ফাইল চিত্র।
হাওড়া পুরসভার ভাঁড়ারে টান। তাই ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচির জন্যও সাহায্য নিতে হচ্ছে ‘কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ বা কেএমডিএ-র। সেই তালিকায় ভাঙা রাস্তার মেরামতি থেকে নিকাশিও রয়েছে। পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, দোরগোড়ায় নির্বাচন। রাস্তাঘাট থেকে নিকাশি— সব কিছুরই হাল শোচনীয়। অথচ, নাগরিক পরিষেবার উন্নতির জন্য যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন, তা পুরসভার হাতে নেই। তাই কেএমডিএ-র হাতেই এই কাজের তালিকা তুলে দেওয়া হয়েছে।
হাওড়া পুরসভা এলাকায় ‘পাড়ায় সমাধান’ কর্মসূচিতে ইতিমধ্যেই শয়ে শয়ে অভিযোগ পুরসভার দফতরে জমা পড়েছে। তার মধ্যে বেশির ভাগ অভিযোগই রাস্তাঘাট, আলো, নিকাশি ও পানীয় জলের সমস্যা সংক্রান্ত। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, তাদের দফতরে জমা পড়া কয়েকশো অভিযোগের মধ্যে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ৩৬টি প্রকল্পের কাজ অবিলম্বে শুরু করার জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কোন কোন জায়গায় কাজগুলি হবে, তা-ও ইতিমধ্যে চূড়ান্ত করে ফেলেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। কাজের সেই তালিকা কেএমডিএ-র কাছেও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই সেই সমস্ত কাজ শুরু হবে বলে হাওড়া পুরসভা ও কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে। ভোটের আগে রাস্তাঘাট, নিকাশি ও পানীয় জলের পাইপলাইন বসানোর মতো কাজ হয়ে গেলে শহরের নাগরিক পরিষেবার হাল কিছুটা ফিরবে বলেই মনে করছেন পুরকর্তারা।
হাওড়া পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ৩৬টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে আটটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মেরামতি, ২০টি এলাকার নিকাশি সংস্কার, পাঁচটি জায়গায় আলো লাগানো এবং তিনটি এলাকায় পানীয় জল সরবরাহের পাইপলাইন বসানোর কাজ। কেএমডিএ ইতিমধ্যেই পদ্মপুকুরে জল উৎপাদনের নতুন একটি প্রকল্প চালু করেছে। কিন্তু পুরসভার বিভিন্ন সংযুক্ত ওয়ার্ডে (যেমন ৪৮, ৪৯ ও ৫০) এখনও পর্যন্ত পানীয় জলের পাইপলাইন না বসায় জল থাকলেও তা মানুষকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনই তিনটি এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে মধ্য ও দক্ষিণ হাওড়ায়।
হাওড়া পুর এলাকায় রাস্তাঘাট ও নিকাশির বেহাল দশা নিয়ে বাসিন্দাদের ক্ষোভ দীর্ঘদিনের। ভোটের মুখে যদি কোনও কাজ না হয়, তা হলে তার প্রতিফলন যে ভোটবাক্সেও পড়তে পারে, হাওড়ার শাসক দলের নেতারা তা বিলক্ষণ জানেন। তাই তাঁরাও দফায় দফায় পুর কর্তৃপক্ষকে এই কাজ শুরু করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাই শেষ পর্যন্ত কেএমডিএ-কে দিয়ে কিছু কাজ করাতে উদ্যোগী হয়েছে পুরসভা।
এত দিন রাস্তা, নিকাশি বা পানীয় জলের পাইপলাইন বসানোর মতো কম টাকার কাজ পুরসভাই করত। কেএমডিএ সাধারণত অনেক বেশি টাকার বড় বড় প্রকল্পগুলির কাজ করত হাওড়ায়। পুরসভা সূত্রের খবর, তাদের রাজস্ব আদায় এবং দেনার পরিমাণ এমনই জায়গায় পৌঁছেছে যে, এই মুহূর্তে কোনও কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। পুরসভা সূত্রের খবর, ঠিকাদারদের কাছে বকেয়ার পরিমাণ ১৭৫ কোটি টাকারও বেশি। বিভিন্ন ক্ষেত্রের চুক্তিভিত্তিক কর্মীরাও সময়মতো বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। এমনকি, গত চার মাস ধরে চুক্তিভিত্তিক স্বাস্থ্যকর্মীরা বেতন না পাওয়ায় ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণের কাজও বন্ধ। হাওড়া পুরসভার এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘ঠিকাদারেরা কাজ করতে না চাওয়ায় এবং পুরসভার আর্থিক পরিস্থিতির কথা ভেবেই কেএমডিএ-কে কাজগুলি দেওয়া হয়েছে। তবে পুরসভাও নিজস্ব টাকায় কিছু ছোট কাজ করছে। ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্পে নাগরিকদের দাবি সামাল দিতে এ ছাড়া কোনও উপায় নেই।’’