জেসপ কারখানায় চুরি নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে তদন্ত করছে সিআইডি। চুরির অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতারও করেছে বেশ কয়েক জন দুষ্কৃতীকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বন্ধ থাকা ওই কারখানার মালপত্র চুরি যে অব্যাহত, তার প্রমাণ যথেষ্টই পাচ্ছে পুলিশ। রবিবারও এমন একটি ঘটনায় আট জনকে ধরে পুলিশ। এ দিকে, বন্ধ কারখানায় বারবার আগুন লাগার ঘটনায় রুইয়ার বিরুদ্ধে অন্তর্ঘাতের অভিযোগ এনেছে দমকল এবং পুলিশ। সেই সঙ্গে ওই কারখানা থেকে লোহা চুরির ঘটনায় কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আলাদা মামলা করেছে পুলিশ। এই মামলার তদন্তে তাই এ বার কারখানার মালিক পবন রুইয়াকে ডেকে পাঠাল সিআইডি। বুধবার দুপুরে রুইয়াকে ভবানীভবনে যেতে বলা হয়েছে।
সিআইডি তলবের আঁচ পেয়েই অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের দায়ের করা এফআইআর খারিজ করার আবেদন নিয়ে সোমবারই কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন পবন রুইয়া।
এ দিন সেই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল হাইকোর্টের বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায়ের আদালতে। আদালত সূত্রের খবর, সময়ের অভাবে এবং সরকারি আইনজীবীর অনুপস্থিতির কারণে এ দিন ওই মামলার শুনানি হয়নি।
তবে পবনের আইনজীবীরা এ দিন বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে জানান, ২০০৮ সালেই জেসপের মালিকানা ছেড়ে দিয়েছেন তাঁদের মক্কেল। তিনি এখন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পদেও নেই। সেই কারণে, কারখানায় আগুন লাগা বা চুরি হওয়ার জন্য পবনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হতে পারে না। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ যাতে কড়া কোনও আইনি ব্যবস্থা না নিতে পারে, সেই ব্যাপারে আদালত যাতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ জারি করে, তার আবেদন জানান আইনজীবীরা। বিচারপতি সমাপ্তি চট্টোপাধ্যায় অবশ্য সেই আবেদন শোনেননি। তিনি বুধবার মামলার শুনানি ধার্য করেছেন।
এ দিকে, সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাতেও জেসপের একটি গেটের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে ছ’জনকে। তাঁদের জেরা করে ধরা হয় আরও দু’জনকে। পুলিশের দাবি, রাতে গাড়ি নিয়ে এসে জেসপের ভিতর থেকে লোহা-লক্কড় চুরির চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। সিআইডি তদন্তভার নেওয়ার পরে গত সপ্তাহেও চুরি হয়েছিল জেসপে।
ভবানীভবন সূত্রের খবর, এক সপ্তাহ ধরে তদন্ত করার পরে পুলিশের ধারণা, জেসপকে কেন্দ্র করে বড় মাপের একাধিক চুরি-চক্র চলছে। রবিবার রাতে গ্রেফতার হওয়া দুষ্কৃতীরা সেই রকমই একটি চক্রের সদস্য বলে অফিসারদের দাবি। ধৃতদের কয়েক জন ছাঁট লোহার কারবারি বলে তদন্তকারীরা জানান। পুলিশের অনুমান, তাঁরাই ওই কারখানা থেকে মাল চুরির জন্য বরাত দিয়েছিল দুষ্কৃতীদের।
সিআইডি সূত্রে এ দিন জানা গিয়েছে, রবিবার রাতে ওই বন্ধ কারখানার বাইরে নজরদারি চালাচ্ছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। হঠাৎ, তাঁদের নজরে আসে ওই কারখানার একটি গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে একটি ছোট মালবাহী গাড়ি। ছিলেন বেশ কয়েক জন সন্দেহভাজন যুবকও। পুলিশকর্মীরা ওই যুবকদের দিকে যেতেই তাঁরা পালানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় তাঁরা ধরা পড়ে যান।
সিআইডি সূত্রের খবর, ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন বাগুইআটির বাসিন্দা এবং লোহা ব্যবসায়ী বিশাল জায়সবাল ওরফে নিকি এবং সুমিত জায়সবাল ওরফে ভিকি। তদন্তকারীদের দাবি, বিমানবন্দর এলাকার বাসিন্দা নুর ইসলামকে ওই কারখানার লোহা-লক্কড় চুরি
করে তা সরবরাহ করার বরাত দিয়েছিলেন নিকি ও ভিকি। চুরি করা সেই লোহা-লক্কড়ের বিনিময়ে মোটা টাকা পেতেন নুর।
তদন্তকারীরা নুরের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন, তিনি রুবেল শেখ, সমিত দাস, সঞ্জীব শেখ এবং মিঠুন শেখকে চুরি করার কাজে লাগান। নুরের মতো তাঁরাও বিমানবন্দর এলাকার দোলনগরের বাসিন্দা। প্রত্যেকের বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় একাধিক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ, এতটাই বেপরোয়া তাঁরা যে, জেসপ নিয়ে পুরোদমে তদন্ত চলাকালীনই তাঁরা চুরি করতে চলে আসেন। তদন্তকারীদের দাবি, পরিকল্পনা মাফিক ওই পাঁচ জন
একটি মালবাহী গাড়ি করে রবিবার রাতে কারখানার ২৮ নম্বর গেটের সামনে আসেন। গাড়ি চালাচ্ছিলেন বাবি মল্লিক নাম ঘোলার এক যুবক। পুলিশ জানিয়েছে, নুর তাঁকেও চুরির কাজে লাগান।
সিআইডির এক অফিসার জানান, চোরাই লোহা-লক্ক়ড় কেনার পরে নিকি এবং ভিকি হাওড়া-সহ রাজ্যের বিভিন্ন লোহাপট্টির ব্যবসায়ীদের কাছে তা বিক্রি করে দিতেন। তদন্তকারীদের দাবি, চুরির সময়ে নিকি এবং ভিকিও অন্য একটি গাড়ি নিয়ে কারখানার আশপাশে ঘোরাঘুরি করতেন।
ভবানীভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেসপের মালপত্র চুরির তদন্তে নেমে এর আগে সিআইডি পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছিল। যার মধ্যে গৌতম মণ্ডল নামে মানিকতলা এলাকার এক চোরাই মালের ক্রেতাও ছিলেন। তাঁকে জেরা করেই রবিবারের ওই চুরিচক্রের লোকেদের খোঁজ মিলেছে বলে সিআইডি জানিয়েছে।
তদন্তকারীরা গ্রেফতার হওয়া আট দুষ্কৃতীকে সোমবার দুপুরে ব্যারাকপুর আদালতে পেশ করেন। বিচারক ধৃতদের ন’দিনের সিআইডি হেফজাতে রাখার নির্দেশ দেন।