এনআরএস-এর সামনে মহম্মদ সুভানের (ইনসেটে) বাবা-মা।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি এক শিশুর অস্ত্রোপচারের জন্য বম্বে গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে গত শনিবার নাকানিচোবানি খেয়েছিল একটি পরিবার। হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্ক বিরল বম্বে গ্রুপের রক্ত শিশুটিকে দিতে পারেনি। বহু কাঠখড় পুড়িয়ে বম্বে গ্রুপের রক্তের দাতার সন্ধান পেয়েছিল পরিবারটি। সেই ঘটনা সংবাদ মাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছিল। তা সত্ত্বেও শিশুটির চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল কর্মীদের একাংশ এখনও সতর্ক নন, এ বার তেমনই অভিযোগ উঠল। বম্বে গ্রুপের রক্তের প্রয়োজন যে শিশুর তার রিকুইজিশন স্লিপ লেখা হল ‘ও পজিটিভ’ রক্তের জন্য। একই ভুল হল পরপর দু’ দিন ধরে।
লেকটাউনের দক্ষিণদাঁড়ির বাসিন্দা মহম্মদ সুভান নামে ১৮ দিনের ওই শিশুকে বুধবার প্লাজমা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। তার পরিবারের অভিযোগ, যে রিকুইজিশন স্লিপ তাদের হাতে ধরিয়ে হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে প্লাজমা আনতে পাঠানো হয়েছিল তাতে লেখা হয়েছিল, ‘ও পজিটিভ, টু বি কনফার্মড’!’ সেই ভুল শুধরে দেওয়া হয় হাসপাতালেরই ব্লাডব্যাঙ্কের তরফে। হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগ থেকে আসা ওই রিকুইজিশন স্লিপেই পাল্টা নোট দিয়ে লেখা হয়, ‘এই রোগীকে ইতিমধ্যে রক্ত দেওয়া হয়েছে। তার রক্তের গ্রুপ হল, বম্বে গ্রুপ। দয়া করে এ বিষয়ে নিশ্চিত হন এবং সেই মতো রিকুইজিশন স্লিপ লিখুন’।
অভিযোগ এর পরেও হাসপাতালের শিশুরোগ বিভাগ সতর্ক হয়নি। ফলে একই ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার। এ দিনও শিশুটির প্লাজমার জন্য রিকুইজিশন স্লিপে বম্বের বদলে চাওয়া হয় ও পজিটিভ গ্রুপের রক্ত। এবং প্লাজমার বদলে লেখা হয় আরবিসি। এ বার ভুল ধরা পড়ে রক্তদান আন্দোলনের কর্মী দীপঙ্কর মিত্র এবং শিশুর রক্তদাতা মৃদুল দলুইয়ের জন্য। তাঁরা হাসপাতালে এসে ওই ত্রুটিপূর্ণ রিকুইজিশন স্লিপ দেখে সমস্যার কথা বুঝতে পারেন।
গত ৩ এপ্রিল পেটে সংক্রমণ নিয়ে সুভানকে এনআরএসে ভর্তি করানো হয়। শনিবার অস্ত্রোপচারের আগে রক্তের প্রয়োজন হলে নমুনা পরীক্ষা করে জানা যায় শিশুটির রক্তের গ্রুপ হল, ‘বম্বে গ্রুপ’। কিন্তু এনআরএস-সহ শহরের কোনও ব্লাডব্যাঙ্কেই সুভানের জন্য সেই রক্ত পায়নি তার পরিবার। শেষে কোনও ভাবে দীপঙ্করবাবুর মাধ্যমে শিশুটির পরিবার বম্বে গ্রুপের রক্তদাতা মৃদুল দলুইকে খুঁজে পায়। গত রবিবার মৃদুলবাবু এনআরএসের ব্লাডব্যাঙ্কেই রক্ত দেন শিশুটির জন্য।
শিশুটির বাবা মহম্মদ আসলামের ক্ষোভ, ‘‘কোনও ভাবে ভুল গ্রুপের রক্ত চলে গেলে সর্বনাশ হয়ে যেত। একই ভুল কেন বারবার হবে?’’ প্রয়োজনীয় সংশোধনীর পরে প্লাজমা সংগ্রহ করে শিশুবিভাগে জমা করেন তাঁরা। এ দিনও আরও এক ইউনিট প্লাজমার দরকার পড়ে। মৃদুলবাবুর দেওয়া রক্তে সংগৃহীত প্লাজমা না থাকায় আসলামদের এখন নতুন রক্তদাতার প্রয়োজন। হাসপাতালের সুপার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঠিক কী হয়েছে খোঁজ নিয়ে দেখব। শিশুটির রক্তের জন্য পাথরপ্রতিমা এবং হুগলির দু’জন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।’’