উদ্যাপন: মেট্রোর ৩৮তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত (বাঁ দিক থেকে) অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার এইচ এন জায়সওয়াল, কনসুলেট জেনারেল ম্যানফ্রেড অস্টার, দেবশঙ্কর হালদার, চিফ অপারেশন্স ম্যানেজার সাত্যকি নাথ, রূপঙ্কর বাগচী, সন্দীপ রায় এবং ডেপুটি চিফ অপারেশন্স ম্যানেজার কৌশিক মিত্র। সোমবার, কালীঘাট মেট্রো েস্টশনে। নিজস্ব চিত্র
পায়ে পায়ে ৩৮ বছরে কলকাতা মেট্রো। সোমবার কালীপুজোর দিন কালীঘাট স্টেশনে উদ্যাপিত হল মেট্রোর জন্মদিন। ১৯৮৪ সালের ২৪ অক্টোবর প্রথম মেট্রো ছুটেছিল এসপ্লানেড ও ভবানীপুরের মধ্যে। সেই যাত্রায় কালীঘাট শামিল না হলেও ওই স্টেশনে এ দিনের অনুষ্ঠানে উঠে এল প্রথম দিকের মেট্রো সফরের নানা অভিজ্ঞতার কথা।
কলকাতায় মেট্রো ছুটতে শুরু করার আগে শহর জুড়ে বিস্তর খোঁড়াখুঁড়ির কারণে অন্য অনেকের মতো বিরক্ত ছিলেন সত্যজিৎ রায়ও। যানজটের জেরে প্রায়ই নাকাল হতে হত তাঁকে। সেই বিরক্তির কথা লালমোহনবাবুর সংলাপেও উঠে এসেছিল। মেট্রো রেলকে ‘হেল রেল’ বলেছিলেন জটায়ু।
পরবর্তীকালে পরিষেবা শুরু হওয়ার পরে কর্তৃপক্ষের আমন্ত্রণে মেট্রো সফরে যান সত্যজিৎ। টালিগঞ্জ থেকে প্রথম বার মেট্রোয় চড়ে মুগ্ধই হয়েছিলেন তিনি। এ দিন বাবার সেই অভিজ্ঞতার কথাই শোনালেন সত্যজিৎ-পুত্র সন্দীপ রায়। থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে কী ভাবে মেট্রোয় চড়ে রিহার্সালে যেতেন, এ দিন সে কথা শোনালেন অভিনেতা দেবশঙ্কর হালদার। মঞ্চ এবং বড় পর্দার পরিচিত মুখ হয়েও এখনও চটজলদি শহরের অন্য প্রান্তে পৌঁছতে মেট্রোর উপরেই ভরসা রাখেন তিনি।
চার দশক আগে প্রথম মেট্রো তৈরির জন্য বাজেট বরাদ্দ ছিল ১৪০ কোটি টাকা। সেখান থেকে হালের মেট্রো নির্মাণের খরচ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে, সে কথাও এ দিন শোনালেন মেট্রোর অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার এইচ এন জায়সওয়াল। তিনি জানালেন, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো তৈরিতে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছরেই দু’টি নতুন মেট্রোপথ চালু হতে পারে বলে জানান তিনি। জোকা থেকে তারাতলা এবং কবি সুভাষ থেকে রুবি পর্যন্ত মেট্রো পরিষেবা চলতি বছরের শেষে শুরু হতে পারে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জার্মানির কনসুলেট জেনারেল ম্যানফ্রড অস্টার। বার্লিন শহরের মেট্রো এ বার ১২০ বছরে পা দিয়েছে। দৈনিক গণ পরিবহণে জার্মানিতে মেট্রোর ভূমিকার কথা বলতে গিয়ে কলকাতা মেট্রোর কথাও উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। জার্মানির নোবেলজয়ী সাহিত্যিক গুন্টার গ্রাস এক সময়ে এই শহরে কয়েক মাস কাটিয়েছিলেন। সেই অভিজ্ঞতার কথা উঠে এসেছে তাঁর লেখাতেও। কালীপুজোর দিনে কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের অনুষ্ঠান এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছে সেই সংযোগের কথাও।
এ দিনের অনুষ্ঠানে সস্ত্রীক হাজির ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী রূপঙ্কর বাগচী। তাঁর কন্যা এ দিন অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন। মেট্রো কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে আমন্ত্রিতদের হাতে বিশেষ স্মারক তুলে দেওয়া হয়। প্রতিদিনের সফরে মেট্রোর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা কলকাতাবাসীর মনের কাছে পৌঁছতে গত কয়েক মাসে একাধিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন কর্তৃপক্ষ। বই প্রকাশ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সবই হয়েছে মেট্রো স্টেশন চত্বরে। এ দিন জন্মদিন পালনের অনুষ্ঠানে সেই ভাবনাকেই এগিয়ে নিয়ে যেতে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।