যাঁদের হাতে রাতে তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের অফিস থেকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব থাকে, তাঁদের একটি অংশ পাঁচ নম্বর সেক্টরে তরুণীকে গণধর্ষণের ঘটনায় সরাসরি যুক্ত। এমনকী অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছে এক নিরাপত্তারক্ষীও, যাকে খুঁজছে পুলিশ। রবিবারের এই ঘটনার পরে নিরাপত্তা নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছেন সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টরের তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীরা।
গত মাসের ২৯ তারিখ রাতে পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি পানশালার কাছ থেকে এক তরুণীকে গাড়িতে তুলে নিয়ে নিউ টাউন হয়ে অ্যাকোয়াটিকা রোডে একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ধর্ষণ করে চার দুষ্কৃতী। পর দিন ভোরে সল্টলেকের বৈশাখী আবাসনের কাছে খালপাড়ের রাস্তায় তরুণীকে ফেলে রেখে যায় তারা। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অর্ণব বেরা (২৫), শুভেন্দু নাগ (২৫) এবং সৌরভ দে (২০) নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক অন্যতম অভিযুক্ত অবশ্য এখনও পলাতক। বুধবার ধৃতদের বিধাননগর আদালতে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। ধৃতদের শনাক্তকরণের জন্য টিআই প্যারেডের আবেদন জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, যে গাড়িতে তরুণীকে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করা হয়, সেটি একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় ব্যবহার করা হয়। এমনকী গাড়ির মালিক পুলিশকে জানিয়েছে, শুভেন্দুই ওই গাড়ির চালক এবং তার কাছেই গাড়ি থাকত। রাতে এক বার তেল ভরানোর জন্য তার সঙ্গে দেখা করতেন মালিক। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় গাড়িচালকের কাজ করে সৌরভও। আর অর্ণব আলমারি কারখানায় কাজ করলেও মাঝেমধ্যেই গাড়ি চালকের কাজ করেন বলে জেনেছে পুলিশ। পাশাপাশি, ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ যাকে খুঁজছে, পাঁচ নম্বর সেক্টরে একটি সংস্থায় সে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করে বলে সূত্রের খবর।
তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের একাংশ যাতায়াত করেন অফিসের গাড়িতে, অনেকে ক্যাব বা শাট্ল গাড়িতে। কারণ, রাতে বাসের সংখ্যা কমে যায় বলে অভিযোগ। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি গাড়ি চালকেরাই ভরসা। অনেক অফিসে আবার বিভিন্ন এজেন্সির গাড়িও ভাড়া নেওয়া হয়। কিন্তু সেই সব চালক কারা, তাঁদের পরিচিতি সম্পর্কে গাড়ি মালিক বা এজেন্সি ছাড়া পুলিশ কিংবা নবদিগন্ত শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে না।
যাচাই করার উপায় থাকে না নিরাপত্তারক্ষীদের একাংশকেও। কয়েক বছর আগে নিউ টাউন থেকে এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীকে অপহরণের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল এক ট্যাক্সি চালকের। পুনে এবং বেঙ্গালুরুতেও পর পর তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের উপরে হামলা হয়। সেই সব ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছিল প্রশাসন। তখনই বহু তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা রাতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মহিলাদের সুরক্ষা জোরদার করে। মহিলাদের জন্য গাড়িতে এক জন করে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়া হয়। তবে এই সুরক্ষা ব্যবস্থা সর্বত্র নেই বলেই দাবি তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের একাংশের। তাঁদের অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীদের একটি অংশ সরাসরি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত। অফিস নির্মাণের সময়ে সিন্ডিকেট বাহিনীর চাপেই তাঁদের একাধিক লোককে নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে নিয়োগ করতে হয়।
পর পর ঘটনায় দেখা যাচ্ছে গাড়িচালক ও নিরাপত্তারক্ষীদের একটি অংশ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ পাঁচ নম্বর সেক্টরে গণধর্ষণের ঘটনা। স্বাভাবিক ভাবেই তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীদের, বিশেষত মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এ নিয়ে অবশ্য পাঁচ নম্বর সেক্টরের কর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ মূলত পুলিশ প্রশাসন দেখে। তবে পাঁচ নম্বর সেক্টরের কথা মাথায় রেখে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন। বিধাননগর কমিশনারেটের এক পুলিশ কর্তা জানান, পাঁচ নম্বর সেক্টরে সংস্থাগুলি মূলত বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে গাড়ি ও চালক নেয়। নিরাপত্তা রক্ষীদের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সংস্থা কাজ করে। ফলে সে সব এজেন্সির কাছ থেকে গাড়িচালক বা নিরাপত্তা রক্ষীদের তথ্য সংগ্রহ করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।
এ দিকে ধর্ষণের ঘটনার রেশ না মিটতে পাঁচ নম্বর সেক্টর থানা এলাকার একটি সংযুক্ত অঞ্চলে এক কিশোরীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল।