বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ হিসেবে সম্মানিত হওয়ার দিনেই ‘দিদি’কে একটি চিঠি দিয়েছেন ‘বোন’। কথা বলার জন্য সময় চেয়েছেন।
উত্তর কলকাতার কাশীশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ সীমা চক্রবর্তী। গত ২৬ অগস্ট তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর হাতে একটি চিঠি তুলে দেন তিনি। ওই অনুষ্ঠানেই তাঁকে ‘বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ’ হিসাবে সম্মানিত করে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন।
মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিলেন কেন? কী রয়েছে চিঠিতে?
প্রশ্ন করা হলে সোমবার সীমাদেবী বলেন, ‘‘কলেজের উন্নয়নের স্বার্থে কাজ করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তা নিয়ে আলোচনা করতেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। যা বলার তাঁকেই বলব।’’ যদিও অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, অধ্যক্ষের অভিযোগ মূলত স্থানীয় বিধায়ক ও রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার বিরুদ্ধে। কাশীশ্বরী কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি শশীদেবী। অধ্যক্ষের ঘনিষ্ঠ মহলের অভিযোগ, কলেজের কাজে মন্ত্রীর থেকে সন্তোষজনক সাহায্য পাওয়া যায় না।
শশীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি আবার কাশীশ্বরীর অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘অধ্যক্ষ সব মিথ্যে বলছেন। ওঁর বিরুদ্ধে আর্থিক অসঙ্গতির অভিযোগে তদন্ত চলছে বলেই এই রকম করছেন। বছর দেড়-দুই আগেও আমাদের নামে অপমানজনক কথা বলেছেন। বলেছেন, আমরা নাকি ওঁকে ভয় দেখাচ্ছি, আতঙ্ক ছড়াচ্ছি।’’
মন্ত্রীর আরও বক্তব্য, বিগত সরকারের আমলে কলেজের ফিনান্স কমিটির বৈঠক হতো না। অথচ টাকাপয়সা দিব্যি খরচ হতো। এর দায় বর্তমান পরিচালন সমিতির কেউ নিতে চাননি। শিক্ষা দফতর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা করে এ নিয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়। তারা জানায়, রিপোর্টের ভিত্তিতে পরিচালন সমিতিকেই পরবর্তী পদক্ষেপ করতে হবে। তার পর কলেজ কর্তৃপক্ষ দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কিন্তু সেই কমিটির সঙ্গে সহযোগিতা করেননি অধ্যক্ষ। মন্ত্রীর কথায়, ‘‘আসলে আমরা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বলে সহজে নিশানা হয়ে যাই। আমার ধারণা, উনি যখন দেখলেন যে জয়পুরিয়া নিয়ে গোলমাল শুরু হয়েছে, তখনই ভাবলেন, এই সময়ে যদি আমার নামে কিছু মিথ্যা কুৎসা করা যায়!’’
এ দিন সীমাদেবীকে প্রশ্ন করা হয়, এক জন অধ্যক্ষ হয়ে শাসক দলের ছাত্র সংগঠনের সভায় গেলেন কেন? জবাব দেননি তিনি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, ছাত্রেরা ডেকেছেন বলে তিনি গিয়েছেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়ার তো একটা পদ্ধতি আছে। সেটা কি ওই মঞ্চ হতে পারে? ঘনিষ্ঠ মহলের জবাব, কলেজের নানা সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চেয়ে আগে কয়েক বার শিক্ষামন্ত্রী এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন অধ্যক্ষ। হয়নি। তাই হাতের কাছে মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়ে সরাসরি চিঠিটি তুলে দেন। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘দিদি’ সম্বোধন করে নিজেকে ‘বোন’ বলে পরিচয় দিয়েছেন তিনি।