বন্ধ: এখনও উদ্বোধন হয়নি হাওড়ার এই তারামণ্ডলের। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
ঠিকাদার সংস্থাকে এখনও বকেয়া টাকা দিতে পারেনি পুরসভা। তাই এই শীতেও হাওড়ার ‘আকাশে’ গ্রহ-নক্ষত্রের দেখা মিলবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে উৎসাহীরা।
কারণ, কাজ শেষ হওয়ার প্রায় দশ মাস পরেও তালা খোলেনি রাজ্যের দ্বিতীয় এবং হাওড়ার প্রথম তারামণ্ডল! হাওড়া ময়দান এলাকায় শরৎ সদনের পাশেই প্রায় ১৪ কোটি ব্যয়ে তৈরি হয়েছে স্ক্রিনিং প্রযুক্তির এই ‘ফোর কে’ তারামণ্ডল। শীতের মরসুমেও সেটির উদ্বোধন না হওয়ায়, নকল মহাকাশ এখনও দেখা হল না হাওড়াবাসীর। পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘তারামণ্ডলের উদ্বোধন করা হলেই ঠিকাদার বকেয়া টাকা চাইবেন। সেই টাকার কিছুটা মেটানোর পরেই স্থির হবে তারামণ্ডল খোলার তারিখ।’’
বিনোদনের একাধিক ব্যবস্থা কলকাতায় থাকলেও, তার যমজ শহর এ সব থেকে প্রায় ব্রাত্য। বাম আমলে তৈরি হাওড়া ময়দান এলাকায় শরৎ সদন এবং বালিতে রবীন্দ্র ভবন ছাড়া উন্নতমানের কোনও সরকারি প্রেক্ষাগৃহও নেই। সেগুলিও রক্ষণাবক্ষণের অভাবে বেহাল হয়েছিল। ২০১৫ সালে হাওড়া পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী শরৎ সদনকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেন। অন্য দিকে, হাওড়ার সঙ্গে বালি পুরসভা সংযুক্ত হওয়ার পরে রবীন্দ্র ভবনের সংস্কারেও হাত দেন পুর কর্তৃপক্ষ।
হাওড়া পুরসভা সূত্রের খবর, শরৎ সদনের সংস্কারের পাশাপাশি কলকাতার বিড়লা তারামণ্ডলের থেকেও প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত আরও একটি তারামণ্ডল তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেই মতো ১৪ কোটি টাকা খরচে শরৎ সদন প্রেক্ষাগৃহ চত্বরেই কিছুটা জমি নিয়ে হাওড়া তারামণ্ডল তৈরির কাজ শুরু হয়। সিদ্ধান্ত হয় ওই তারামণ্ডলে প্রতিদিন ১০টি করে শো হবে। বাংলা, ইংরাজি ও হিন্দি ভাষায় হবে সেই শো। প্রতিটি শো-ই হবে ২৪ মিনিটের।
ওই তারামণ্ডলে ফ্রান্সের একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থার প্রোজেকশন যন্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সে কাজে দু’টি সমস্যা দেখা দেয়, যার জন্য দীর্ঘদিন এই তারামণ্ডলের কাজ শেষ করা যায়নি। প্রথমত, কী ভাবে যন্ত্রটি বসানো হবে তা নিয়ে আর্থিক টানাপড়েন চলে। দ্বিতীয় সমস্যা হয় তারামণ্ডলের
রক্ষণাবেক্ষণে ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ নিয়ে। তবে প্রায় ১০ মাস আগে সেই সব মিটে গেলেও ওই ফরাসি ঠিকাদার সংস্থার বকেয়া টাকা মেটানো নিয়ে সমস্যা থেকে যায়।
পুরসভা সূত্রের খবর, কাজ শেষ হয়ে গেলেও ঠিকাদার সংস্থার টাকা গত ১০ মাস ধরে মেটাতে পারেনি তারা। এই অবস্থায় কী ভাবে তারামণ্ডলের উদ্বোধন হবে, তা নিয়েই আতান্তরে পড়েছেন পুর কর্তারা। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখনও সাড়ে তিন কোটির বেশি টাকা পাবে ওই সংস্থা। সেই টাকার কিছুটা অন্তত না মিটিয়ে তারামণ্ডল উদ্বোধন করা যাচ্ছে না।’’ এ বিষয়ে হাওড়া পুরসভার কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ বলেন, ‘‘চেষ্টা করছি ঠিকাদার সংস্থার বকেয়া টাকার কিছুটা মিটিয়ে দ্রুত তারামণ্ডল উদ্বোধন করার।’’