Nagerbazar

এই চোখটা দিয়ে আগুন বেরবে: বিস্ফোরণস্থলে দাঁড়িয়ে শাসানি জ্যোতিপ্রিয়র

মঙ্গলবার নাগেরবাজারের কাজিপাড়া এলাকায় জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৮ ১৮:৩৪
Share:

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।—ফাইল চিত্র।

বিস্ফোরণ কী ভাবে ঘটল, নেপথ্যে কে— তদন্ত শুরুই হয়নি তখনও। পাড়াটা বিধ্বস্ত, বিস্ফোরণের চিহ্ন ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্কের রেশ। গোটা এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ, তৎপর বম্ব স্কোয়াড। ঠিক এমন এক পরিস্থিতিতেই নাগেরবাজারের বিস্ফোরণস্থলে পৌঁছলেন রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। বিস্ফোরণের দায় সরাসরি বিজেপির উপরে চাপালেন। তার পরে শাসানির সুরে বললেন, ‘‘এ বার আমাদের ছেলেরা ওদের বুঝিয়ে দেবে ভাষাটা।’’

Advertisement

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক মঙ্গলবার নাগেরবাজারের কাজিপাড়া এলাকায় গিয়ে বিস্ফোরণ সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করেছেন, তাতে বেশ বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। কোনও তদন্ত হল না, কেউ ধরা পড়ল না, কোনও জিজ্ঞাসাবাদ হল না, পুলিশ-প্রশাসনের কোনও বক্তব্য জানা গেল না। কিন্তু মন্ত্রী ঘটনাস্থলে পৌঁছেই বলে দিলেন, বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বিজেপি-আরএসএস। তাতেই থামলেন না মন্ত্রী, কী উদ্দেশে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, তা-ও বলে দিলেন!

জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘আজকের এটা তো একেবারে গভীর চক্রান্ত। বাংলায় যাদের মতিভ্রম হয়েছে, যারা হিংসার রাজনীতি করছেন, যারা মানুষকে মেরে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারাই এটা ঘটিয়েছেন।’’ বিস্ফোরণস্থলে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী খুব জোর দিয়েই জানান, এই বিস্ফোরণের পিছনে বিজেপি-ই রয়েছে। তার পরে কণ্ঠস্বরে বিস্ময় নিয়ে বলেন, ‘‘কোনও শুভবুদ্ধি সম্পন্ন রাজনৈতিক দল এটা করতে পারে! যারা ভারতের ক্ষমতায় রয়েছে, তারা এটা করতে পারে! গোটা বাংলায় পরিকল্পনা মাফিক অশান্তি করছে। আমার তো বলার ভাষা নেই, আমি বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছি!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: নাগেরবাজারে বড়সড় বিস্ফোরণ, প্রাণ গেল শিশুর, তরজা শুরু তৃণমূল-বিজেপির

আরও পড়ুন: বোমা ফাটতেই বিজেপির দিকে আঙুল তৃণমূলের, প্রয়োজনে এনআইএ আসবে, পাল্টা কৈলাস

বোমা যে বিজেপির পরিকল্পনাতেই রাখা হয়েছিল, সেই অভিযোগ তুলেই মন্ত্রী থামেননি। কী উদ্দেশে বোমা রাখা হয়েছিল, তা-ও খুব নিশ্চিত ভাবেই বলে দেন তিনি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘টার্গেট তো চেয়ারম্যানই (দক্ষিণ দমদম পুরসভার)। চেয়ারম্যান কাজ করছেন, জনপ্রিয় চেয়ারম্যান পাচু রায়। একটা সৎ লোক। তাঁকেই তো টার্গেট করা হয়েছে।’’

এর পরেই বিজেপিকে প্রায় সরাসরি শাসান উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘এ বার ছেলেরা রুখে দাঁড়াবে। এ বার ছেলেরা ছেলেদের ভাষা বুঝিয়ে দেবে তাদের।’’ তার পরেই সামলে নিয়ে বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে বুঝিয়ে দেবে।’’ জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘এটা হতে পারে না। একটার পর একটা লোক মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে। এটা হতে পারে না। আবার ইসলামপুর নিয়ে তাঁরা চিৎকার করছেন। আর দমদমে এসে তারা মানুষকে মেরে ফেলছেন। চেয়ারম্যানকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করেছিলেন।’’

মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূলের শীর্ষনেতা অবশ্য ‘শান্তিরক্ষা’র বিষয়েও আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘‘এটা আমরা করতে দেব না। রুখে দাঁড়াব, বলে দিলাম। আমাদের হয়তো আজ চার ফোঁটা চোখের জল পড়ছে। কিন্তু এই চোখটা দিয়ে শেষ পর্যন্ত আগুন বেরোবে। সেই আগুনে কিন্তু এদের পুড়ে মরতে হবে।’’

বিস্ফোরণস্থলে দাঁড়িয়ে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের এই সব মন্তব্যের প্রবল সমালোচনা শুরু হয়েছে বিরোধী শিবিরে। ‘এ বার ছেলেরা ছেলেদের ভাষা বুঝিয়ে দেবে’ বা ‘চোখের আগুনে পুড়ে মরতে হবে’— এই সব মন্তব্য প্ররোচনামূলক বলে বিজেপি অভিযোগ করতে শুরু করেছে।

মঙ্গলবার বিকেলে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করেন দিলীপ ঘোষ। রাজ্য বিজেপির সভাপতি সেই সাংবাদিক বৈঠক থেকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে আক্রমণও করেন। দিলীপ বলেন, ‘‘তদন্ত হওয়ার আগেই মন্ত্রী বলে দিচ্ছেন, কোন সংগঠন বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে, কী বোমা ব্যবহার হয়েছে।’’ দিলীপের শ্লেষাত্মক প্রশ্ন, ‘‘কী করে বলেন? উনি কি জ্যোতিষী নাকি?’’ এই বোমা বিস্ফোরণের নেপথ্যে তৃণমূলেরও হাত থাকতে পারে বলে দিলীপ পাল্টা অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘যে এলাকায় বিস্ফোরণ হয়েছে, সেখানে মহালয়ার দিন আরএসএসের রুট মার্চ হওয়ার কথা ছিল। শুনছি ওই রুট মার্চ যাতে না হয়, তার জন্য এলাকায় একটা উত্তেজনা তৈরি করে দেওয়া হল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement