Amartya Sen

শান্তিনিকেতনে অমর্ত্যের ‘প্রতীচী’-র জমি বিতর্কে কলকাতায় গর্জে উঠলেন বঙ্গের বিদ্বজ্জনেরা

ব্রাত্য বসুর আহ্বানে রবিবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বাইরে হাজির হয়েছিলেন গায়ক কবীর সুমন থেকে কবি জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকাররা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ২০:৫০
Share:

কলকাতার এক প্রতিবাদ সভায় গর্জে উঠলেন বঙ্গের বিদ্বজ্জনেরা। নিজস্ব চিত্র।

শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়ির জমি বির্তকে কলকাতার এক প্রতিবাদ সভায় গর্জে উঠলেন বঙ্গের বিদ্বজ্জনেরা। আজ, রবিবার দুপুরে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বাইরে ওই সভা থেকে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বিশিষ্টজনেরা। রাজ্যের মন্ত্রী তথা নাট্যকার ব্রাত্য বসুর আহ্বানে হাজির হয়েছিলেন গায়ক কবীর সুমন থেকে কবি জয় গোস্বামী, সুবোধ সরকাররা। ছিলেন চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরীর মতো বিশিষ্টরাও।

Advertisement

বিজেপি নেতাদের একাংশ অমর্ত্য সম্পর্কে প্রকাশ্যে তির্যক মন্তব্য করছিলেন। সম্প্রতি শান্তিনিকেতনে তাঁর বাড়ি ‘প্রতীচী’ সংলগ্ন জমির একাংশ বিশ্বভারতীর বলেও দাবি করেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমর্ত্যকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিজেপি অসম্মান করছে বলে অভিযোগ তোলেন।

মুখ্যমন্ত্রীর সুরেই এ দিন বিশিষ্টজনেরা কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “অমর্ত্য সেনকে কেন অসম্মান করা হচ্ছে, বুঝতে পারছি না? 'টুকরে টুকরে গ্যাং' বলা হচ্ছে বাংলার বুদ্ধিজীবীদের। কিছু না পড়ে রাজনীতি করতে চলে আসছেন ওঁরা। বিজেপির রাজনীতির বিরোধী বলেই অমর্ত্য সেনকে এ ভাবে অসম্মান করা হচ্ছে। তাঁকে কি ভিটে থেকে উৎখাত করতে চাইছেন? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। আমার বিষয়টিকে সমর্থন জানিয়ে সরব হয়েছি।”

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘তৃণমূল-বিজেপি লড়াই কলকাতা বনাম জেলার লড়াই’, নয়া কৌশলের সুর বাঁধলেন শুভেন্দু

আরও পড়ুন: শোভনকে কলকাতা জোনের দায়িত্ব দিল বিজেপি, গুরুত্ব বৈশাখীকেও

শারীরিক ভাবে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবাদ সভায় এসেছিলেন গায়ক কবীর সুমন। তিনি বলেন, “যেটা ঘটছে, তা রাজনৈতিক বিষয়। সমর্থন করি না। আমার উদ্দেশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতানো। আপনারা কী আশা করেছিলেন, ওঁরা কী ভাল ভাল কথা বলবেন? মমতা একা যা কাজ করেছেন, তা ভাবা যায় না। মানুষ ২ টাকায় চাল পেয়েছেন।”

একই ঝাঁঝ ধরা পড়ে কবি জয় গোস্বামীর বক্তব্যেও। তিনি বলেন, “বিশ্বভারতী রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কারকে রক্ষা করতে পারেনি। দোষীদের শান্তি দেওয়া গেল না। রবীন্দ্রনাথের মতো, আরেকজন নোবেল সম্মানপ্রাপক অমর্ত্য সেনকেও সম্মান দিতে পারছে না।"

শুধু বিদ্বজ্জনেরাই নয়, প্রতিবাদ সভায় হাজির হয়েছিলেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ছাত্রছাত্রীরাও। চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন বলেন, “বাংলার সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এ এক ভয়ঙ্কর সময়। যাঁরা রবীন্দ্রনাথকে বোঝেন না, অমর্ত্য সেনের মতো মানুষদের অপমানিত করেন, তাঁরা বাংলার কিছু জানেন না। সে কারণেই আমরা পথে নেমেছি।” এ দিনের প্রতিবাদ সভা থেকে বিশিষ্টজনেরা স্পষ্ট করে দেন, আগামী দিনে বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ আরও বাড়াতে চলেছেন তাঁরা।

তবে বুদ্ধিজীবীদের এই প্রতিবাদ প্রসঙ্গে রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “অমর্ত্য সেন নয়, তৃণমূল বাঁচাও অভিযান শুরু হচ্ছে। যখন তৃণমূল ঝামেলায় পড়ে শিল্পীদের আঁকড়ে ধরে। আমি বলব যে জাহাজটা ডুবে যাচ্ছে শিল্পীরা যেন তাতে না যান, তা হলে তাঁদেরকেও ডুবতে হবে। কারণ এক বার সিপিএমের সঙ্গে ডুবেছেন। কোনও মতে ডাঙায় এসে উঠেছেন দিদির আঁচলতলে। ওই ভুল যেন তাঁরা ফের না করেন। তৃণমূল ডুবন্ত জাহাজ, মানুষ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। তাদের বাঁচানোর দায়িত্ব কে দিয়েছে আপনাদের?” রাজ্যের বিদ্বজ্জনদের প্রতি তাঁর পরামর্শ, “আপনারা সমাজের সঙ্গে থাকুন, মানুষের সঙ্কটের সময় থাকুন। যখন এখানে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়, মানুষ ভোট দিতে পারে না। দেশের সবচেয়ে বড় পার্টির সভাপতির ওপর প্রাণঘাতী হামলা হয়, তখন এঁদের আওয়াজ শুনি না আমরা। কারও আঁচলের তলায় দাঁড়িয়ে কথা বলবেন, এটা বাংলার বুদ্ধিজীবীরা কোনও দিন করেননি। এটা তাঁদের শোভা দেয় না। আর সে জন্য আমরা সম্মান পেয়েছি। বুদ্ধিজীবী মানে তাঁবেদার, বাংলার মানুষ এটা ভাবতে রাজি নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement