নিজস্ব চিত্র।
হাজরার পর এ বার চারু মার্কেট। ফের গাড়ি আর মোটরবাইকের সংঘর্ষে মৃত্যু হল এক যুবকের। এ ক্ষেত্রেও মৃত মোটরবাইক চালক সজল কৈরি (২৫) ও গুরুতর জখম আরোহী বিশ্বনাথ ঘোষ (৩৩) হেলমেটহীন ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শুক্রবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে চারু মার্কেট থানার অদূরে, ভবানী সিনেমা হলের উল্টো দিকে। ১৭ সেপ্টেম্বর হাজরায় বাইকটিকে পিছন থেকে ধাক্কা মেরেছিল মার্সিডিজ বেন্জ। আর চারু মার্কেটে হন্ডা সিটি-র সঙ্গে বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে গাড়িটির উইন্ডস্ক্রিন চুরমার হয়ে গিয়েছে, তুবড়ে গিয়েছে সামনের অংশ। হাজরার মতো এখানে ঘাতক গাড়ির খোঁজে কোনও আবাসনে হামলা হয়নি। গাড়ির চালক, সল্টলেকের বি এল ব্লকের বাসিন্দা যশ চৌধুরী শনিবারই থানায় গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছেন।
চারু মার্কেটে দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটির হাল দেখে পুলিশের বক্তব্য, হন্ডা সিটি ও বাইক দু’টোই বেপরোয়া গতিতে চলছিল। গাড়ি ও বাইকের চালকেরা মত্ত ছিলেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আবার এই ঘটনা প্রমাণ করছে, গভীর রাতের শহরে এক শ্রেণির যুবক স্টিয়ারিং ধরলে গতির তোয়াক্কা করেন না। পুলিশের মতে, একই কথা প্রযোজ্য বাইক চালক ও আরোহীদের ক্ষেত্রেও। বার বার হেলমেট পরার কথা বললেও বাইকের বহু চালক, আরোহী তাতে কর্ণপাত করছেন না। বুধবারই সকালে বিবেকানন্দ রোড ও চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের মোড়ে হেলমেটহীন এক যুবক মোটর সাইকেল নিয়ে কসরত করতে গিয়ে রাস্তায় ছিটকে পড়ে মারা যান।
শুক্রবারের দুর্ঘটনায় মৃত সজল ঝালাইয়ের কাজ সেরে মহাবীরতলার কাছে রায়বাহাদুর রোডের বাড়িতে ফিরেছিলেন। মা অসীমা কৈরি এ দিন জানান, সাড়ে বারোটা নাগাদ খেতে বসে সজল রুটি চান। রুটি হয়নি বলে বাইক নিয়ে বেরোন রুটি কিনে আনবেন বলে। কিন্তু রুটি নিয়ে আর বাড়ি ফেরা হয়নি সজলের। তাড়াতাড়ি ফিরবেন বলে ফোনটিও ঘরে রেখে গিয়েছিলেন। তিনি না ফেরায় সারা রাত দুশ্চিন্তায় কাটে মা অসীমা ও স্ত্রী সোমার। শনিবার সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ মৃত্যুসংবাদ পৌঁছয় বাড়িতে।
পুলিশের বক্তব্য, দুর্ঘটনাটি ঘটে রাত আড়াইটেয়। তা হলে সাড়ে ১২টায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সজল দু’ঘণ্টা ধরে কী করছিলেন? তা ছাড়া বিশ্বনাথ ঘোষ নামের ওই আরোহী কে, কোথা থেকেই বা সজলের বাইকে উঠলেন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ জানায়, হন্ডা সিটি গাড়িটি রাস্তার সঠিক প্রান্ত ধরেই যাচ্ছিল। তবে দুর্ঘটনাস্থল থেকে মনে হচ্ছে, বাইকটি দক্ষিণ থেকে উত্তর প্রান্ত যেতে সঠিক রাস্তা না ধরে উল্টো রাস্তা ধরে। আর তার ফলেই দুর্ঘটনা ঘটে। কেন মোটরবাইকটি উল্টো রাস্তা ধরল, তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
পুলিশের একাংশের সন্দেহ, দুর্ঘটনার পরে গাড়িটি ফের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ডিভাইডারের রেলিংয়ে হয়তো ধাক্কা মেরেছিল। গাড়ির সামনের অংশটি যে ভাবে তুবড়ে গিয়েছে, তা বাইকের ধাক্কায় হওয়া মুশকিল। অথচ বাইকটির তেমন ক্ষতি হয়নি। ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সজল ও বিশ্বনাথকে প্রথমে এম আর বাঙুরে, পরে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে শনিবার ভোরে সজলের মৃত্যু হয়।
দুর্ঘটনার পরেই চম্পট দেন গাড়িচালক যশ। তবে এ দিন দুপুরে তাঁর বাবা প্রকাশ চৌধুরী ছেলেকে সঙ্গে করে এনে চারু মার্কেট থানায় আত্মসমর্পণ করান। যশের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪-এ ধারায় (গাফিলতির কারণে মৃত্যু) অভিযোগ দায়ের করেছে পুলিশ। এ দিন আলিপুর আদালতে হাজির করানো হলে যশ জামিনে মুক্তি পান। তবে হাজরার ঘটনায় ধৃত ঘাতক মার্সিডিজের চালক বরুণ মহেশ্বরীর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগে মামলা রুজু করেছে পুলিশ। যেটি তুলনামূলক ভাবে কঠোর ধারা।