বয়ান রেকর্ড হওয়ার পর লালবাজারের সামনে রাজকুমার সাউ-এর পরিবার।—নিজস্ব চিত্র
সিঁথি থানায় পুলিশি হেফাজতে ব্যবসায়ী রাজকুমার সাউয়ের মৃত্যুর ঘটনায় অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী আসুরা বিবির ‘বয়ান বদল’ ঘিরে তৈরি হওয়া রহস্যের মধ্যেই তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড করলেন শিয়ালদহ আদালতের প্রথম বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট বলরাম হাজরা। এ দিন তিনি নিজেই সিঁথি থানায় যান। টালা থানার পুলিশের গাড়িতেই সিঁথি থানায় নিয়ে যাওয়া হয় আসুরা বিবিকে। সেখানে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা ধরে আসুরার বয়ান রেকর্ড করেন বিচারক। গোটা পর্বটিই ভিডিয়োগ্রাফ করা হয়।
এর আগে বুধবার রাত থেকেই আসুরার ‘বয়ান বদল’ নিয়ে তৈরি হয় নতুন রহস্য। সোমবার সিঁথি থানা এলাকার একটি চুরির ঘটনার তদন্তে অন্যতম অভিযুক্ত হিসাবে সিঁথি থানায় জেরা করা হয় পাইকপাড়ায় পুরসভার নাইট শেল্টারের বাসিন্দা আসুরা বিবিকে। সিঁথি থানার পুলিশ আসুরার বয়ানের উপর ভিত্তি করেই জেরার জন্য নিয়ে আসে ব্যবসায়ী রাজকুমার সাউকে। ওই দিন সন্ধ্যায় পুলিশি হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়া রাজকুমারের মৃত্যুর পর গ্রেফতার না করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল অন্তঃসত্ত্বা আসুরাকে। সেই সময় আসুরা দাবি করেছিলেন যে তাঁর সামনেই পুলিশ রাজকুমারকে থানায় মারধর করেছিল।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর নাম নেই আমন্ত্রণপত্রে, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধন ঘিরে বিতর্ক
ওই অভিযোগ করার পরের দিন, মঙ্গলবার সকাল থেকে আচমকাই উধাও হয়ে যান আসুরা। রাজকুমারের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, পুলিশই লুকিয়ে রেখেছে আসুরাকে। প্রায় ৩৮ ঘণ্টা পরে বুধবার রাত ১০টা নাগাদ এক আত্মীয়ের বাড়িতে আসুরার হদিশ পায় পুলিশ। ওই রাতেই আসুরা টালা থানায় অভিযোগ জানান যে রাজকুমারের ভাই রাকেশ এবং ছেলেরা তাঁকে মারধর করার হুমকি দেওয়ায় ভয়ে তিনি পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক আত্মীয়ের বাড়িতে। আর তার পরই রাজকুমারের পরিবার বয়ান বদলের অভিযোগ তোলে। রাজকুমারের ভাই রাকেশ বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশ এবং কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির চাপে বয়ান বদল করেছেন আসুরা।” অন্য দিকে, আসুরার অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হয়। পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘আসুরার অভিযোগ একটি জেনারেল ডায়েরি হিসাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি আদালতকে জানিয়েছি। এর পর আদালত যা নির্দেশ দেবে সেই অনুসারে এগোব আমরা।”
এ দিন পুলিশ হেফাজতে রাজকুমারের মৃত্যু নিয়ে তাঁর ভাই রাকেশের করা অভিযোগের তদন্তে, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ রাকেশ এবং রাজকুমারের ছোট ছেলে বিজয়ের বয়ান রেকর্ড করে লালবাজারে। এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক বলেন, ‘‘হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় সমান্তরাল ভাবে তিনটি তদন্ত চলছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্ধারিত নিয়ম মেনে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১৭৬ ধারা অনুযায়ী এক জন বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট গোটা ঘটনার স্বাধীন ভাবে তদন্ত করছেন। এর পাশাপাশি, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ তদন্ত করছে রাকেশ সাউয়ের করা এফআইআরের। সেই সঙ্গেই গোটা ঘটনার একটি বিভাগীয় তদন্তও চলছে।”
আরও পড়ুন: ঐশীকে ঢুকতেই দেওয়া হল না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিক্ষোভ গেটের সামনে
শিয়ালদহ আদালতের প্রথম বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট আসুরার বয়ান রেকর্ড করার আগে রাজকুমার সাউয়ের ভাই রাকেশ, সুকুমার, বোন সুশীলা এবং ছেলে বিজয়ের বয়ান রেকর্ড করেছে। এক প্রাক্তন পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘আসুরার বয়ান এই গোটা মামলার তদন্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।” ওই পুলিশকর্তা রাজকুমারের পরিবারের তোলা আসুরার বয়ান বদলের অভিযোগকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘‘ওই দিন ঠিক কী হয়েছে তা প্রাথমিক ভাবে জানেন চার জন। অভিযুক্ত তিন পুলিশকর্মী এবং আসুরা। প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে ওই দিন আসুরা কী কী দেখেছেন তা জানতে চাইবেন সব তদন্তকারীই।” সে ক্ষেত্রে বয়ান বদল আদৌ কতটা সম্ভবপর তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ওই প্রাক্তন পুলিশকর্তা।