এই ভর্ৎসনার পরে আগামী ১৭ নভেম্বরের মধ্যে পুরসভাকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত। ফাইল ছবি
শহরে গঙ্গাতীরের উন্নয়নে ‘টালবাহানা’ করায় জাতীয় পরিবেশ আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়ল কলকাতা পুরসভা। এমনিতেই গঙ্গার ক্রমবর্ধমান দূষণ চিন্তায় রেখেছে পরিবেশবিদ মহলকে। সেখানে গঙ্গাতীরের উন্নয়ন নিয়ে আদালতের এই ভর্ৎসনা আলাদা মাত্রা যোগ করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, পুরো বিষয়টিতেই প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তা ফের প্রকাশ্যে এসেছে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা।
শহরে গঙ্গার ঘাটগুলির দুরবস্থা সংক্রান্ত একটি মামলায় নদীতীরের উন্নয়নে পরিকল্পনা এবং নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকায় জীববৈচিত্রের পার্ক (বায়োডাইভার্সিটি পার্ক) তৈরির জন্য কলকাতা পুরসভাকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। গত অগস্টে দেওয়া ওই নির্দেশে আদালত বলেছিল, ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। এ ব্যাপারে পুরসভার পাশাপাশি রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকেও দায়িত্ব দিয়েছিল আদালত।
কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে সেই রিপোর্ট জমা না পড়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে কোর্ট। প্রসঙ্গত, গত ২৭ সেপ্টেম্বর পুরসভা আদালতে একটি হলফনামা জমা দিয়ে জানায়, গঙ্গার তীরবর্তী এলাকার উন্নয়ন এবং জীববৈচিত্র পার্ক তৈরির জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির দক্ষতা তাদের নেই। সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে আদালত মন্তব্য করে, এই যুক্তির কোনও ব্যাখ্যা হতে পারে না। কারণ, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির জন্য পুরসভাকে কোনও বিশেষজ্ঞ বা বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগ করতে হত। ফলে পুরসভার এই ব্যাপারে দক্ষতা নেই, এ কথা অবান্তর। এই ভর্ৎসনার পরে আগামী ১৭ নভেম্বরের মধ্যে পুরসভাকে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।
প্রসঙ্গত, সংশ্লিষ্ট মামলায় কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আগে জানিয়েছিল, শহুরে এলাকায় নদীতীরের উন্নয়ন ও সেই সংক্রান্ত পরিকল্পনার জন্য ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’ (এনএমসিজি) একটি নিয়মবিধি জারি করেছে। পুর প্রশাসন, প্রকল্প রূপায়ণকারী সংস্থা-সহ নদীতীরের উন্নয়ন প্রকল্প রূপায়ণের সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষের জন্যই এই নিয়মবিধির প্রস্তাবনা। এনএমসিজি-র তরফে জানানো হয়, গঙ্গা-সহ দেশের যে কোনও নদীতীরের উন্নয়ন এবং সে সংক্রান্ত পরিকল্পনা ‘নমামি গঙ্গে’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত।
কেন্দ্রীয় দুই সংস্থার এই বক্তব্যের পরেই গত অগস্টে পরিবেশ আদালত এনএমসিজি-র নির্ধারিত নিয়ম মেনে নদীতীরের উন্নয়নের পরিকল্পনা সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রস্তুতের নির্দেশ দেয় কলকাতা পুরসভাকে। সঙ্গে এ-ও জানায়, রিপোর্ট তৈরি করে আদালতে জমা দেওয়ার পাশাপাশি সেই প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ সাহায্যের জন্য তা যেন এনএমসিজি-কেও পাঠানো হয়। কিন্তু এখনও সেই রিপোর্ট জমাই পড়েনি। যদিও কলকাতা পুরসভার এক পদস্থ কর্তার বক্তব্য, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’