পরীক্ষা বন্ধ রাখার সেই নোটিস
কোথাও যন্ত্র আছে, কিন্তু তা চালানোর জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী নেই। কোথাও যন্ত্রের রেজিস্ট্রেশনই হয়নি। কোথাও আবার যন্ত্রের মান বজায় থাকছে কি না, তা দেখাই হয় না বছরের পর বছর। অথচ এ সব যন্ত্র থেকে জোরালো রশ্মি নির্গত হয়। মঙ্গলবার কলকাতার দুই সরকারি হাসপাতালে আচমকা হানা দিয়ে এমনই অনিয়মের হদিস পেলেন অ্যাটমিক এনার্জি রেগুলেটরি বোর্ডের (এইআরবি) পরিদর্শকেরা। এক হাসপাতালের একটি বিভাগ বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি দুই হাসপাতালের কিছু বিভাগকে সতর্ক করেছেন তাঁরা।
এ দিন সকালে মুম্বই থেকে এইআরবি-র তিন সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল কলকাতায় আসে। এর আগে ভারতের বিভিন্ন বড় শহরে হাসপাতাল পরিদর্শনে গেলেও এ শহরে এই প্রথম এলেন তাঁরা। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পরিদর্শনের পরে এ দিন এনআরএসের ম্যামোগ্রাফি বিভাগ বন্ধ করে দেন তাঁরা। মেডিক্যাল কলেজের ম্যামোগ্রাফি ইউনিটের পাশাপাশি দুই হাসপাতালেরই এক্স রে-সহ কয়েকটি ইউনিটকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাঁরা। তা মেনে আগামী এক মাসে নিজেদের না শোধরালে ওই ইউনিটগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে এইআরবি সূত্রের খবর।
এইআরবি সূত্রে খবর, এনআরএসের ম্যামোগ্রাফি বিভাগে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। সে কারণেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে, একটি ক্যাথ ল্যাব অর্থাৎ অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টির কেন্দ্র এবং দু’টি এক্স-রে যন্ত্র নিয়ম মেনে চালানো হচ্ছে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে পরিদর্শক দল। দলের অন্যতম সদস্য মানসকুমার পাঠক বলেন, ‘‘কোনও যন্ত্র শুধু বসিয়ে দিলেই হয় না। তার জন্য নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মানতে হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে রেডিওলজিক্যাল সেফ্টি অফিসার, টেকনিশিয়ান এবং রেডিওলজিস্ট থাকা বাধ্যতামূলক। শুধু তা-ই নয়। যেখানে যন্ত্রটি বসানো রয়েছে, সেই জায়গাটি কতটা যথাযথ তা-ও দেখা জরুরি। ম্যামোগ্রাফি যন্ত্রটির ক্ষেত্রে অনেক অনিয়ম ছিল। তাই তা পুরোপুরি বন্ধ করতে হয়েছে। বাকিগুলিকে সতর্ক করা হল।’’
পরিদর্শক দলের পরের গন্তব্য ছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সেখানে একটি ম্যামোগ্রাফি ইউনিট, একটি ক্যাথ ল্যাব ইউনিট, তিনটি এক্স-রে ইউনিটের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে এইআরবি। মানসবাবু বলেন, ‘‘যন্ত্রের রেজিস্ট্রেশন বা রক্ষণাবেক্ষণের পাশাপাশি যাঁরা ওই বিভাগের কর্মীদের সুরক্ষাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। দুই হাসপাতালে আমরা সেটাও পাইনি।’’ তবে পিপিপি মডেলে যে কেন্দ্রগুলি চলে, সেখানে যন্ত্রের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হচ্ছে বলে জানান পরিদর্শকেরা।
এইআরবি সূত্রের খবর, সংস্থার ২০০৪ সালের নতুন বিধি অনুযায়ী রেডিওলজি-র বিভিন্ন ইউনিটে এই নিয়মগুলি মানা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এ নিয়ে গোটা দেশে বহু জায়গাতেই সচেতনতা নেই। এমনকী রেডিয়েশন অ্যাপ্লিকেশনের ক্ষেত্রে ই-রেজিস্ট্রেশনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সে কারণেই আচমকা পরিদর্শন।
কেন নিয়ম মানা হয়নি? এনআরএস বা কলকাতা মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ জানান, একেবারেই নিয়ম মানা হয়নি সে কথা ঠিক নয়। আচমকা পরিদর্শন হওয়ায় অনেক কাগজপত্রই তাড়াহুড়োয় পাওয়া যায়নি। সব কিছু গুছিয়ে তাঁরা এইআরবি-র সঙ্গে ফের যোগাযোগ করবেন বলে জানান দুই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া যেটুকু ঘাটতি আছে, সেগুলিও দ্রুত মিটিয়ে ফেলা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা।