পোষ্যদের গায়ে রঙের প্রভাব কী হতে পারে? প্রতীকী ছবি।
কুকুরটির নাকের উপর থেকে কপাল পর্যন্ত রঙের তিলক। রঙের ছিটে লেগেছে চোখেও। তার পিঠের দিকে আবার লেগে আলাদা আলাদা রং। এমনই অবস্থা যে, তাকে কুকুর বলেই চেনা দায়!
গত বছর দোলের দিন ‘আনন্দের’ নামে এমন একাধিক ছবি দেখা গিয়েছিল শহরের আনাচকানাচে। রঙের উৎসবের নামে পথকুকুরদের গায়ে রং দেওয়ার পরে বহু এলাকায় তাদের অনেকেরই ত্বকের সমস্যা দেখা দেয় বলে অভিযোগ। এ বছর কি বন্ধ হবে সেই প্রবণতা? বিনোদনের নামে পথপশুদের হেনস্থার কাহিনি কি আটকানো যাবে? দোলের দিন দু’য়েক আগে এই প্রশ্ন ঘুরছে শহরের পশুপ্রেমীদের মধ্যে। যদিও এ বছর এই ছবি যে আদৌ বদলাতে পারে, সেই আশার আলো দেখছেন না প্রায় কেউই। উল্টে, দোলের দিন দশেক আগে থেকেই শহরে এমন প্রবণতা দেখা গিয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য পুলিশের গা-ছাড়া মনোভাবের পাশাপাশি শহরবাসীর একটি বড় অংশের মধ্যে সচেতনতার অভাবকেই দায়ী করছেন পশুপ্রেমীরা। বেলগাছিয়ার বাসিন্দা মোনালিসা পাত্রের কথায়, ‘‘বাড়ির পোষ্যের পাশাপাশি পথকুুকুরদের গায়ে যে রং দেওয়া যায় না, এটা তো একটা শিক্ষা। কিন্তু এটা মানবে কে? ওদের গায়ে রং দেওয়া যে অপরাধ, এটা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে পুলিশ কি আদৌ কখনও কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে?’’ লালবাজারের এক পুলিশকর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘এটা অবশ্যই সচেতনতার ব্যাপার। সব কিছু কি লাঠি উঁচিয়ে, ভয় দেখিয়ে আটকানো যায়? তবে দোলের আগে প্রতিটি ডিভিশনকেই সমস্ত ধরনের অপরাধ আটকাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’
পোষ্যদের গায়ে রঙের প্রভাব কী হতে পারে? চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, সাধারণত বাজারচলতি রঙের মধ্যে ক্ষতিকর রাসায়নিক ও সিসা থাকে, যা পোষ্যদের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক। এর ফলে অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ত্বকের নানা রোগ, এমনকি বমি, ডায়েরিয়া পর্যন্ত হতে পারে। শহরের একটি পশু হাসপাতালের চিকিৎসক বললেন, ‘‘সব থেকে বেশি ক্ষতি হয় ছোট লোম থাকা কুকুর-বেড়ালদের। আর পথকুকুরদের অধিকাংশের শরীরে যে হেতু নানা ত্বকের সমস্যা থাকে, ফলে রং লাগানো হলে তা পরবর্তী কালে অ্যালার্জি-সহ একাধিক রোগের জন্ম দেয়।’’
পশু চিকিৎসক দীপককুমার দে বলেন, ‘‘কুকুর, বেড়ালের শরীরে ঘাম হয় না। ফলে, রং দ্রুত ওদের ত্বকের ভিতরে চলে যায়। যার ফলে অ্যালার্জি থেকে শুরু করে ত্বকের একাধিক রোগ হয়।’’
পশু চিকিৎসক অভিরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পোষ্যদের গায়ে রং লাগালে তাতে মুখ দেওয়ার প্রবণতা থাকে ওদের। ফলে ক্ষতিকারক রং ওদের পেটেও চলে যায়। এতে পেটের একাধিক সমস্যা তৈরি হয়। এ ছাড়া, অ্যালার্জি থেকে শুরু করে চোখে রং গেলে চোখ নষ্ট পর্যন্ত হতে পারে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘পরবর্তীকালে চিকিৎসা করানোর চেয়ে পোষ্যদের গায়ে রং দেওয়া আটকানোটাই সব থেকে বেশি জরুরি। এর জন্য সচেতনতা বাড়ানো দরকার।’’