ভোগান্তি: এসএসকেএমে জমা জলের মধ্যে দিয়েই নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রোগীকে।ছবি:রণজিৎ নন্দী।
দৃশ্য ১: ফুসফুসের জটিল সমস্যা নিয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এক প্রৌঢ়। চিকিৎসকেরা বলেছেন, একাধিক শারীরিক পরীক্ষা প্রয়োজন। সে জন্য বারবার হাসপাতালের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ট্রলিতে করে নিয়ে যেতে হচ্ছে ওই রোগীকে। হাসপাতালের কোনও কর্মী অবশ্য সঙ্গে নেই। দূর সম্পর্কের দুই আত্মীয়ই ট্রলি ঠেলে প্রৌঢ়কে নিয়ে যাচ্ছেন। বৃষ্টিতে হাসপাতালের ভিতরের রাস্তায় জল জমেছে। তার উপরে মেন বিল্ডিং থেকে বেরিয়েই রাস্তায় বিশাল এক গর্ত। সেখানে ঢুকে যাচ্ছে ট্রলির চাকা। যার জেরে রোগীর নাক থেকে কয়েক বার অক্সিজেনের নলও খুলে গিয়েছে।
দৃশ্য ২: আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা কেয়ার থেকে রোগীকে নিয়ে যেতে হবে জরুরি বিভাগে। রাস্তা এমনিতেই সরু, তার উপরে দু’পাশে চলছে নির্মাণ। ফলে গাড়ি চালানো কঠিন। অন্য দিকে, রাস্তার মাঝের গর্তে অ্যাম্বুল্যান্সের চাকা ঢুকে যাচ্ছে। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে রোগীকে নামিয়ে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন পরিজনেরা।
দৃশ্য ৩: কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘গ্রিন বিল্ডিং’ চত্বরে নির্মাণকাজ চলছে। তার আবর্জনা জমছে রাস্তার দু’পাশে। এক দিকে ভাঙা রাস্তা, অন্য পাশে আবর্জনার স্তূপ পেরিয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন রোগীরা। গ্রিন বিল্ডিং থেকে কয়েক পা হেঁটে ইডেন ভবনের সামনে রাস্তার মাঝখানে বিশাল গর্ত। নিকাশি ব্যবস্থায় গোলমালের জেরে ওই গর্ত হয়ে রয়েছে। বিপদ এড়াতে অতি সাবধানে পথ চলতে হচ্ছে প্রসূতিদের। আর ট্রলিতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে হয়রানি আরও বাড়ছে।
আরজি করে এবড়োখেবড়ো রাস্তায় জমে রয়েছে বৃষ্টির জল।ছবি:রণজিৎ নন্দী
কলকাতার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ধরা পড়ল এমনই টুকরো ছবি। হাসপাতাল চত্বরের রাস্তার বেহাল দশার জেরে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন রোগী ও পরিজনেরা। তার উপরে বর্ষায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
কলকাতার অধিকাংশ সরকারি হাসপাতাল-চত্বরের রাস্তা অপরিসর। মূল ফটকের সামনের রাস্তা ছাড়া বাকি রাস্তায় পাশাপাশি দু’টি অ্যাম্বুল্যান্সও রাখা যায় না। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে রোগীকে নামিয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি করাই হোক বা চিকিৎসার জন্য এক বিভাগ থেকে অন্য বিভাগে রোগীকে ট্রলিতে করে নিয়ে যাওয়া— অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাসপাতালের প্রশিক্ষিত কর্মীদের পাওয়া যায় না বলেই অভিযোগ রোগীর আত্মীয়দের। বাধ্য হয়ে রোগীকে ট্রলিতে চাপিয়ে হাসপাতালের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত পর্যন্ত খুঁজে নিয়ে যেতে হয় তাঁদেরই। তার উপরে রাস্তার এমন অবস্থায় দুর্দশা চরমে উঠেছে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, যাতায়াতের হয়রানি তো আছেই। এর সঙ্গে বারবার হোঁচট খাওয়া, ঝাঁকুনি বা আশঙ্কাজনক রোগীর অক্সিজেনের নল খুলে যাওয়ার মতো ঘটনা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ঝাঁকুনির জেরে অস্ত্রোপচার হওয়া রোগী অথবা প্রসূতির বড় বিপদ হতে পারে। তার উপরে রোগীর সঙ্গে কোনও প্রশিক্ষিত কর্মী না থাকায় সমস্যা আরও বাড়ছে।
কলকাতার অধিকাংশ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দরজা-জানলা থেকে শুরু করে ভবনের দেওয়াল ঝকঝক করছে নীল-সাদা রঙে। তা হলে রাস্তার এমন দশা কেন?
রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলেন, ‘‘হাসপাতাল চত্বরের ভিতরে রাস্তার অবস্থা সত্যিই আশঙ্কার। যা রোগী পরিষেবায় সমস্যা তৈরি করছে। বিশেষত, ট্রলিতে যাতায়াত খুবই বিপজ্জনক হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টির দিকে নজর দিচ্ছেন। পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গেও কথা হচ্ছে।’’ পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কোথায় কোথায় সমস্যা আছে, তা নজরে রয়েছে। তবে লাগাতার বৃষ্টিতে কিছু জায়গায় সাময়িক ভাবে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। দ্রুত মেরামতি হয়ে যাবে।’’