কলকাতার বায়ুদূষণ। —ফাইল চিত্র।
শহরের বায়ুদূষণ রোধে কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে বিভিন্ন সময়েতৈরি হয়েছে একের পর এক কমিটি। যদিও অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, নতুন কমিটি তৈরি হওয়ার পরে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই সেই কমিটির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। তাদের তরফে রিপোর্টদেওয়া তো দূরের কথা। এরই মধ্যে বায়ুদূষণ ঠেকাতে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নির্দেশে গঠিত হয়েছে ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যানকমিটি’। শহরে কার্বন নিঃসরণ কমাতে কী কী করণীয়, তা জানিয়ে ওই কমিটিরবিস্তারিত রিপোর্ট পেশ করার কথা মেয়রের কাছে। তবে,অতীতের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে পরিবেশবিদদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘শহরে কার্বন নিঃসরণ কমাতে ক্লাইমেট অ্যাকশনকমিটি তাদের রিপোর্টে যে সমস্ত প্রস্তাব দেবে, তার বাস্তবায়ন আদৌ হবে তো?’’
‘ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান কমিটি’র পুরসভা মনোনীত সদস্য, ভারত সরকারের শক্তিবিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরীর অবশ্য দাবি, ‘‘শহরে কার্বন নিঃসরণ কমাতে নয়া কমিটি বিশেষ ভাবে উদ্যোগী হয়েছে। কলকাতায় কীভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সৌর আলো ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়ে আমরা একটি প্রস্তাব পেশ করব। মেয়র নিজেও এ বিষয়ে বেশ আগ্রহী। কলকাতার সমস্ত বাতিস্তম্ভ, বাড়ির ছাদ, পুরসভার উদ্যান, বাজারের ছাদে কী ভাবে সৌর আলো লাগানো যেতে পারে, তা নিয়ে আমাদের কমিটি মেয়রের কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেবে। পরে সেই প্রস্তাব কী ভাবে কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে মেয়র ভেবে দেখবেন।’’
প্রসঙ্গত, কার্বন নিঃসরণের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতার অবস্থা বেশ ভয়াবহ। পরিবেশবিদদেরপর্যবেক্ষণ, এ শহরে যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়ার মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণ বেড়েই চলেছে। একই ভাবে বৈদ্যুতিক আলো থেকে নিঃসৃত কার্বনের পরিমাণও ভাবাচ্ছেবিশেষজ্ঞদের। ২০১৯ সালের নভেম্বরে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি (হাই পাওয়ার্ড অ্যাডভাইজ়রি কমিটি) তৈরি করেছিল কলকাতা পুরসভা। আইআইটি খড়্গপুর, কলকাতাবিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত ওই কমিটি বায়ুদূষণ কমানোর জন্যপুরসভাকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পের প্রস্তাব দেবে বলে ঘোষণা করেছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ।কিন্তু সেই ঘোষণার পরে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হলেও রিপোর্ট জমা পড়া তো দূরের কথা, সেই কমিটিই বর্তমানে ‘অচল’ বলে অভিযোগ।
পুরসভার পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, শহরে বায়ুদূষণ ঠেকাতে২০১৯ সালে যে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়েছিল, তাদের রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই পৃথক একটি সেল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলপুরসভা। বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়নই ছিল ওই সেল গঠনের উদ্দেশ্য। কিন্তু সেল গঠনের পরে দু’বছর পার হয়ে গেলেওতাদের সক্রিয়তা তেমন ভাবে চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ। বায়ুদূষণ রোধে তৈরি বিশেষজ্ঞ কমিটির চূড়ান্ত রিপোর্টের এখনওজমা না পড়া, দু’বছর আগে গঠিত সেলেরও কোনও রিপোর্ট এখনও না আসায় পুর প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, ‘‘বিশেষজ্ঞ কমিটি ও সেলের ভূমিকাই বলে দিচ্ছে,নয়া ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান কমিটির ভবিষ্যৎ কী!’’
যদিও পুরসভার এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘নতুন ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান কমিটি শীঘ্রই মেয়রের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে। তার পরেই দ্রুত সেই মতো কাজ শুরু হবে। বায়দূষণ কমাতে আমরা বদ্ধপরিকর।’’