ফাইল চিত্র।
ইএম বাইপাসকে আরও স্বাস্থ্যকর করে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। এই সড়কের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছে তারা। সংস্থার দাবি, বাইপাসের ‘কন্ডিশন অ্যাসেসমেন্ট’ অর্থাৎ এই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি কী অবস্থায় রয়েছে, তা খতিয়ে দেখে মেরামত করা হলে এই সড়ক আরও বেশি দিন সচল থাকবে। বাড়বে স্থায়িত্বও। স্বাস্থ্য পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের দাবি, ‘অ্যাসেসমেন্ট’ অনুযায়ী কাজ করতে পারলে আগামী ১০ বছর ইএম বাইপাস নিয়ে কোনও চিন্তা করতে হবে না।
গত শতকের আশির দশকের গোড়ায় উল্টোডাঙা থেকে ইএম বাইপাসের নির্মাণ শুরু হয়। তার পর থেকে ধাপে ধাপে ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের বাইপাস তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে এই রাস্তার বিভিন্ন অংশ সারাই করা হয়েছে। কিন্তু পুরো রাস্তাটির অবস্থা জানতে কখনও সবিস্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি বলেই দাবি। কেএমডিএ-র আধিকারিকদের একাংশের মতে, যে কোনও বড় রাস্তারই নির্দিষ্ট সময় অন্তর রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। যখন কোনও রাস্তা তৈরির নকশা করা হয়, তখন খেয়াল রাখা হয় ওই রাস্তায় কত যানবাহন চলবে, আগামী দিনে কত যানবাহন বাড়তে পারে। রাস্তা তৈরির পরে একটা রুটিন রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পাঁচ বছর অন্তর এই রক্ষণাবেক্ষণকে ‘পিরিয়ডিক্যাল মেন্টেন্যান্স’ বলে। সেই কাজের সময়ে রাস্তার উপরের স্তর, অর্থাৎ যে অংশ দিয়ে গাড়ি চলাচল করে, সেটি সম্পূর্ণ তুলে ফেলা হয়। তবে ভিতরের স্তরগুলি পাল্টানোর প্রয়োজন পড়ে না।
বাইপাসের অবস্থা খতিয়ে দেখতে মুম্বইয়ের একটি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তারা এই রাস্তার গঠন, কতটা মেরামত করা দরকার — তার উপরে একটি সমীক্ষা করেছে। প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা দেখেছেন, স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বাইপাসকে তিনটি অংশে ভাগ করতে হবে। প্রথম ভাগ, উল্টোডাঙা থেকে মেট্রোপলিটন মোড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার। দ্বিতীয় অংশ, পাঁচ কিলোমিটার মেট্রোপলিটন মোড় থেকে রুবি মোড়। এবং শেষ পাঁচ কিলোমিটার রুবি মোড় থেকে ঢালাই ব্রিজ। সমীক্ষায় উঠে এসেছে, প্রথম পাঁচ কিলোমিটার রাস্তায় তেমন কোনও পরিবর্তনের দরকার নেই। ওই অংশের উপরের স্তরে আর একটি বিটুমিনাসের স্তর দিলে আগামী ১০ বছর ভাল ভাবে চলে যাবে। এই অংশটি ভিআইপি করিডরের মধ্যে পড়ছে বলে কাজ করতেও সুবিধা হবে। বাইপাসের প্রথম পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে দু’টি মেট্রো স্টেশন তৈরি হয়েছে। তা সত্ত্বেও ওই অংশে তেমন বড় ধরনের কোনও ক্ষতি হয়নি।
কেএমডিএ সূত্রের খবর, মেট্রোপলিটন মোড় ছাড়িয়ে ‘মা’ উড়ালপুল থেকে উল্টোডাঙার দিকে নামার পরের অংশে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেখানে জল জমে। পাশাপাশি, উড়ালপুল থেকে নামার পরেই রাস্তাটি ঢেউ খেলানো। সেই অংশ সমান করতে হবে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্বের রাস্তার অবস্থা মোটের উপরে একই রকম। কেএমডিএ-র এক আধিকারিক জানিয়েছেন, মেট্রোপলিটন মোড় থেকে ঢালাই ব্রিজের মধ্যে বেশ কয়েকটি মেট্রো স্টেশন তৈরি হয়েছে। যার ফলেরাস্তার প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। তাই ওই অংশে বড় মাপের মেরামতির কথা ভাবা হচ্ছে।
সংস্থার আধিকারিকদের একাংশের যুক্তি, কামালগাজি উড়ালপুল থেকে নেমে বারুইপুর-পদ্মপুকুর পর্যন্ত বাইপাস (যাকে বলা হচ্ছে সাদার্ন বাইপাস) এলাকা যে ভাবে উন্নত হতে শুরু করেছে, তাতে রুবি থেকে ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত যানবাহনের সংখ্যা আগামী পাঁচ বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে। ফলে আগেভাগে রাস্তার অবস্থা আরও ভাল করা প্রয়োজন। তাই মেট্রোপলিটন মোড় থেকে ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত বাইপাস পুনর্নির্মাণ জরুরি। অর্থাৎ, পুরো বাইপাস খুঁড়ে নতুন করে রাস্তা তৈরি হবে।
কেএমডিএ-র আধিকারিকেরা মনে করছেন, বাইপাসের উপরে মেট্রোর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। আর রাস্তা খুঁড়ে কোনও কাজ হবে না। তাই দেরি না করে সমীক্ষা অনুযায়ী কাজে নেমে পড়তে চান তাঁরা। সূত্রের খবর, আগামী মাসের মধ্যেই এই ব্যাপারে সবিস্তার প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) জমা পড়ে যাবে।