ফাইল চিত্র।
এমনিতেই ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা কলকাতা পুরসভার। তার উপরে গত আড়াই বছর ধরে একটি বিভাগ থেকে পুর পরিষেবা বাবদ কোনও ফি-ই সংগ্রহ করা হয়নি!
অতিমারিতে পুরসভার বিভিন্ন বিভাগের কর সংগ্রহ অনেক কমেছে। অবস্থা এমন যে প্রতি মাসে কর্মীদের কী ভাবে বেতন দেওয়া হবে, তা নিয়েই চিন্তায় থাকেন পুর অর্থ দফতরের কর্তারা। সেখানে পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগ ৫০০ বর্গফুটের বেশি আয়তনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের থেকে ময়লা সাফাইয়ের ফি আদায় বন্ধ রেখেছে! এমনটা চলছে গত দু’বছরের বেশি সময় ধরে।
শহরে পাঁচশো বর্গফুটের বেশি আয়তনের রেস্তঁরা, হোটেল, মিষ্টির দোকান-সহ সমস্ত বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হবে কয়েক লক্ষ। ময়লা সাফাইয়ের জন্য গত দু’বছরে তাদের থেকে পুরসভার বকেয়া ফি কয়েক কোটি টাকা বলে জানাচ্ছেন পুরকর্তারা। পুর কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, অতীতে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সামনে জড়ো হওয়া ময়লা সাফাই বাবদ ফি নিত লাইসেন্স বিভাগ। লাইসেন্স ফি-র সঙ্গেই দফতর সাফাইয়ের টাকাও নিত ওই বিভাগ। কয়েক বছর আগে তৎকালীন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের আমলে সিদ্ধান্ত হয়, ৫০০ বর্গফুটের কম জায়গার বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে আগের মতোই সাফাই ফি আদায় করবে লাইসেন্স বিভাগ। কিন্তু প্রতিষ্ঠান পাঁচশো বর্গফুটের বেশি হলে সেই দায়িত্ব বর্তাবে জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের উপরে।
এই নিয়ম জারি হওয়ার পরে দেখা গিয়েছিল, পাঁচশো বর্গফুটের বেশি আয়তনের প্রতিষ্ঠানকে অনেক বেশি টাকা জমা দিতে হচ্ছিল। তাই প্রতিবাদ জানিয়ে নিয়ম বদলাতে তদানীন্তন মেয়রের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা। নিউ মার্কেটের ‘ফ্রি স্কুল ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি মনোতোষ সাহা বলেন, ‘‘হঠাৎ করে ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে পুরসভা যথেচ্ছ হারে ফি আদায় করতে শুরু করে। ব্যবসায়ীরা একযোগে প্রতিবাদ করেন তৎকালীন মেয়র ও পুর কমিশনারের কাছে। এর পর থেকে ময়লা সাফাইয়ের ফি পুরসভাকে দিই না। পুরসভাও পদক্ষেপ করেনি।’’
পুর কোষাগারের অবস্থা সঙ্গিন হওয়ায় অন্যান্য পুর দফতর আয় বাড়ানোর দিশা খুঁজছে। অথচ জঞ্জাল অপসারণ দফতর বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির থেকে এই ফি সংগ্রহ বন্ধ করল! কিন্তু কেন?
জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পুর প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য দেবব্রত মজুমদারের যুক্তি, ‘‘দেড় বছর ধরে কোভিডের জন্য অনেক দোকান-ব্যবসা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন মালিক। সামনেই পুরভোট। নতুন বোর্ড গঠিত না হওয়া পর্যন্ত নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।’’ কিন্তু কোভিডের আগে থেকেই তো ময়লা সাফাইয়ের ফি নেওয়া বন্ধ। উত্তর মেলেনি দেবব্রতের কাছে। পুরসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেত্রী তথা ওয়ার্ড কোঅর্ডিনেটর রত্না রায় মজুমদারের বক্তব্য, ‘‘পুরসভা আর্থিক দিক থেকে পঙ্গু প্রায়। এখন আয়ের উৎস বন্ধ করলে আরও রুগ্ণ হয়ে পড়বে।’’