তদন্ত চলছে। জনা ছয়েককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদও চালাচ্ছেন পুলিশ কর্তারা। কিন্তু এ ভাবে কি সমস্যার সমাধান হবে? খোদ পুলিশ কর্তারাই বলছেন, না! অপরাধ কমাতে পুলিশি তৎপরতার পাশাপাশি সচেতন থাকতে হবে নাগরিকদেরও।
বুধবার ভরদুপুরে নিউ আলিপুরে বৃদ্ধাকে বেঁধে রেখে লুঠপাটের ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে বাড়ির পরিচারকের দিকে। ফলে এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠেছে, বাড়িতে নতুন পরিচারক রাখলে যে সব নিয়মবিধি মানতে হয়, তা কি আদৌ মানেন নাগরিকেরা? পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কিন্তু সেই সব নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখান বাসিন্দারা।
নিউ আলিপুর থানার এস এন রায় রোডের একটি ফ্ল্যাটে শীলা খেমকা নামে ওই বৃদ্ধাকে বেঁধে রেখে বুধবার বিকেল তিনটে নাগাদ তিন জনের দুষ্কৃতীদল লুঠপাট চালায়। শীলাদেবী জানান, লুঠপাটের সময়ে বাড়িতে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও বাধা দেননি পরিচারক শঙ্কর। উল্টে যখন কয়েক লক্ষ টাকা-সহ বাড়ির বহু মূল্যবান জিনিস নিয়ে চম্পট দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা, তখন তাদের সঙ্গেই বেরিয়ে যান শঙ্করও।
তদন্তকারীরা জানান, শীলাদেবী তাঁদের জানিয়েছেন, দিন সাতেক আগে শঙ্করকে তিনি পরিচারক হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন। বুধবার দুপুরে কলিং বলের আওয়াজে বৃদ্ধা যখন দরজা খোলেন, এক যুবক নিজেকে রমেশ প্রজাপতি পরিচয় দিয়ে শঙ্করের সঙ্গে দেখা করতে চান। শঙ্করের পরিচিত শুনে তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দিয়েই এই বিপত্তি হয় বলে জানান শীলাদেবী।
তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ওই বাড়ির সামনের রাস্তার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীদের স্কেচ আঁকানো হয়। সূত্রের খবরের ভিত্তিতে এবং ওই স্কেচের সাহায্যে বৃহস্পতিবার শঙ্কর-সহ ছ’জনকে আটক করে পুলিশ। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। যে ব্যক্তি শীলাদেবীর সঙ্গে শঙ্করের পরিচয় করিয়েছিলেন, তাঁর সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা।
পুলিশ কর্তারা জানাচ্ছেন, নতুন পরিচারক নিযুক্ত করার পরে তাঁর সচিত্র পরিচয়পত্র থানায় জমা দেওয়ার উচিত। কিন্তু বারংবার অনুরোধ সত্ত্বেও পুলিশের সেই নির্দেশে গুরুত্ব দেন না অধিকাংশ বাসিন্দাই। থানার পাশাপাশি বহুতলগুলির পরিচালন সমিতির কাছেও সেখানকার প্রতি ফ্ল্যাটের পরিচারক, গাড়ি চালক-সহ যাঁরা বাড়িতে নানা রকম কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্র রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাড়ির মালিক এবং পরিচালন সমিতি— কোনও পক্ষই এই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দেন না।
নিউ আলিপুরের এই ঘটনা কোনও ব্যতিক্রম নয়। এর আগেও কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় একাধিক বার চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধ ঘটেছে। যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তদন্তকারীরা পরিচারক-পরিচারিকার যোগ পেয়েছেন। যেমন, মাস খানেক আগেই নিউ আলিপুর থানা এলাকায় আরেকটি চুরির ঘটনা ঘটে। তাতেও উঠে এসেছিল পরিচারিকার নাম। বিহার থেকে ওই পরিচারিকাকে গ্রেফতার করে পুলিশ, উদ্ধার হয় চুরি যাওয়া সামগ্রী। কয়েক মাস আগে সল্টলেকের ডাকাতির ঘটনাতেও জড়িয়েছিল প্রতিবেশীর পরিচারকের নাম।
পুলিশ কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, থানা কিংবা হাউজিং সোসাইটির কাছে সচিত্র পরিচয় পত্র থাকলে পরিচারকদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি কাজ করবে। যার জেরে অপরাধ প্রবণতা কমবে। আর অপরাধ ঘটলেও ঠিকানা-ছবি পুলিশের কাছে জমা থাকলে তদন্তের গতি দ্রুত হবে।