Drinking water

Wastage of Drinking Water: প্রতিদিন ২৪ লক্ষ লোকের জল নষ্ট হয় এ শহরে!

প্রতিদিন প্রায় ১৫৪ কোটি লিটার জল পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয়। যার মধ্যে দৈনিক সাড়ে ৩৬ কোটি লিটার জলই অপচয় হয়! জল অপচয়ের শতকরা হার ২৩ শতাংশ।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২২ ০৬:৫৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

‘‘আবাসন, বহুতলের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে জলের চাহিদাও বেড়েছে। বুস্টার পাম্পিং স্টেশন করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার সব রকম চেষ্টা করছে কলকাতা পুরসভা। তার পরেও নতুন নতুন পকেটে জলের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে।’’ উদ্বেগ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন কলকাতা পুরসভার ১৩ নম্বর বরোর চেয়ারপার্সন রত্না শূর।

Advertisement

রত্নাদেবীর উদ্বেগের অন্যতম কারণ, জনপ্রতিনিধি হিসেবে নাগরিকদের কাছে পানীয় জলের সঙ্কটের জবাবদিহি তাঁদেরই করতে হয়। যেমন, ১২ নম্বর বরো কমিটির চেয়ারপার্সন সুশান্ত ঘোষ বললেন, ‘‘আমার বরোর অনেক জায়গাতেই জলের সঙ্কট রয়েছে।’’ এমনিতে পরিস্রুত পানীয় জলপ্রাপ্তির দিক থেকে দক্ষিণ-সহ সংযুক্ত এলাকা বরাবরই ‘দুয়োরানি’। বছরের অন্য সময়ে তো বটেই, জলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে উত্তরের সঙ্গে দক্ষিণের বৈষম্য আরও স্পষ্ট হয় প্রতি বছরের গরমে। ওই সময়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলের অভাব যেন বাৎসরিক সঙ্কটে পরিণত হয়। পরিস্থিতি লজ্জার হয়, যখন এ শহরেরই এক প্রান্তে জলের বিপুল অপচয় হয়, আর অন্য প্রান্তে রত্নাদেবীর কথা মতো, ‘‘এক ঘণ্টা জল পেলেই আমরা খুশি!’’

প্রতিদিন ঠিক কতটা জল অপচয় হয় এ শহরে?

Advertisement

কলকাতা পুরসভার নিজস্ব পরিসংখ্যান বলছে, প্রতিদিন প্রায় ১৫৪ কোটি লিটার জল পরিশোধন করে সরবরাহ করা হয়। যার মধ্যে দৈনিক সাড়ে ৩৬ কোটি লিটার জলই অপচয় হয়! অর্থাৎ, জল অপচয়ের শতকরা হার ২৩ শতাংশ। এখন ‘সেন্ট্রাল গ্রাউন্ড ওয়াটার অথরিটি’র হিসেব অনুযায়ী, পূর্ণাঙ্গ নিকাশি ব্যবস্থা-সহ (ফুল ফ্লাশিং সিস্টেম) ১ লক্ষের বেশি জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে দৈনিক মাথাপিছু ১৫০-২০০ লিটার জলের প্রয়োজন। তবে কলকাতায় মাথাপিছু দৈনিক ১৫০ লিটার জল দেওয়া হয় বলে পুরসভার তথ্য বলছে। অর্থাৎ, সেই হিসেবে এ শহরে প্রতিদিন ২৪ লক্ষ লোকের ব্যবহারের জল নালা-নর্দমা দিয়ে বেরিয়ে যায়!

নষ্ট ‘জীবন’

• দৈনিক পরিশোধিত জলের পরিমাণ: ১৫৪৮১৪০০০০ লিটার

• দৈনিক জল অপচয়ের পরিমাণ: ৩৬৬৪৫২০০০ লিটার

• অপচয় হওয়া দৈনিক জলের শতকরা হার: ২৩.৬৭।

(সূত্র: কলকাতা পুরসভা)

যার পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভার এক কর্তা বলছেন, ‘‘এই অপচয় অবিশ্বাস্য। সহ-নাগরিকদের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকলে কেউ এটা করতে পারেন না। কারণ, তখন শহরেরই এক প্রান্তের মানুষ গরমে পর্যাপ্ত জল পাচ্ছেন না, এই চিন্তাটাই প্রাধান্য পায়।’’ দক্ষিণের এক বরো চেয়ারপার্সন উত্তর কলকাতায় এক পরিচিতের বাড়ি গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, “দেখেছিলাম, কল থেকে জল পড়ে যাওয়া অবস্থায় ব্রাশ করে যাচ্ছেন তিনি। আমিই কলটা বন্ধ করলাম। আসলে তাঁরা টালা ট্যাঙ্কের কাছে থাকেন, তাই দক্ষিণের জলের সঙ্কট সম্পর্কে ওঁরা জানেন না! জানলে এই কাজটা করার আগে দু’বার ভাবতেন।’’

তবে শুধুই কি জল-সমৃদ্ধ এলাকার জনগোষ্ঠীর একাংশ জল অপচয় করেন? দক্ষিণ বা সংযুক্ত এলাকার লোকজন একদমই করেন না? এই যুক্তি মানতে নারাজ পুরকর্তাদের একাংশ। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘আসলে জলের ঠিক ব্যবহার যেমন একটা অভ্যাস, তেমনই অপচয়ও একটা বদভ্যাস। অভিজ্ঞতা বলছে, জলসঙ্কট রয়েছে, এমন এলাকারও অনেকে জল অপচয় করেন।’’

তবে ‘জল অপচয় রোধে সচেতনতা দরকার’— এই ক্লিশে বার্তায় অপচয় ঠেকানো যাবে কি না, সে ব্যাপারে সংশয়ী পুরকর্তা থেকে জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই। তাঁদের মতে, জল অপচয় না করার বার্তা তো দীর্ঘ সময় ধরেই দেওয়া হচ্ছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে ছাড়া তাতে লাভ হচ্ছে কোথায়!

সে ক্ষেত্রে উপায় একটাই।— ‘জলকর না হোক, কিন্তু অতিরিক্ত জলের অপব্যবহারে জরিমানা ধার্য হোক’, এমনটাই দাবি তুলছেন প্রশাসনের অনেকে।

কিন্তু প্রতিদিন পড়ে নষ্ট হওয়া বারিধারার আওয়াজে সে দাবি শুনতে পাচ্ছে কি পুর প্রশাসন?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement