাঁচতে খাবারের মেনু পরিবর্তন করা হয়েছে। পাঁচটি ঘোড়াকে নিয়মিত স্যালাইন, ওষুধ দিতে হচ্ছে। ঘন ঘন স্নানও করাতে হচ্ছে।’’ কেবল খাবারে পরিবর্তন নয়, গরম ঠেকাতে ঘোড়সওয়ার বাহিনীর প্রশিক্ষণের সময়েও কমানো হয়েছে। মাউন্টেড পুলিশের ইনস্পেক্টর অভ্র চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোজ সকালে আস্তাবল থেকে ঘোড়া নিয়ে ময়দানে প্রশিক্ষণে যাওয়া হয়। গরমের কারণে প্রশিক্ষণের সময়ে ঘোড়ার পিঠে চড়া আপাতত বন্ধ। একই ভাবে প্রচণ্ড গরমের জন্য সকালে তিন ঘণ্টার বদলে দু’ঘণ্টা ডিউটি রাখা হয়েছে।’’

মাউন্টেড পুলিশ সূত্রের খবর, সাধারণত ঘোড়াদের তিসি খাওয়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু প্রোটিনজাতীয় খাবার হওয়ায় আপাতত তিসি বন্ধ রাখা হয়েছে। পরিবর্তে কাঁচা ঘাস বেশি করে দেওয়া হচ্ছে। বেশি করে গ্লুকোজ মেশানো জল খাওয়ানো হচ্ছে। এক পশু-চিকিৎসকের কথায়, ‘‘তিসি খেয়ে পেটের গোলমাল হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গমের ভুসির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।’’ এস এন ব্যানার্জি রোডের পাশে মাউন্টেড পুলিশের আস্তাবলে ঘোড়াগুলির গড় বয়স ১৫-২০ বছর। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় আরও হাঁসফাঁস অবস্থা ঘোড়াদের। আস্তাবলের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য পূর্ত দফতরে জানানো হয়েছে। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, শীঘ্রই ওখানকার বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মেরামতির কাজ শুরু হবে। ঘোড়াগুলির দেখভালের জন্য মাউন্টেড পুলিশের ৫৭ জন সহিস আছেন। তাঁরা জানালেন, গরমে কোনও ঘোড়ার কষ্ট হচ্ছে বুঝলেই মাথায়, ঘাড়ে, পেটে জল ঢালতে হচ্ছে। মাউন্টেড পুলিশের পশু-চিকিৎসক সুরজিৎ বসু বলেন, ‘‘ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, অসুস্থ ঘোড়াদের তাই রোজ ১০-১২ লিটার করে স্যালাইন দিতে হচ্ছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে স্যালাইনে মেশানো হচ্ছে নানা ধরনের ওষুধ, ভিটামিন।’’ আস্তাবলে একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর আছে। সেখানে একসঙ্গে চারটি ঘোড়া থাকতে পারে। অভ্রবাবু বলেন, ‘‘ঘোড়াদের শারীরিক অবস্থা বুঝে আমরা পর্যায়ক্রমে তাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে রেখে চিকিৎসা করছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement