প্রায় এক বছর আগে খিদিরপুর ডকের তিন নম্বর গেট এলাকায় ডিউটি থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিওরিটি ফোর্সের (সিআইএসএফ) কনস্টেবল বিষ্ণু দাস। পাঁচ দিন পরে গঙ্গা থেকে উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। গলায় ছিল আঘাতের চিহ্ন। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থেকে পুলিশ জানতে পারে, শ্বাসরোধ করে খুন করে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল বিষ্ণুবাবুর দেহ।
আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা ওই কনস্টেবলের খুনের কিনারা করতে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয় দক্ষিণ বন্দর থানা ও বন্দর বিভাগের গোয়েন্দাদের নিয়ে। কোনও সূত্র না মেলায় চার মাস পরে সিটের হাত থেকে তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখার হাতে। বছর ঘুরতে চললেও ওই ঘটনার কিনারা এখনও হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে খবর। আরও অভিযোগ, তিন হাত বদল হওয়ার পরে তদন্ত এখন কার্যত বন্ধ।
তাতেই পুলিশের ভূমিকায় অখুশি বিষ্ণুবাবুর পরিবার। বিষ্ণুবাবুর স্ত্রী তাপসী দাসের অভিযোগ, ‘‘পুলিশের কাছে গেলেই শুনছি, তথ্যপ্রমাণ না থাকায় কাউকে গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। আমাদের কোনও পরিচিতি না থাকায় আমাদের পাশেও কেউ নেই।’’
পুলিশ জানায়, চলতি বছরের ৯ জানুয়ারির রাতে খিদিরপুর ডকের তিন নম্বর গেট এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন বিষ্ণুবাবু। পরদিন একটি শেড থেকে উদ্ধার হয় তাঁর জুতো, ব্যাগ ও সাইকেল। কিন্তু বিষ্ণুবাবুর খোঁজ মেলেনি। তাঁর পরিবার প্রথমে দক্ষিণ বন্দর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে। দেহ উদ্ধারের পরে দায়ের হয় খুনের মামলা।
বছর ঘুরতে চললেও কেন তদন্তে অগ্রগতি হল না? পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, পাঁচ দিন পরে দেহ উদ্ধার হওয়ায় এমনিতেই কিছু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি, ৯ জানুয়ারি রাতে ডিউটিতে থাকা জওয়ানেরা ছাড়াও কয়েকটি ট্রেলারও বন্দরে এসেছিল মাল খালাস করতে। পুলিশের ওই অংশের দাবি, ট্রেলারগুলির চালক ও খালাসি ছাড়া আর কে কে সেই রাতে খিদিরপুর ডকে ঢুকেছিলেন, তার তালিকা বন্দরের রক্ষীদের কাছে ছিল না।
এক গোয়েন্দা কর্তার কথায়, বিষ্ণুবাবুর সঙ্গে ডিউটিতে থাকা অন্য জওয়ান থেকে শুরু করে ডকের গেটে নথিভুক্ত থাকা ট্রেলারের চালক-খালাসিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেও সূত্র মেলেনি। এমনকী, প্রাথমিক তদন্তের পরে সন্দেহের তালিকায় থাকা এক অফিসার এবং এক বহিরাগতকে জেরা করা হলেও কোনও তথ্য হাতে আসেনি। যদিও লালবাজারের দাবি, অগ্রগতি চোখে না পড়লেও তদন্ত থেমে নেই।