কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। — নিজস্ব চিত্র।
কার শরীরে কতটা ভয়ানক আকার ধারণ করবে ডেঙ্গি? এই রোগে আক্রান্ত হলেও কোন রোগী বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠবেন? কোন রোগীকে ভর্তি করাতে হবে হাসপাতালে? কোন রোগীর শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হবে ডেঙ্গিতে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এত দিন শূন্যে হাতড়াতে হত চিকিৎসকদের। কারণ কোনও প্রশ্নের উত্তরই ছিল না চিকিৎসা বিজ্ঞানে। ডেঙ্গির এই অনিশ্চয়তা এ বার দূর করলেন কলকাতার চিকিৎসক। আইআইটি বম্বের গবেষকদলের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করে তিনি এমন এক পন্থা আবিষ্কার করেছেন, যা ডেঙ্গির চিকিৎসায় যুগান্তর ঘটাতে পারে। কমিয়ে দিতে পারে মৃত্যুর হারও।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। আইআইটি বম্বের গবেষকদের সঙ্গে ডেঙ্গি সংক্রান্ত গবেষণায় হাত মিলিয়েছিলেন তিনিও। তাঁরা যে পন্থা আবিষ্কার করেছেন, তাতে দফায় দফায় রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গি কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, তা জানা সম্ভব। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কোন রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হতে চলেছে, তা নির্ণয় করা যাবে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে।
বছর দশেক আগে বাংলায় যখন ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত প্রথম শুরু হয়েছিল, সেই সময় থেকে তা নিয়ে শুরু হয়েছিল গবেষণাও। অরুণাংশু বলেন, ‘‘১০ বছর আগে আমরা এই কাজ শুরু করেছিলাম। এত দিনে সফল হয়েছি। এ বার থেকে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই বোঝা যাবে ডেঙ্গি ভাইরাস রোগীর শরীরে কতটা ভয়ানক হয়ে উঠতে চলেছে। রক্তে সাত-আটটি প্রোটিনের পরিমাণ দেখে এটি বোঝা সম্ভব। আমরা চাই সাধারণ মানুষ এই আবিষ্কারের সুফল পান।’’
ডেঙ্গি সংক্রান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে মুম্বইয়ের গবেষণাগারে। গবেষণা সংক্রান্ত সব উপকরণ নিয়ে যাওয়া হয়েছে কলকাতার হাসপাতাল থেকে। গবেষণার ভাবনা এবং বিশ্লেষণও কলকাতার চিকিৎসকদের। দুই প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে এই সাফল্য। সাফল্যের স্বীকৃতি পেয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে আবিষ্কারকেরা আবেদন জানিয়েছিলেন ২০১৭ সালে। চলতি মাসের ১৮ তারিখ তাঁরা স্বীকৃতিপত্র হাতে পেয়েছেন।
চলতি মরসুমে ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল ডেঙ্গি। বর্ষায় মশাবাহিত এই রোগটিতে বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন। কলকাতা থেকে শুরু করে জেলা— হাসপাতালে ডেঙ্গি রোগীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ডেঙ্গি অনেকের প্রাণও কেড়েছে। ছোট-বড় সব বয়সের মানুষই ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যুও হয়েছে সব বয়সেই। এ বারের ডেঙ্গিতে একটি বিষয়ে চিকিৎসকেরা প্রায় সকলেই একমত হয়েছিলেন। কখন কোন রোগীর শরীরে ডেঙ্গি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে, তা আগে থেকে আন্দাজ করা যাচ্ছিল না। সাধারণ জ্বর থেকেই আচমকা মৃত্যুর মতো পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছিল বার বার। ফলে যে সময়ে রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছিল। চেষ্টা করেও তখন আর রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হচ্ছিল না। নতুন আবিষ্কারে সেই সমস্যা মিটতে চলেছে, আশাবাদী চিকিৎসকেরা।