Platelets

প্লেটলেটের জোগান ঠিক রাখতে উপাদান পৃথক করায় জোর 

শহরের বিভিন্ন হেমাটোলজিস্টদের মতে, শুধু ডেঙ্গি নয়, রক্তের ক্যানসার বা যে কোনও কেমোথেরাপিতেও প্লেটলেট কমে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদেরও প্লেটলেট কমতে দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:৫৫
Share:

চলছে পরীক্ষা। প্রতীকী চিত্র।

আকারে করোনাভাইরাসের থেকে মাত্র দশ গুণ বড়। প্রযুক্তির উন্নতির হাত ধরে বার বার প্রমাণিত হয়েছে, রক্তের সব থেকে ক্ষুদ্র ওই কোষের গুরুত্ব মানবশরীরে কতটা। এখন ডেঙ্গির মরসুমে সেই প্লেটলেট বা অণুচক্রিকার প্রয়োজন কয়েক গুণ বেড়েছে। আর মশাবাহিত ওই রোগের প্রকোপ যত বাড়ছে, সকলের মাথাতেই বেশি করে ঘুরপাক খাচ্ছে প্লেটলেটের বিষয়টি। কিন্তু রাজ্যে সরকারি স্তরে ১০০ শতাংশ রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ না হওয়ায় প্রায়ই দেখা দিচ্ছে প্লেটলেটের আকাল!

Advertisement

শহরের বিভিন্ন হেমাটোলজিস্টদের মতে, শুধু ডেঙ্গি নয়, রক্তের ক্যানসার বা যে কোনও কেমোথেরাপিতেও প্লেটলেট কমে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদেরও প্লেটলেট কমতে দেখা যায়। অ্যাপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, অস্থিমজ্জার অস্বাভাবিকতা, সিরোসিস অব লিভার, লিউকেমিয়া এবং প্লীহা বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও প্লেটলেট কমতে পারে। তা ছাড়া, এইচআইভি, চিকেন পক্সের মতো কিছু নির্দিষ্ট ভাইরাস বা ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণেও অনেক ক্ষেত্রে কমে যায় প্লেটলেট। এক হেমাটোলজিস্টের কথায়, “ডেঙ্গিতে বহু মানুষের প্লেটলেট কমে যাওয়ার ঘটনা সামনে আসে। সেই জন্যই সাধারণ মানুষ প্লেটলেটের সমস্যা বলতেই ডেঙ্গি বোঝেন। কিন্তু আদতে তেমনটা নয়। তাই শুধু ডেঙ্গির মরসুম নয়, সারা বছরই প্লেটলেটের পর্যাপ্ত জোগান থাকা প্রয়োজন।” শরীরের কোনও জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হলে সেখানে অণুচক্রিকা রক্তক্ষরণ আটকায় এবং অন্যান্য ফ্যাক্টরের মাধ্যমে রক্ততঞ্চন বা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। কিন্তু শরীরে প্লেটলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে অতিরিক্ত সময় নেয়। তাতে শরীরের ভিতরে বা বাইরে কোথাও রক্তপাত শুরু হলে তা বন্ধ হতে চায় না। বরং ধীরে ধীরে রক্ত বেরিয়ে যেতে থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, রক্তের অক্সিজেন বহনক্ষমতা কমতে থাকে।

হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, স্বাভাবিক মাত্রার থেকে প্লেটলেট কমল মানেই ব্লাড ব্যাঙ্কে ছুটতে হবে, তেমনটা নয়। যদি সেই মাত্রা ২০ হাজারে নেমে যায়, তখন শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণের আশঙ্কা তৈরি হয়। তিনি বলেন, “প্রয়োজন ছাড়া প্লেটলেট দিলে ক্ষতি হতে পারে। প্লেটলেটের ভাল দিকের মতো খারাপ দিকও রয়েছে। যে কোনও সংক্রমণ, ডায়াবিটিস, ক্যানসার বা হৃদ্‌রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময়ে হিতে বিপরীত হয়ে ওঠে প্লেটলেট। তাতে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যায়।” প্রান্তর এ-ও জানাচ্ছেন, যে হেতু শুধু ডেঙ্গি নয়, অন্যান্য বিভিন্ন রোগেও প্লেটলেটের প্রয়োজন হয়, তাই সেটির জোগানের দিকেও সকলকে নজর রাখতে হবে। তবে চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, প্লেটলেট রাখার নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। নির্দিষ্ট যন্ত্রের মাধ্যমে দোদুল্যমান অবস্থায় না রাখলে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায় প্লেটলেট।

Advertisement

রক্তের ওই ক্ষুদ্র কোষের চাহিদা পূরণে আরও জোরদার পদক্ষেপের কথা বলছেন এর আর এস মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক তুফানকান্তি দোলাই। তিনি বলেন, “প্রতিটি ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণে জোর দিতে হবে। পাশাপাশি, বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে এক জনের শরীর থেকে শুধু ২৫০-৩০০ মিলিলিটার প্লেটলেট বার করার বিষয়টিতেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। না হলে ঘাটতি মেটানো মুশকিল। এ ভাবে প্লেটলেটের সংগ্রহ বাড়লে ডেঙ্গির সময়ে উপকার হবে।”

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিভিন্ন ধরনের জীবাণু রক্ত কোষের সংখ্যা বাড়িয়ে বা কমিয়ে দেয়। তাই শরীরে কোনও সংক্রমণ হয়েছে কি না, বুঝতে লোহিত ও শ্বেত কণিকার পাশাপাশি প্লেটলেটের মাত্রাও পরীক্ষা করা হয়। ডেঙ্গি তো বটেই, প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স (ম্যালেরিয়ার জীবাণু)-ও রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা মারাত্মক হারে কমিয়ে দেয়। আজ, শুক্রবার পিয়ারলেস হাসপাতাল আয়োজিত এক সেমিনারে বিভিন্ন আলোচনার মধ্যেই রয়েছে প্লেটলেটের এই ভাল-মন্দের বিষয়টি। ওই হাসপাতালের অধিকর্তা, চিকিৎসক সুজিত কর পুরকায়স্থ বলেন, “প্লেটলেটের মাত্রা কমে বিপজ্জনক স্তরে পৌঁছেছে কি না, তা দেখে তবেই প্লেটলেট দেওয়া প্রয়োজন। যন্ত্রের পরীক্ষার উপরে নির্ভর করে মাত্রা কমার বিষয়ে নিশ্চিত হলে হবে না। হাতেকলমে পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন। প্রয়োজন ছাড়া যাতে প্লেটলেটের ব্যবহার না হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।” পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানুষেরই প্লেটলেট আকারে একটু বড় হয়। যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষায় তাঁদের প্লেটলেটের মাত্রা কম আসে। এর জন্য কোনও চিকিৎসা লাগে না বলেও জানাচ্ছেন প্রান্তর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement