নৈশ ক্লাবের গানের গুঁতো, রাতের ঘুম গিয়েছে কসবার

শপিং মলের বিশ তলা ছাদে মায়াবী আলো আর রঙিন জলের স্রোতে ভেসে যায় যৌবন। তৈরি হয় মায়াজাল। মায়াজালে ঢেউ তুলতে সঙ্গী হয় উচ্চস্বরে গান-বাজনা। তার তালে পার্টি চলে রাতভর।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০০:০৬
Share:

শপিং মলের বিশ তলা ছাদে মায়াবী আলো আর রঙিন জলের স্রোতে ভেসে যায় যৌবন। তৈরি হয় মায়াজাল। মায়াজালে ঢেউ তুলতে সঙ্গী হয় উচ্চস্বরে গান-বাজনা। তার তালে পার্টি চলে রাতভর।

Advertisement

এ দিকে সেই গানের গুঁতোতেই রাতের ঘুম চটকে গিয়েছে কসবার বাসিন্দাদের। স্থানীয় ওই নৈশ ক্লাবের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগও করেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের আরও অভিযোগ, স্থানীয় কাউন্সিলর ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে বার বার জানিয়েও শব্দের দাপট কমেনি।

কসবার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অ্যক্রোপলিস মলের ছাদে সেই নৈশ ক্লাবে উচ্চস্বরে হইচই সপ্তাহে অন্তত তিন-চার দিন চলে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শুক্র, শনি, রবিবারের রাতে সেই শব্দের দাপট বাড়ে। শপিং মলের একশো মিটারের মধ্যেই থাকেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোপাল চক্রবর্তী। তিনি জানিয়েছেন, আলো আর শব্দের তীব্রতায় পাখিরা এলাকা ছাড়া হয়েছে। অধিকাংশ দিন রাত আড়াইটে পর্যন্ত গানের চোটে বাসিন্দারা ঘুমোতে পারেন না।

Advertisement

১০০ জন বাসিন্দার চিঠি গিয়েছে থানায়। কিন্তু পুলিশি সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ভিত্তিতে তৈরি পরিবেশ আইন অনুযায়ী, রাত দশটার পরে শব্দের দাপট চললে মাইক এবং বাদ্যযন্ত্রগুলি বাজেয়াপ্ত করার কথা স্থানীয় থানার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে শব্দের দৌরাত্ম্য কমাতে পুলিশ এক বার ওই নৈশ ক্লাবে যায়, কিন্তু কোনও জিনিস বাজেয়াপ্ত করেননি। আইনের ক্ষমতা থাকলেও পুলিশ কেন তা প্রয়োগ করেনি, সে উত্তর অবশ্য মেলেনি।

আরও পড়ুন

এ বার তথ্য ‘চুরি’ শপিং কার্ডের

কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসএসডি) বন্দনা বরুণ চন্দ্রশেখর শুধু বলেন, ‘‘অভিযোগ জমা পড়েছে শুনেছি। এই বিষয়ে বেশি কিছু জানি না।’’ স্থানীয় থানার কর্তারা অবশ্য বলেছেন, তাঁদের তৎপরতায় শব্দের দাপট কমেছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সপ্তাহান্তের দিনগুলির মতো আওয়াজের তীব্রতা না থাকলেও, বুধবার রাত পর্যন্ত ওই নৈশ ক্লাবের শব্দ যন্ত্রণা তাঁদের ভোগ করতে হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সৌরভ পালের অভিযোগ, উচ্চ মাধ্যমিক, সিবিএসই, আইসিএসই একাধিক বোর্ড পরীক্ষার সময় এটা। তা ছাড়া তো এলাকায় অসুস্থ, বয়স্ক মানুষ আছেনই। অনেকের বাড়িতে রয়েছে পোষ্যও। কিন্তু কোনও কিছুই ভাবেন না ক্লাব কর্তৃপক্ষ।

এ ভাবে খোলা ছাদে নৈশ ক্লাব চালানোয় আপত্তি জানিয়েছেন ওই মলেরই বেশ কয়েকটি রেস্তোঁরার ম্যানেজারও। তাঁদের অভিযোগ, শব্দের এতই দাপট যে মলের অন্য রেস্তোরাঁয় রাত দশটার পরে খেতে যেতে চান না অনেকে। দাবি, ঘনবসতি এলাকায় নৈশ ক্লাব চালালে বেশ কিছু আইনি বিধি-নিষেধ মেনে চলতে হয়। ক্লাবের চারপাশে মোটা কাচের দেওয়াল বানাতে হয়। যাতে ক্লাবের ভিতরের আওয়াজ বাইরে যেতে না পারে। অভিযোগ, ক্লাব কর্তৃপক্ষ এই সব নিয়মের তোয়াক্কাই করছেন না।

স্থানীয় বাসিন্দারা এর পরে দারস্থ হয়েছেন রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কাছে। তাঁদের অভিযোগের ভিত্তিতে পর্ষদ ওই ক্লাবকে নোটিস পাঠায়। ওই নৈশ ক্লাবের ম্যানেজার সৌরভ নাগের দাবি, রাত বারোটা পর্যন্ত ক্লাব খোলা থাকলেও জোরে গান বাজানো হয় না। তিনি বলেন, ‘‘এলাকার বাসিন্দাদের অসুবিধা তৈরি করব বলে ক্লাব চালাচ্ছি না। বাসিন্দাদের কথা মাথায় রেখেই রাত দশটার পরে শব্দের তীব্রতা কমানো হয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement