বাঁধ-ভাঙা: রথযাত্রার ভিড়ে বালাই নেই করোনা-বিধি মানার। শুক্রবার, শরৎ বসু রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ
সংক্রমণ বৃদ্ধির হার দেখে অনুমান করা হচ্ছে, করোনার চতুর্থ ঢেউ হয়তো এসে গিয়েছে। তাই এখন অতিরিক্ত সতর্ক থাকা প্রয়োজন। অথচ, কোথাও করোনা-বিধি পালনের বালাই নেই। পথে বেরোনো ৯০ শতাংশ মানুষই ঘুরছেন মাস্ক ছাড়া। এর সামগ্রিক ফলাফল হতে পারে ভয়াবহ। এমনটাই আশঙ্কা করছেন কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ইতিমধ্যেই বৃহস্পতিবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ‘কোভিড প্রোটোকল’ ও ‘অ্যাডভাইসরি’ জারি করেছে। চিকিৎসকেরা মনে করছেন, মাস্ক পরা নিয়ে এ বার রাজ্য সরকারের কঠোর হওয়ার সময় এসেছে। বুধবার কলকাতায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬২১ জন। বৃহস্পতিবার সংক্রমিতের সংখ্যা ৬৭৩।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী লেখচিত্রের যে দাপট দেখা যাচ্ছে, তা প্রথমে দক্ষিণমুখী হলেও বর্তমানে উত্তরেও সে ভাল ভাবেই হানা দিয়েছে। কলকাতা পুর এলাকায় করোনার ওয়ার্ড-ভিত্তিক পরিসংখ্যান বলছে, জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেখানে সংক্রমিতের সংখ্যা মেরেকেটে ছিল ২০, এখন সেটা রোজই বেড়ে চলেছে। উত্তরের টালা, বেলেঘাটা, মানিকতলা, শ্যামপুকুর, ফুলবাগান এলাকায় করোনার প্রকোপ যথেষ্ট বেড়েছে বলে জানাচ্ছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। অর্থাৎ, করোনা দক্ষিণে আর সীমাবদ্ধ নেই। তবে আক্রান্তদের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশই উপসর্গহীন।
১০১-১০৯ নম্বর ওয়ার্ড। দক্ষিণ কলকাতার ১২ নম্বর বরো এলাকার এই সমস্ত ওয়ার্ডে গত কয়েক দিনে করোনার সংক্রমণ অত্যধিক হারে বেড়েছে। পুর স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার ওই বরোয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১০৪। পাশাপাশি চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে ১০ নম্বর বরোর অধীন ৯১-১০০ নম্বর ওয়ার্ড। ওই বরোর চেয়ারপার্সনের দাবি, ১০ নম্বর বরোয় চারটি ওয়ার্ড বেশি। ফলে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যাও বাড়ছে। বেহালা, সরশুনা, পর্ণশ্রী, ঠাকুরপুকুর, হরিদেবপুরের মতো সংযুক্ত এলাকাতেও গত তিন দিন ধরে সংক্রমণ বাড়ায় চিন্তিত পুরসভা এবং চিকিৎসকেরা।
জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে সংক্রমণের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধিকে আশঙ্কার বলেই মনে করছে পুর স্বাস্থ্য দফতর। দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘যে সব ওয়ার্ডে করোনা বেশি বাড়ছে, সেগুলি চিহ্নিত করা হচ্ছে। আবাসনগুলিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে বেশি। পুর স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন।’’ বক্ষরোগ চিকিৎসক অনির্বাণ নিয়োগীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘মানুষ ধরেই নিয়েছেন, মাস্ক না পরলে ক্ষতি হবে না। ফলে প্রশাসনকেই মাস্ক পরাতে বাধ্য করতে হবে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধির ফাঁক গলে মশাবাহিত রোগের প্রকোপ যাতে না বাড়ে, তার জন্য আজ, শনিবার থেকে শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে প্রচার শুরু হচ্ছে।