প্রতীকী ছবি।
পরিস্রুত পানীয় জল অপচয় বন্ধের ক্ষেত্রে দু’কূল রক্ষার নীতি গ্রহণ করতে চাইছে কলকাতা পুরসভা। জলকর না বসিয়েও শহরে জলের অপচয় বন্ধের জন্য রূপরেখা তৈরির কাজ চলছে। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, জলের মিটার বসিয়ে (কাশীপুর-বেলগাছিয়া এলাকায় যেমন বসানো হয়েছে) দেখা হবে, একটি পরিবারে দৈনিক কত জল লাগে। সেই মতো সংশ্লিষ্ট বাড়িতে তত পরিমাণ জলই সরবরাহ করা হবে।
কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বক্তব্য, ধরা যাক, পাঁচ জন সদস্যের কোনও পরিবারে দৈনিক ১০০০ লিটার পরিস্রুত জল লাগে। পুরসভা ঠিক সেই পরিমাণ জলই দৈনন্দিন ভিত্তিতে সরবরাহ করবে।
কেন পাঁচ সদস্যের পরিবারে দৈনিক ১০০০ লিটার ধরা হচ্ছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়েছে পুর প্রশাসন। তা হল, কেন্দ্রীয় পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের শহরাঞ্চলে মাথাপিছু দৈনিক ১৩৫ লিটার পরিশোধিত জল পর্যাপ্ত হিসাবে ধরা হয়। সেখানে ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর তথ্য বলছে, কলকাতার নাগরিক মাথাপিছু দৈনিক ২০২ লিটার জল পান! ফলে এর পরেও জল খরচ আক্ষরিক অর্থেই স্বেচ্ছাচারের নামান্তর। ফিরহাদের কথায়, ‘‘পুরসভা যা জল দেয়, তা দেশের মধ্যে সর্বাধিক। অথচ, প্রয়োজনের বেশি জলই মানুষ অপচয় করছেন। তাই প্রয়োজনের জন্য পর্যাপ্ত জল পাবেন প্রত্যেকে, অপচয়ের জন্য নয়।’’
আজ, মঙ্গলবার ‘বিশ্ব জল দিবস’-এর পরিপ্রেক্ষিতে মেয়রের এই কথাকে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল। এক পরিবেশবিজ্ঞানীর কথায়, ‘‘অপচয়ের জল না পেলে মানুষ তা অপচয় করবেন কী ভাবে? ফলে নাগরিকদের প্রয়োজনও মিটল, আবার রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলকেও জলকর না বসানোর নীতির বাইরে যেতে হল না।’’
এমনিতে ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার বোর্ড’-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে কলকাতা পুরসভার গভীর নলকূপের সংখ্যা ছিল ২৩২ এবং হাতপাম্প-যুক্ত অগভীর নলকূপ ছিল ৫০০০। উভয় নলকূপের মাধ্যমে মাটির নীচ থেকে তোলা জলের পরিমাণ ছিল দৈনিক ১২১.৫ মিলিয়ন লিটার। ২০০৬ সালে সেই সংখ্যা কমলেও শহর থেকে এখনও পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়নি নলকূপ। যদিও ফিরহাদের বক্তব্য, ‘‘আগামী তিন বছরের মধ্যে কলকাতাকে নলকূপ-শূন্য করতে চাইছি।’’
মেয়রের এই বক্তব্যও, বিশেষ করে ‘বিশ্ব জল দিবস’-এর এ বারের ভাবনা ‘গ্রাউন্ডওয়াটার— মেকিং দ্য ইনভিজ়িবল ভিজ়িবল’-এর আলোকে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন অনেকে। যেখানে বলা হচ্ছে, ভূগর্ভস্থ জল দৃশ্যমান নয়, তবে তার প্রভাব সর্বত্রগামী। বলা হচ্ছে,—‘ভূগর্ভস্থ জল সেই সম্পদ যা আমাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করে চলেছে প্রতিনিয়ত।’
সেই সম্পদেরই অপচয় বন্ধের দাবিতে সরব, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ওয়াটার রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর অধিকর্তা পঙ্কজকুমার রায় বলছেন, ‘‘প্রয়োজনের জল বিনামূল্যে দেওয়া হোক। কিন্তু বাড়তি জল, যা নষ্ট করা হয়, তার জন্য মোটা টাকা ধার্য করা হোক।’’
যদিও জলকর না বসানোর বিষয়টি সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর কথায়, ‘‘নাগরিকদের একাংশ জল অপচয় করেন ঠিকই। তবে তার জন্য কর বসানো হলে সবার পক্ষে সেই খরচ বহন করা সম্ভব নয়। তাই বিকল্প পদ্ধতি ভাবা হয়েছে।’’
সেই বিকল্প পদ্ধতি জলের মতো মহার্ঘ সম্পদকে রক্ষা করুক, ‘বিশ্ব জল দিবস’-এর প্রত্যাশা এটাই।