কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। — ফাইল চিত্র।
কলকাতায় একের পর এক ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়েছে বলে নজরে এসেছে স্থানীয়দের। তাঁদের একাংশ আঙুল তুলেছেন কলকাতা পুরসভার দিকে। যদিও কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এই সমালোচনার মুখেও অনড়। শুক্রবার আবার তিনি দাবি করলেন, কলকাতায় বহু বছর ধরেই বাড়ি হেলে পড়েছে। এর আগে যত জন মেয়র ছিলেন শহরে, সকলের আমলেই ‘বেআইনি, হেলে থাকা’ বাড়ি ছিল। পূর্বতন মেয়রদের আমলে বাড়ি ভেঙে পড়ে কত জন মারা গিয়েছেন, সেই খতিয়ানও তুলে ধরেছেন ফিরহাদ।
শুক্রবার কলকাতা পুরসভায় সাংবাদিক বৈঠকে ফিরহাদ বলেন, ‘‘কলকাতায় বাড়ি হেলে পড়েছে বহু বছর। তাতে আমরাও হেলে পড়েছি।’’ যে সব জায়গায় ফ্ল্যাটবাড়ি হেলে পড়েছে, সেখানে স্থানীয়দের অভিযোগ, পুরসভা টাকা নিয়ে অনুমতি দিয়েছে। এই প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘‘আগে বেআইনি বাড়ি হয়েছে। হয়তো টাকাও খেয়েছে। কিন্তু এখন নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে। অনিয়ম ঘটলে দোষীদের চাকরি চলে যাবে।’’
এর পরেই তিনি আঙুল তুলেছেন পূর্বতন মেয়রদের দিকেও। তাঁর কথায়, ‘‘সব মেয়রের সময় বাড়ি বেআইনি ও হেলে বাড়ি ছিল। এটা পরম্পরাগত ভাবে চলছে।’’ কলকাতায় পূর্বতন মেয়রদের আমলে বাড়ি ভেঙে পড়ার ঘটনায় নিহতের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কমল বসু মেয়র থাকার সময় বাড়ি ভেঙে ২৫ জন মারা গিয়েছিলেন। প্রশান্ত শূর মেয়র থাকাকালীন ১৬ জন মারা গিয়েছেন। তার পরেও বাড়ি ভেঙেছে, কেউ মারা যায়নি।’’ এর পরেই ফিরহাদ আবার দাবি করেন যে, ৯০-এর দশক থেকেই কলকাতায় বেআইনি নির্মাণ চলছে। তাঁর কথায়, ‘‘এখন হচ্ছে, এমনটা নয়।’’
মেয়র দায় চাপিয়েছেন ক্রেতাদের উপরেও। তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে বলব, রেরা (রিয়্যাল এস্টেট রেগুলেশন ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট) মেনে অনুমতি, বিল্ডিং প্ল্যানিং রয়েছে কি না, সেটা দেখে কিনুন। চুরির মাল যিনি কিনবেন, তার দায়িত্ব তাঁকেই নিতে হবে। যদি প্ল্যান না পান, আমার সঙ্গে দেখা করে জানাবেন। কষ্টের টাকা নষ্ট হলে আমাদেরও কষ্ট হয়।’’ এর পরেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, বিল্ডিং পুরসভা দেখে না। তাঁর কথায়, ‘‘বিল্ডিং আমরা দেখি না। এলবিএস বা ইঞ্জিনিয়ার যে রিপোর্ট দেয়, তার ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।’’
গত বছর গার্ডেনরিচে বাড়ি ভেঙে পড়ে মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। সেই ঘটনার পরে কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা-ও জানিয়েছেন মেয়র। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতায় জিয়ো ট্যাগিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলকাতায় কোথায় বাড়ি রয়েছে, কোথায় পুকুর রয়েছে, তা জানা যাবে। সমস্ত জলাশয় এখন তালিকাভুক্ত হয়ে গিয়েছে। তবে তিনি এ-ও জানিয়েছেন, বাসিন্দাদের পথে বসাতে পারবেন না। তাঁর কথায়, ‘‘মানুষগুলিকে কি রাস্তায় নামিয়ে বাড়ি ভেঙে দেব! সেটা পারব না।’’
এর আগে কলকাতায় পর পর বাড়ি হেলে পড়া নিয়ে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পুরসভা কি বাঁশ নিয়ে দাঁড়িয়ে হেলা বাড়ি সোজা করবে?’’ একই সঙ্গে তিনি জানান, আইন অনুযায়ী কাজ করতে হয় পুরসভাকে। আর সেই আইন মেনেই কাজ করতে হবে পুরসভাকে।