ভূপতিত: সোমবারের ঝড়বৃষ্টিতে রবীন্দ্র সরোবর চত্বরে এ ভাবেই পড়ে গিয়েছে একাধিক গাছ। পরে সেগুলি কেটে সরানো হয়। মঙ্গলবার। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। যার জেরে ১০০টিরও বেশি গাছ ভেঙে পড়ল কলকাতায়। সোমবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া ঝড়বৃষ্টিতে কলকাতা পুরসভা এলাকায় মোট ১১০টি গাছ ভেঙে পড়েছে বলে জানা গিয়েছে। গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে শহরতলির বিভিন্ন এলাকাতেও। বারুইপুরে মাথায় গাছ ভেঙে পড়ায় মারা গিয়েছেন এক প্রৌঢ়।
কলকাতা পুরসভার উদ্যান বিভাগ সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শহরে সব চেয়ে বেশি গাছ পড়েছে সাত নম্বর বরোয়। সাত নম্বর বরো, অর্থাৎ ট্যাংরা এলাকায় মোট ২০টি গাছ ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়া, তিন নম্বর বরোয় ১৪টি গাছ ভেঙে পড়েছে। আট ও দশ নম্বর বরোয় যথাক্রমে ১১টি ও ১০টি গাছ ভেঙে পড়েছে।
উদ্যান বিভাগ সূত্রের খবর, ভেঙে পড়া গাছগুলির বেশির ভাগই কদম, কৃষ্ণচূড়া ও শিমুল। কলকাতায় গাছের শিকড় মাটির নীচে বেশি গভীরে যেতে পারে না। তাই অল্প ঝড়বৃষ্টিতেই প্রচুর গাছ ভেঙে পড়ে প্রতি বছর। এই মরসুমের প্রথম ঝড়বৃষ্টিতেও যার অন্যথা হয়নি। মূল শহরে গাছ ভেঙে পড়ার ঘটনা বেশি ঘটলেও যাদবপুর, বেহালা, জোকা, গার্ডেনরিচ, হরিদেবপুর, বাঁশদ্রোণীর মতো সংযুক্ত এলাকায় বেশি গাছ ভেঙে পড়েনি। কলকাতায় মাটির নীচে জল, নিকাশির পাইপলাইন রয়েছে। এ ছাড়া, বিদ্যুৎ সংযোগও গিয়েছে মাটির নীচ দিয়ে। তাই গাছ লাগালেও মাটির নীচে শিকড় বেশি দূর যেতে পারে না। ফলে অল্প ঝড়বৃষ্টিতেই সেগুলি ভেঙে পড়ে।
এ দিকে, সোমবার, দুর্যোগের রাতে নারকেল গাছ ভেঙে গায়ে পড়ায় মৃত্যু হল এক প্রৌঢ়ের। ঘটনাটি ঘটেছে বারুইপুরের সাউথ গড়িয়া পঞ্চায়েতের নড়িদানা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম জহর মণ্ডল (৬৬)। পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, জহর আলমারি তৈরির কাজ করতেন। পাশাপাশি, চাষবাসও করতেন। বাড়ির কাছেই শুকনো খড় জড়ো করা ছিল। বৃষ্টি আসছে দেখে স্ত্রী আরতিকে নিয়ে সেই খড় প্লাস্টিক দিয়ে চাপা দিতে যান তিনি। তত ক্ষণে ঝড় উঠেছে। জহর আর আরতি মিলে যখন খড় চাপা দিচ্ছিলেন, সেই সময়েই পাশের একটি নারকেল গাছ ভেঙে পড়ে। সেটির নীচে চাপা পড়েন জহর। আরতির চিৎকারে ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। কোনও মতে গাছ সরিয়ে জহরকে উদ্ধার করে বারুইপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ দেহটি ময়না তদন্তে পাঠিয়েছে।
জহরের ভাইপো সমীর মণ্ডল বলেন, “বৃষ্টিতে যাতে ভিজে না যায়, তার জন্য শুকনো খড় প্লাস্টিক দিয়ে ঢাকছিলেন জেঠু ও জেঠিমা। সেই সময়ে নারকেল গাছটা ভেঙে পড়ে। জেঠিমার চিৎকার শুনে আমরা ছুটে যাই। জেঠুকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তবে বাঁচানো যায়নি।”