প্রতীকী ছবি।
কারও অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা পেতে হলে অপেক্ষার নিদান দিয়েছিলেন চিকিৎসক। কারও অভিযোগ, হাসপাতালে চার ইউনিটের বদলে মিলেছিল এক ইউনিট রক্ত। রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির বিরুদ্ধে ‘দিদিকে বলো’য় দায়ের হওয়া এমন অসন্তোষের কারণ জানতে চেয়ে এ বার ফোন করছেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের আধিকারিকেরা। বিধানসভা ভোটের আগে ওই সব অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে রোগীর পরিজনকেই ফোন করছেন তাঁরা।
লোকসভা ভোটের পরে গত জুলাইয়ে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই বিভিন্ন সময়ে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অসন্তোষের কথা জানিয়েছেন রোগীর পরিজনেরা। এ বার সেই অভিযোগের নিষ্পত্তির লক্ষ্যেই ফোন করে বিশদে জানতে চাওয়া হচ্ছে।
গত ২ মার্চ এই সংক্রান্ত একটি কর্মশালার আয়োজন করেছিল স্বাস্থ্য ভবন। পরের দিনই কোমর বেঁধে নামেন কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ-সহ রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের আধিকারিকেরা। কোন সরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ‘দিদিকে বলো’য় কতগুলি অভিযোগ জমা পড়েছে, সেই সংক্রান্ত পরিসংখ্যান জানানো হয়েছিল কর্মশালায় উপস্থিত হাসপাতাল আধিকারিকদের। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সেই তালিকায় শীর্ষে ছিল এসএসকেএম। এসএসকেএমের নামের পাশে অভিযোগের সংখ্যা লেখা ছিল ২০২টি। এন আর এস, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে জমা পড়া অভিযোগের সংখ্যা দেখিয়েছিল যথাক্রমে ৪৩, ৫২, ৭০ এবং ১৪টি। ‘দিদিকে বলো’র মাপকাঠিতে মেডিক্যাল কলেজগুলির তুলনায় জেলা, মহকুমা, ব্লক স্তরের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের সংখ্যা অনেক বেশি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।
শহরের সরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, রোগীর চাপের তুলনায় অপ্রতুল পরিকাঠামো নিয়ে তাঁরাই বা কী করবেন! জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, ‘‘এখানে মেঝেতেও রোগী রাখতে হয়। তাঁদের দেখভালের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী কোথায়!’’ জেলার আর এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকের আক্ষেপ, ‘‘এখন অনেক চিকিৎসা সরঞ্জাম এসেছে। কিন্তু যেখানে রোগীর সংখ্যা বেশি, সেখানে সরঞ্জাম নেই। ৬৫০ শয্যার হাসপাতালে মাত্র দু’জন ল্যাব টেকনিশিয়ান! ডেঙ্গির মরসুমে হিমশিম অবস্থা।’’
‘দিদিকে বলো’য় জমা পড়া অভিযোগ বাছাইয়ের পদ্ধতি কী? স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশ জানান, ‘দিদিকে বলো’য় আসা গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগগুলি পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনে। স্বাস্থ্য অধিকর্তার কাছে জমা পড়া অভিযোগ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে পাঠানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার কার্যালয় অভিযোগ পাঠিয়ে দিচ্ছে সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল কলেজের সুপারের কাছে। শহরের একটি মেডিক্যাল কলেজের আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৪৩। পরের দিন পোর্টাল খুলে দেখি, সংখ্যা বেড়ে ৬৬ হয়ে গিয়েছে!’’
‘দিদিকে বলো’য় কী ধরনের অভিযোগ জমা পড়েছে?
স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, এন আর এসের ইউরোলজি বিভাগের বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ ঘোষ নামে এক ব্যক্তির অভিযোগ, তিন মাস ধরে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়নি। অস্ত্রোপচার কবে হবে, তা জানতে চাইলে ওই বিভাগের চিকিৎসক জানিয়েছেন, সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা পেতে অপেক্ষা করতে হবে। অসুবিধা হলে বাইরে থেকে করিয়ে নিতে পারেন। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে বাইরে থেকেই অস্ত্রোপচার করিয়েছেন বলে অভিযোগে জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু। দেবেন মণ্ডল নামে আর এক অভিযোগকারী আবার এসএসকেএমের আইসিইউয়ে শয্যা না পেয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের বিরুদ্ধে এক রোগীর অভিযোগ, চিকিৎসক চার ইউনিট রক্তের ‘রিকুইজ়িশন’ দিলেও মিলেছে মাত্র এক ইউনিট রক্ত।