হাইকোর্ট। —ফাইল ছবি
কারা তাঁকে হুমকি দিচ্ছে, খুন হয়ে যাওয়ার আগে পুলিশকে তা জানিয়েছিলেন ব্যারাকপুরের যুবক সাবির আহমেদ। সেই অভিযোগ পেয়েও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হল না, পুলিশের কাছে তার ব্যাখ্যা চাইল কলকাতা হাইকোর্ট। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ও
নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে দায়ের হওয়া একটি মামলায় মঙ্গলবার সেই ব্যাখ্যা চান বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য। সরকারি কৌঁসুলি আদালতে দাবি করেন, নিহত সাবিরের বিরুদ্ধে খুন-সহ একাধিক দুষ্কর্মের অভিযোগ ছিল। তা শুনে বিচারপতি ভট্টাচার্যের পর্যবেক্ষণ, ‘‘সেই কারণে পুলিশ তদন্ত করবে না!’’ ওই পর্যবেক্ষণের পরে সরকারি কৌঁসুলি রবিউল ইসলামের বক্তব্য নথিভুক্ত করেন বিচারপতি।
ছেলের খুনিরা ধরা পড়ছে না এবং পুলিশও ঠিক মতো তদন্ত করছে না— এই অভিযোগ তুলে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সাবিরের বাবা ইস্তাক আহমেদ ও মা শবনম বেগম। তাঁদের আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী এ দিন আদালতে জানান, গত ২১ অক্টোবর সাবিরকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় সোনু ও সন্তোষ নামে দুই যুবক। দু’দিন পরে ব্যারাকপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে তাঁর পরিবার। ২৫ অক্টোবর জগদ্দল থানা এলাকায় গঙ্গা থেকে উদ্ধার হয় সাবিরের দেহ। পুলিশ জানায়, সাবিরের মামা গত বছর নয়াবস্তিতে বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী তাঁর কাছে এক লক্ষ টাকা তোলা চায়। সাবির তখন তার প্রতিবাদ করেন।
কৌস্তভ আদালতে জানান, পুলিশ নির্দিষ্ট ১৩ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করলেও তারা এমন দু’জনকে গ্রেফতার করেছিল, যাদের নামে অভিযোগ ছিল না। শিবু যাদব-সহ যাদের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে, তারা সাবিরের বাবা-মাকে শাসাচ্ছে বলে অভিযোগ। তাদের ভয়ে ইস্তাক ও তাঁর স্ত্রী ব্যারাকপুরের নয়াবস্তির বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র রয়েছেন।
এই অভিযোগ শুনে বিচারপতি ভট্টাচার্য সরকারি কৌঁসুলির কাছে জানতে চান, নির্দিষ্ট কয়েক জনের বিরুদ্ধে ওই যুবক অভিযোগ করছেন জেনে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছিল? ব্যবস্থা না নিয়ে থাকলে তার ব্যাখ্যাই বা কী?
সরকারি কৌঁসুলি আদালতে জানান, ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগ ১১ নভেম্বর ওই খুনের তদন্তভার নিয়েছে। খুন ও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের মামলাও দায়ের হয়েছে। এর পরেই তিনি জানান, সাবিরের বিরুদ্ধে খুন-সহ দুষ্কর্মের অভিযোগ ছিল। তা শুনেই ওই পর্যবেক্ষণ করেন বিচারপতি। তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘পুলিশের টালবাহানা নিয়ে এটা কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ হতে পারে না।’’
এ দিন বিচারপতি নির্দেশ দিয়েছেন, সাবিরের বাবা-মা নয়াবস্তিতে ফিরতে চাইলে তাঁদের পুলিশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। একই সঙ্গে বিচারপতি দু’পক্ষকে হলফনামা পেশ করে বক্তব্য জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ৮ জানুয়ারি।