চকলেট বোমা প্যাকেটবন্দি করার কাজ চলছে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
মাস দুয়েক আগে থেকেই প্রস্তুতি প্রায় সারা। দক্ষিণ ২৪ পরগনার শব্দবাজির আঁতুড়ঘর চম্পাহাটির হাড়াল, সোলগলিয়া চিনের মোড় এলাকায় তৈরি হয়ে গিয়েছে চকলেট বোমা। খাটের তলায়, বাড়ির আনাচেকানাচে প্লাস্টিক মোড়া চকলেট বোমার প্যাকেট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। এমনই সব অভিযোগ শোনা যাচ্ছিল। গত বছর থেকে মজুত থাকা চকলেট বোমাও ছড়িয়ে গিয়েছে বাজারে। এর ফলে যে দুর্ঘটনার আশঙ্কা অন্য বারের তুলনায় বেড়েছে, মানছেন ব্যবসায়ীদেরই অনেকে।
অভিযোগ যাচাই করতে পরিচিত এক বাজি ব্যবসায়ীর বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, বারান্দায় বসে কয়েক জন মহিলা চকলেট বোমা প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরছেন। প্রতিটি প্যাকেটে ঢুকছে একশোটি করে। শব্দের মাত্রা অনুযায়ী প্যাকেটের তিন রকমের দাম— ৭০, ৯০ এবং ১১০ টাকা। এত চকলেট বোমা? প্রশ্ন শুনে ব্যবসায়ীর সহাস্য উত্তর, ‘‘চরকিও আছে। গত বছর বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল আদালত। এ বারেও যে পরিস্থিতি তেমন হতে পারে, আন্দাজ করা হচ্ছিল। কম পয়সার বিনিয়োগে চকলেট বোমার লাভজনক ব্যবসা তাই আঁকড়ে ধরতে হয়েছে। মাস দুয়েক আগেই ছড়িয়েছে বাজারে, অপেক্ষা শুধু ফাটার। এখন কয়েক জনের বরাতের বাজি করছি।’’ ব্যবসায়ী জানাচ্ছেন, বিশ্বকর্মা পুজোর আগেই চকলেট বোমা নিয়ে গিয়েছেন কলকাতা-সহ আশপাশের অনেক বাজি ব্যবসায়ী। চম্পাহাটি থেকে ছোট মালবাহী আনাজের গাড়িতে যা ধাপে ধাপে গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে।
কথার মাঝে আলোচনায় যোগ দেওয়া অন্য এক ব্যবসায়ীর মন্তব্য, ‘‘অধিকাংশ কারবারি সুদের বিনিময়ে মহাজনের থেকে মোটা টাকা ধার নিয়ে ব্যবসা করেন। আতশবাজিতে তেমন মুনাফা নেই। চম্পাহাটির বাজারে আতশবাজি কিনতে তেমন কেউ আসেনও না। বেশির ভাগই চকলেট বোমা ব্যাগে ভরে তার উপরে আতশবাজি চাপা দিয়ে নিয়ে যান।’’ সেই প্রবণতা এ বারও রয়েছে। দুই ব্যবসায়ীর দাবি, গত বছরের মজুত এবং এ বছরের তৈরি চকলেট বোমা বিক্রি করেই সামান্য মুনাফা হয়েছে। গত দু’মাসে চম্পাহাটির বিভিন্ন গ্রাম থেকে পাইকারি দরে কয়েক লক্ষ টাকার চকলেট বোমা বিক্রি হয়ে গিয়েছে। পড়ে আছে যা, তা সামান্য।
কী ভাবে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে চলছে এ সব? চম্পাহাটির গ্রামগুলির বাড়িতেই তৈরি হচ্ছে চকলেট বোমা, চরকি, তুবড়ি। অল্প অল্প করে গ্রামের পিছনের রাস্তা দিয়ে পৌঁছচ্ছে গন্তব্যে। বাজি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে এলাকায় পুলিশি টহলদারি চললেও ভয় নেই লুকোচুরি করে ব্যবসা চালানো কারবারিদের। এলাকার মজুতদার এক ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘গত বছর থেকে আর কারখানায় বাজি তৈরি হচ্ছে না। বাড়িতে অল্প করে তৈরি হচ্ছে। পুলিশ তল্লাটে ঢুকলে ফোনে জানিয়ে দিচ্ছি। জানি, পুলিশ গৃহস্থ বাড়িতে যাবে না।’’
কিন্তু গত বছরের বাজি এ বছর ফাটাতে গিয়ে তো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে? ওই ব্যবসায়ীর উত্তর, ‘‘বাজি ফাটানোয় ঝুঁকি এমনিই রয়েছে। এ বার একটু বেশিই থাকছে। কিন্তু এত বাজি নিয়ে আমরাই বা কী করব? মাস ছয়েকের সুদ মকুব করেছেন মহাজন। কিন্তু আসল আর বাকি সুদের টাকা তো ফেরত দিতে হবে। আমাদের কথা কেউ কি ভাবছে?’’