সভার সময়েই পানীয় নিয়ে বসল আসর। শুক্রবার। —নিজস্ব চিত্র।
মালবাহী ছোট লরির ডালা তুলে দিয়ে তার মধ্যে বসেছেন পাঁচ জন। কৌটোয় বিরিয়ানি আর মাংস। এক জন চোখ টিপে ইশারা করতেই অন্য জন দ্রুত একটি বোতল বার করলেন। এক হাতে ধরা অর্ধেক ভর্তি জলের গ্লাসে সেই বোতল থেকে ঢালা হল তরল। যিনি ইশারা করেছিলেন, সোৎসাহে তিনি বললেন, ‘‘বৃষ্টি আর মাংস তো আছেই, আর এটা চাই। মিটিং জমে গিয়েছে!’’
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ এই দৃশ্য চোখে পড়ল ২১ জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে সামান্য দূরে, একটি পাঁচতারা হোটেলের ঠিক উল্টো দিকে। তখনও মঞ্চে তৃণমূলের প্রথম সারির কোনও নেতা বক্তব্য রাখেননি। একের পর এক নেতা মঞ্চে উঠছেন বলে ঘোষণা হচ্ছে। যে লরিতে এই দৃশ্য, তার আশপাশ জুড়ে তখন উৎসবের মেজাজ। কেউ লরির মাথায় বসে নিজস্বী তুলে চলেছেন, কেউ পতাকা ওড়াচ্ছেন। চোখে-মুখে রং মেখে নেচে চলেছেন কেউ কেউ। তার মধ্যেই কোনও কোনও লরি এবং বাসের ভিতরে মাংস-ভাত খাওয়া চলছে। কোনওটিতে বিপজ্জনক ভাবে গ্যাস আভেন জ্বেলে চলছে রান্না। যা দেখে স্থানীয় এক দোকানি বলে উঠলেন, ‘‘এক দিকে সভা চলছে, আর এ দিকে মদ-মাংস নিয়ে মোচ্ছব!’’
সভায় এসে এ সব কী? লরিতে বসা এক যুবককে প্রশ্নটা করতেই তাঁর উত্তর, ‘‘আমাদের এলাকার নেতারাই এই আনন্দের ব্যবস্থা রেখেছেন। এতে দোষ কোথায়?’’ পাশেই দাঁড়ানো আর এক জনের বক্তব্য, ‘‘আমাদেরই পেলেন? খুঁজলে দেখবেন, বহু লরি, বাসেই এটা চলছে।’’ এর পরে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ওই দলের নেতা যুক্তি দিলেন, ‘‘অনেক ধরনের মানুষ সভায় আসেন। সকলেই তো সমান হন না।’’ কিছুটা দূরে পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলেও দেখা গেল, একটি বাসের ভিতরে একই জিনিস চলছে। সেখানে মদের সঙ্গে আবার রয়েছে অন্য নেশার দ্রব্য। কাছেই দাঁড়ানো এক পুলিশকর্মীকে ডেকে বিষয়টি জানাতেই বললেন, ‘‘এ সব হয়েই থাকে। অভিযোগ থাকলে স্যরকে গিয়ে বলুন।’’ ‘স্যর’ অবশ্য তখন ভিড় সামলাতে ব্যস্ত।
উড়ালপুল ধরে কিছুটা এগোতেই চোখে পড়ল, সিগারেট ধরিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছেন একদল যুবক। দু’জনের গলায় ঝুলছে শুকিয়ে যাওয়া গাঁদার মালা। প্রত্যেকেরই পা টলছে। মঞ্চে তত ক্ষণে বক্তৃতা শুরু করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই দলের এক জন অসংলগ্ন ভাবে পাশের গাড়ির লোকজনকে বললেন, ‘‘প্রথমে ভিক্টোরিয়া, তার পরে ইডেন ঘুরে এখন সভায় যাচ্ছি।’’
ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট চত্বরের এই সব দৃশ্য ময়দানে দাঁড় করানো বাস, লরির ভিড়ের মাঝেও। বাদ যায়নি অনেক দূরের শিয়ালদহ চত্বরও। সেখানে বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ দেখা গেল, দু’টি বাসের মাঝের অংশে পাত পেড়ে খাওয়া চলছে। একাধিক মদের বোতল সাজিয়ে রাখা। কিছুটা এগোতেই একটি বাসের ভিতরে তাস খেলার মাঝে চলছে নেশার আসর। সভায় যাবেন না? বাসের জানলা দিয়ে উড়ে আসা প্রশ্ন শুনেই শুরু হল প্রবল লুকনোর তৎপরতা। এক জন কোনও মতে বললেন, ‘‘হাজিরা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ বার নিজেরা একটু বসেছি!’’