আগ্রহ: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা শুনছেন কর্মীরা। বুধবার, বি বা দী বাগের একটি দোকানে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
রাজ্যে এখনও পর্যন্ত সিকল সেল অ্যানিমিয়ায় নথিভুক্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১১০০ থেকে ১২০০-র মধ্যে। কিন্তু গোপনে এই রোগ কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে তা জানতে বেশি সংখ্যক পরীক্ষার প্রয়োজন বলেই মত চিকিৎসকদের। এ বারেরকেন্দ্রীয় বাজেটেও জোর দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়ে। বুধবার ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষের বাজেট পেশের সময়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ২০৪৭ সালের মধ্যে সিকল সেল অ্যানিমিয়া দূরীকরণ কর্মসূচির সূচনা করেন।
কী এই সিকল সেল অ্যানিমিয়া? এটি হল লোহিত রক্তকণিকার বিশেষ রোগ। যার জেরে রোগী রক্তাল্পতার শিকার হন। বংশগত এই রোগে গোলাকার লোহিতকণিকা কাস্তের মতো আকৃতি ধারণ করে। তার ফলে শরীরে রক্ত সংবহনে বাধা তৈরি হয়ে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়।
এই রোগ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, রোগাক্রান্ত আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় সদ্যোজাত থেকে ৪০ বছর বয়সি সাত কোটি মানুষের পরীক্ষা করা এবং রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থাও এইকর্মসূচির অধীন হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী। রাজ্যের চিকিৎসকদেরমতে, বঙ্গে এই রোগের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি দেখা না গেলেও, আছে। সে ভাবে চিহ্নিতকরণ কর্মসূচি না থাকায় রোগটা গোপনেই রয়ে গিয়েছে। ঝাড়খণ্ড সীমানা ঘেঁষা এ রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলায় সিকল সেল অ্যানিমিয়ার কিছুটা প্রকোপ রয়েছে। তবে ওড়িশা, ছত্তীসগঢ়, গুজরাত, মহারাষ্ট্রে রক্তের এই রোগের প্রকোপ বেশি।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসকতুফানকান্তি দোলুই বলেন, ‘‘এই রোগ প্রাণঘাতী। তবে লক্ষ্য স্থির করে দূরীকরণের কর্মসূচি নিলে অনেক উপকার হবে। গোটা প্রকল্পে বেশি জোর দিতে হবে বাহক চিহ্নিতকরণের কাজে। সেটা করা গেলে, রোগ প্রতিরোধ সহজ হবে।’’ আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় এই রোগভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করে ২০১৫ সালে সব রাজ্যকে চিঠি পাঠিয়ে সতর্ক করেছিলআদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রক। হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই প্রথম কোনও একটিজনস্বাস্থ্যের বিষয় বাজেটে উঠে এল। যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সিকল সেল অ্যানিমিয়া ও থ্যালাসেমিয়া চিহ্নিতকরণের পদ্ধতি একই রকমের। দু’টি রোগই বংশ পরম্পরায় ছড়ায়।’’ তিনি আরও জানান, সিকল সেল অ্যানিমিয়া চিহ্নিত করতে গেলেই রক্তের অন্যান্য রোগ সহজে জানা যাবে। জোরদার কর্মসূচি শুরু হলে সচেতনতা আসবে। এই রোগকে যে আটকানোও সম্ভব, সেটা জানা যাবে।
বাজেটে বলা হয়েছে, ২০১৪ থেকে এখনও পর্যন্ত দেশে যে ১৫৭টি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে, সেখানে নতুন করে নার্সিং কলেজ তৈরি করা হবে। পাশাপাশি ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এ জোর দিয়ে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ বৃদ্ধিতেও জোর দেওয়া হয়েছে। তাই পিপিপি মডেলে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর) -এর অধীনস্থ গবেষণা কেন্দ্রগুলিকে বিস্তৃত করা হবে। যাতে সরকারি ও বেসরকারি স্তরের গবেষকেরা সেখানো যোগ দিতে পারেন। ওষুধপ্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে বলা হয়েছে, গবেষণায় জোর দিতে এবং আরও বিনিয়োগ বাড়াতে।