দালাল পেটাল রোগীর পরিবার

দু’টাকার আউটডোর টিকিটের জন্য ৫০০ টাকা দাবি করেছিল দালাল। ডাক্তার দেখাতে আরও ৫০০। হুমকি দিয়েছিল, টাকা না দিলে অপেক্ষাই সার হবে, ডাক্তারের দেখা মিলবে না। ঘাবড়ে গিয়ে অনেকে টাকা দিয়ে দেন। কিন্তু তা করেননি হাওড়ার নলপুরের অসীমা সাঁতরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:০৪
Share:

দু’টাকার আউটডোর টিকিটের জন্য ৫০০ টাকা দাবি করেছিল দালাল। ডাক্তার দেখাতে আরও ৫০০। হুমকি দিয়েছিল, টাকা না দিলে অপেক্ষাই সার হবে, ডাক্তারের দেখা মিলবে না। ঘাবড়ে গিয়ে অনেকে টাকা দিয়ে দেন। কিন্তু তা করেননি হাওড়ার নলপুরের অসীমা সাঁতরা। উল্টে দালালকে হাতেনাতে ধরে, কিল-চড়, জুতোপেটা করে পুলিশে দিয়েছেন। লিখিত অভিযোগও জানান। ঘটনাস্থল রাজ্যের সরকারি স্নায়ু চিকিৎসার অন্যতম কেন্দ্র বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজি (বিআইএন)।

Advertisement

সোমবার দুপুরের এই ঘটনা গোপন রাখতে চেয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মঙ্গলবারই এ নিয়ে চর্চা শুরু হয় হাসপাতাল চত্বরে। আউটডোরে টিকিটের লাইনে দাঁড়ানো রোগীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দালালচক্র রুখতে হাসপাতাল কেন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না, কেন বাড়ানো হচ্ছে না পুলিশি টহল, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কৈফিয়ত দাবি করেন তাঁরা। বিআইএন-এর কিছু চিকিৎসকও বিক্ষোভ সমর্থন করেন। যদিও অধিকর্তা মঞ্জু বন্দ্যোপাধ্যায় কোনও মন্তব্য করেননি। হাসপাতালের এক প্রবীণ চিকিৎসক বলেন, ‘‘দালালের অত্যাচার রোজের ঘটনা। কর্তৃপক্ষ সব জানেন। কিন্তু রোগীদের সতর্ক করতে কিছু বোর্ড ঝোলানো ছাড়া কার্যত কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না। পুলিশ ফাঁড়ি থাকলেও পুলিশও এ ব্যাপারে নির্বিকার। তাতেই দালালেরা সাহস পেয়ে যাচ্ছে।’’

দশ বছরের ছেলেকে নিয়ে সোমবার বিআইএন-এ আসেন অসীমাদেবী। সকাল ৭টা থেকে আউটডোরে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কাটতে সাড়ে ১১টা বেজে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘লাইনে দালালের উৎপাতের কথা শুনি। বুঝতে পারিনি, কারণ এখানে আমি আগে যাইনি। পরে দেখি পিছনের লোকজনকে আগে যেতে দেওয়া হচ্ছে। লাল-কালো চেক গেঞ্জি পরা বছর পঁয়ত্রিশের একটি লোক এ সব করছে। জিজ্ঞাসা করতে বলল, ‘‘সুযোগ করে দিতে পারি। কিন্তু টাকা লাগবে।’’ অসীমাদেবীর অভিযোগ, ভিতরে ঢুকতে ৫০০ ও ডাক্তার দেখাতে আরও ৫০০ টাকা দাবি করে ওই দালাল। তিনি বলেন, ‘‘রুগ্ণ ছেলে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পরে আর মাথার ঠিক রাখতে পারিনি। চড় কষিয়েছি লোকটার গালে। তা দেখে কয়েকজন রোগীর বাড়ির লোকও আসেন।’’ মারতে মারতে ওই ব্যক্তিকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে যান তাঁরা। হাসপাতাল সুপারের ঘরে গিয়ে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন।

Advertisement

কিছুদিন আগে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের পাতা ফাঁদে পা দিয়ে এনআরএস-এ ধরা পড়ে রক্তচক্রের এক দালাল। এর পরে সোমবারের এই ঘটনায় সরকারি হাসপাতালের রোগী সুরক্ষার বেহাল ছবিটাই ফের বেআব্রু হল বলে মত অনেকের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement