ছাত্রের ‘মরণঝাঁপ’

ক্ষোভের মুখে স্কুল, হচ্ছে তদন্ত কমিটি

সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু শনিবার দুপুরে তাঁদের দেখা মাত্র ক্ষোভ উগরে দিলেন মৃত ছাত্র অনুরাগ বসাকের বাড়ির লোকজন। ভিআইপি রোডে এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অনুরাগ শুক্রবার দুপুরে স্কুলের ছ’তলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায় বলে জেনেছে পুলিশ। সেই জন্য অনুরাগের পরিজনেরা স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৫ ০০:৪২
Share:

কফিনে অনুরাগের মৃতদেহ, সামনে মা। শনিবার। ছবি: শৌভিক দে

সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কিন্তু শনিবার দুপুরে তাঁদের দেখা মাত্র ক্ষোভ উগরে দিলেন মৃত ছাত্র অনুরাগ বসাকের বাড়ির লোকজন। ভিআইপি রোডে এক ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র অনুরাগ শুক্রবার দুপুরে স্কুলের ছ’তলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়ে মারা যায় বলে জেনেছে পুলিশ। সেই জন্য অনুরাগের পরিজনেরা স্কুল কর্তৃপক্ষের গাফিলতিকে দায়ী করছেন।
মৃত স্কুলছাত্রের পরিজনেদের বক্তব্য, ব্লেড দিয়ে অনুরাগ হাত কাটার পরেও বাড়িতে খবর দেওয়া হল না কেন? তখনই বাড়িতে খবর দেওয়া হলে অনুরাগের এই পরিণতি হত না বলেই মনে করছেন তাঁরা।
তবে পরিস্থিতি সামাল দিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গড়েছেন। স্কুলের অধ্যক্ষা মৌসুমী সাহা এ দিন বলেন, ‘‘অনুরাগের মৃত্যুর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি গড়া হয়েছে।’’ অধ্যক্ষা ছাড়া কমিটিতে রয়েছেন ভাইস প্রিন্সিপাল ও টিচার কোঅর্ডিনেটর। মৌসুমীদেবীর মতে, কমিটি রিপোর্ট দেওয়ার পরেই সব কিছু পরিষ্কার হবে। আপাতত স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, হাত কাটার ঘটনাটি তাঁরা জানতেন না। তাঁদের দাবি, স্কুলের এক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অনুরাগের হাতে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেও বিষয়টি শিক্ষিকাদের কান পর্যন্ত পৌঁছয়নি। কেন ওই কর্মী শিক্ষিকাদের জানালেন না, সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য। মৌসুমীদেবী বলেন, ‘‘তদন্তে স্কুলের কারও তেমন কোনও গাফিলতি প্রমাণিত হলে প্রয়োজনে তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে।’’
পুলিশ শুক্রবারই জানিয়েছিল, স্কুল কর্তৃপক্ষ ও পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার পিছনে প্রেমঘটিত কারণ থাকার ইঙ্গিত মিলেছে। অনুরাগের সহপাঠীদের থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানতে পেরেছেন, স্কুলেরই এক ছাত্রীকে চিঠি লিখেছিল, কিন্তু ওই ছাত্রী আপত্তি জানায়। পুলি‌শের সন্দেহ, প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরেই শুক্রবার টিফিনের সময়ে অনুরাগ প্রথমে ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কাটার চেষ্টা করে। আর তার কিছুক্ষণ পরে সকলের নজর এড়িয়ে স্কুলের ছ’তলার ছাদে উঠে ঝাঁপ দেয় বলে তদন্তে জেনেছে পুলিশ।

Advertisement

বাগুইআটির জ্যাংরার চৌমাথায় অনুরাগের কাকা জীবন বসাকের বাড়ি। গোটা পরিবার এখন ওই বাড়িতেই আছে। এ দিন দুপুরে সেখানেই যান অনুরাগের স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তখনই তাঁদের দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েন জীবনবাবু।

অনুরাগ আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে মনে করলেও ওই ছাত্রের পরিবার তা মানতে নারাজ। তাঁদের দাবি, অনুরাগ বরাবর শান্ত স্বভাবের, সে সব সময়ে হাসিখুশি থাকত। তাঁদের প্রশ্ন, অত উঁচু থেকে প়ড়লেও হাতেপায়ে কেন কোনও আঘাতের চিহ্ন নেই?

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ অবশ্য জেনেছে, অনুরাগ যখন ছাদ থেকে পড়ে, তখন প্রথমে নীচে থাকা এক ছাত্রের সঙ্গে তার ধাক্কা লাগে। তার পরে মাটিতে পড়ে সে মাথায় চোট পায়। তবে ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে বলে পুলিশের বক্তব্য।

তেরো বছরের ছেলের অপমৃত্যুতে মা চামেলিদেবী শুক্রবার থেকেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ দিনও চামেলিদেবীর শারীরিক অবস্থার তেমন কোনও উন্নতি হয়নি। পুত্রশোকে কাতর মহিলার চোখ মেলে কথা বলার ক্ষমতাটুকুও নেই। ক্ষীণ স্বরে শুধু ‘বাবু বাবু’ (অনুরাগের ডাক নাম) বলে ডুকরে উঠছেন। মাঝেমধ্যেই অচৈতন্য হয়ে পড়ছেন। আপাতত বাড়িতেই চিকিৎসকেরা তাঁর দেখাশোনা করছেন। শনিবারও গোটা তল্লাটে ছিল শোকের ছায়া।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement