অন্য রকম সাজগোজে টেক্কা মহানগরীর

ভিড়ে ঠাসা মেট্রো। গেটের কাছে বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এক মাঝবয়সি। তাঁর ডান হাতের আংটির দিকেই সকলের চোখ চলে যাচ্ছে বারবার। সেন্ট্রাল স্টেশন পেরোতেই এক মহিলা প্রশ্ন করলেন, ‘‘আংটিটা কোথা থেকে কেনা?’’ ভদ্রলোকের জবাব, বস দিয়েছেন। পুজো উপলক্ষে একটু আগেভাগেই অফিসের সকলে উপহার হিসেবে পেয়েছেন এটা। ময়দানে নেমে যাওয়ার আগে মহিলা বললেন, 

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৫২
Share:

নজরকাড়া: ফ্যাশনের দৌড়ে ঘড়ি উঠেছে আঙুলে, পায়েও। নিজস্ব চিত্র

আকাশছোঁয়া বহুতলের সংখ্যা বাড়ছে শহরে। হাতের নাগালে সহজ থেকে সহজতর হয়ে উঠছে বিলাসের নানা উপকরণ। ঝাঁ-চকচকে রাস্তায় ঝকঝকে পোশাকের ছেলেমেয়ের ভিড়। নামী দেশি, আন্তর্জাতিক রেস্তরাঁর চেন খুলছে একের পর এক। বদলাচ্ছে কলকাতা। আর এই বদলের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে ক্রমশ বদলে যাচ্ছে সাজগোজও। একটা সময় পর্যন্ত সিনেমার পত্রিকা পড়েই ফ্যাশন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতেন শহরবাসী। চুলের ছাঁট, কুর্তার নকশায় থাকত ফিল্মি ছোঁয়া। কিন্তু সে জন্য খরচ হত ভালই। ফলে অনেকেরই নাগালের বাইরে থেকে যেত সে সব। এখন এ শহরে ‘সস্তায় পুষ্টিকর’ ফ্যাশনের হদিস মিলে যায় ফুটপাতে, এমনকি অনলাইনও।

Advertisement

ভিড়ে ঠাসা মেট্রো। গেটের কাছে বাঁ দিক ঘেঁষে দাঁড়িয়ে এক মাঝবয়সি। তাঁর ডান হাতের আংটির দিকেই সকলের চোখ চলে যাচ্ছে বারবার। সেন্ট্রাল স্টেশন পেরোতেই এক মহিলা প্রশ্ন করলেন, ‘‘আংটিটা কোথা থেকে কেনা?’’ ভদ্রলোকের জবাব, বস দিয়েছেন। পুজো উপলক্ষে একটু আগেভাগেই অফিসের সকলে উপহার হিসেবে পেয়েছেন এটা। ময়দানে নেমে যাওয়ার আগে মহিলা বললেন,

‘‘ঘড়ি পরার আর দরকার নেই। আংটিতেই ঘড়ি! আপনার মতো একটা কিনব ভাবছি।’’

Advertisement

কালীঘাট স্টেশনে নামার আগে আংটি-ঘড়ির মালিক জানালেন, তাঁর নাম বাবলু বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ি দমদমে। সর্বক্ষণ হাতে থাকে ওই আংটি-ঘড়ি। খাওয়া আর স্নান করার সময় শুধু খুলে রাখতে হয়। যেখানেই যান, এই আংটি ঘিরে চরম কৌতূহল থাকে লোকজনের। সকলেই জানতে চান, আংটিটা কোথা থেকে কেনা হয়েছে, কত দাম নিয়েছে— ইত্যাদি। বললেন, ‘‘উত্তর দিতে ভালই লাগে। বস কোনও অনলাইন শপিং সাইট থেকে আমাদের জন্য কিনেছিলেন। ওটা পাওয়ার পরে বাড়ি নিয়ে গিয়ে বড় জ্বালা হয়েছিল। মেয়ের ঘরের নাতি কিছুতেই দেবে না। বস রোজ এটা পরে অফিস যেতে বলেছেন বলে নিয়ে নিয়েছিলাম।’’

ফ্যাশন বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এখন অনেকেই নতুন ভাবে সাজতে চাইছেন। সাজে ব্যবহার হচ্ছে কাজের জিনিসও। নামী শপিং মলে তো বটেই, রাস্তার ধারে, অনলাইন সাইটগুলিতেও বিক্রি হচ্ছে এই অভিনব সাজের উপকরণ। ফ্যাশন ব্লগের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা জানাচ্ছেন, গলার হার মাথার চারদিকে পেঁচিয়ে ‘টিয়ারা’ হিসাবে ব্যবহার করছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার কানের দুলকে চেনের সঙ্গে লাগিয়ে ‘টিকলি’ হিসেবে মাথায় পরছেন। পুরনো দিনের লম্বা হার কটিবন্ধ হিসেবেও ব্যবহার হচ্ছে শাড়ির সঙ্গে। সম্প্রতি এই অভিনব সাজে সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘ট্রেন্ডিং’ হয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহালিও। চেনের সঙ্গে বিয়ের আংটি গলায় পরতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। ম্যাচ জিতিয়ে বা শতরানের পরে ওই আংটিতে চুম্বনরত কোহালির ছবি ভাইরালও হয়েছে।

‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন টেকনোলজি’-এর (এনআইএফটি) ফ্যাশন কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শ্রীনন্দা পালিত জানাচ্ছেন, তাঁর এক ছাত্রী পুরনো ঘড়ির ডায়াল দিয়ে পায়ের অ্যাঙ্কলেট বানিয়েছেন। নূপুরের সঙ্গে পায়ে ঘড়ি-অ্যাঙ্কলেট পরে দিব্যি ঘুরছেন তিনি। শ্রীনন্দা বললেন, ‘‘সকলেই চান একটু অন্য রকম কিছু করতে। এই ধরনের নতুন সাজও সেই কারণেই। আর আমার ছাত্রীর কাজ দেখে মনে হয়েছে, আসলে নিজের ট্র্যাডিশনকে নিজের মতো করে বাঁচিয়ে রাখার একটা চেষ্টা করেছে ও।’’

তবে ফ্যাশন ডিজাইনার অগ্নিমিত্রা পলের মত, ট্র্যাডিশনের থেকে নতুন কিছু করতেই এই অভিনব সাজ। বলছেন, ‘‘এখন সকলেই কমবেশি ফ্যাশন সম্পর্কে সচেতন। সকলেরই নতুন কিছু চাই। আর নিজের একটা স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করতে চান প্রত্যেকে। আসলে অভিনব সাজে কোথাও গিয়ে শুনতে ভাল লাগে, দারুণ ভাবনা, কী করে এ রকমটা মাথায় এল!’’

এক ফ্যাশন ব্লগারের বক্তব্য, নতুন সাজ তো রয়েছেই। অনেক সময়ে জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতেও এই ভাবনাগুলো কাজে লাগে। বললেন, ‘‘বন্ধুর বিয়েতে গিয়ে টিকলির অভাব মেটাতে কানের দুল ব্যবহার করেছিলাম। উল্টে ভাবনার প্রশংসা পেয়েছিলাম প্রচুর।’’

এ ভাবেই সাজগোজে ক্রমেই আরও ‘এক্সপেরিমেন্ট’-এর ঝুঁকি নিচ্ছে কলকাতা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement