KMC Election 2021

KMC election 2021: যাঁকে দাঁড় করিয়ে আমাকে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা, তিনি আমারই নাম ব্যবহার করে লড়ছেন: শোভন

দলনেত্রীর নির্দেশে তিনি যে ভাবে ছোট লাল বাড়ি সামলাচ্ছিলেন, তা পছন্দ হয়নি অনেকেরই। তাই তাঁকে ওই পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে, দাবি শোভনের।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:০৯
Share:

কথা: পুরভোট নিয়ে আলাপচারিতায় বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র।

মেয়রের পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিল দল। ছাড়তে হয়েছিল মন্ত্রিত্বও। পরে দল বদল করেছিলেন, কিন্তু থিতু হতে পারেননি সেখানেও। আসন্ন পুরভোটে তিনি কোনও দলেরই প্রার্থী নন। তবু তাঁর নামেই কলকাতা পুরসভার ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট হচ্ছে বলে দাবি এ শহরের আট বছরের মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের। তাঁর কথায়, ‘‘আমার ছায়াতেই ভোট হচ্ছে ১৩১ নম্বরে। যাঁকে ভোটে দাঁড় করিয়ে নাকি আমাকে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তিনিও তো সেই আমারই নাম ব্যবহার করে ভোটে লড়ছেন!’’

Advertisement

শোভনবাবুর মন্তব্য শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী রত্না চট্টোপাধ্যায় (যাঁর সঙ্গে শোভনবাবুর বিবাহ-বিচ্ছেদের মামলা চলছে এই মুহূর্তে) বললেন, ‘‘ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে গাত্রে হল ব্যথা। শোভন নিজেই নিজের ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে চলেছে।’’ শোভনবাবুর দাবি নস্যাৎ করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, ‘‘কাউন্সিলর হওয়ার পরে এলাকায় মুখ দেখানো বন্ধ করে দিয়েছিলেন শোভন। ফলে যাঁকে কেউ তখনই চিনতেন না, তাঁর নামে এত বছর পরে আর ভোট হওয়ার প্রশ্নও ওঠে না।’’

শোভনবাবু দাবি করেছেন, তৃণমূলের একাংশ তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছিল। দলনেত্রীর নির্দেশে তিনি যে ভাবে ছোট লাল বাড়ি সামলাচ্ছিলেন, তা পছন্দ হয়নি অনেকেরই। তাই তাঁকে ওই পদ থেকে ছেঁটে ফেলা হয়েছে। এমনকি, তিনি মেয়র পদ ছেড়ে দেওয়ার তিন বছর পরেও তাঁর সময়ে হাতে নেওয়া কোনও কাজই শেষ করা হয়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। যত দিন তৃণমূল করেছি, দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার কাছে শেষ কথা ছিলেন। যা যা নির্দেশ এসেছে, তা-ই করেছি। আমার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক পদক্ষেপই আমি তাঁকে জানিয়ে করেছি। কিন্তু পরে আমার পিঠেই কেউ কেউ ছুরি মেরেছেন। কিন্তু কুকুরকে মেরে ঝুলিয়ে দিলেও তাঁর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না।’’ এর পরে তাঁর মন্তব্য, ‘‘১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে এমন এক জনকে দাঁড় করানো হয়েছে, যাঁর জনভিত্তি বলে কিছু নেই। তিনি আমারই নাম ব্যবহার করে একের পর এক ভোটে লড়ছেন।’’

Advertisement

প্রচারের মধ্যেই রত্না পাল্টা বলেন, ‘‘আমি প্রচারে বেরিয়ে ওর নাম উচ্চারণ পর্যন্ত করি না। উল্টে ভয় লাগে, কেউ যদি ধরে বলেন, এই তো তোমার স্বামীকে ভোট দিয়েছিলাম। কী করেছে? আবার ভোট চাইতে এসেছ?’’ পার্থবাবুও বললেন, ‘‘রত্না টিকিট পেয়েছেন, গত চার বছরে তাঁর কাজের নিরিখে। কমবয়সিদের নিয়ে রত্না এলাকা চষে ফেলছেন। শোভন এ সব কথা বলে নিজেই নিজেকে ছোট করছেন। মানুষই তাঁদের রায়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, শোভনের চেয়ে অনেক ভাল রত্না।’’

শোভনবাবুর বান্ধবী বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও মনে করেন, শোভনের পরিবর্ত রত্না কখনওই হতে পারেন না। তাঁর মন্তব্য, ‘‘১৩১ নম্বর ওয়ার্ডের জন্য শোভন কী করেছে, সকলেই জানেন। মনে আছে, শোভন এক বার আমাকে প্রথম ওর বাড়িতে ডেকেছিল। সটান বলেছিলাম, বেহালা নয়, অন্য কোথাও দেখা করব। কারণ, আমার ধারণা ছিল, বেহালা মানেই বড় বড় মশা ছুটে আসবে। চার দিকে খোলা নর্দমা আর নোংরা রাস্তা। গিয়ে দেখলাম, শোভন বেহালার ভোল বদলে দিয়েছে।’’ এই দাবি উড়িয়ে রত্নার মন্তব্য, ‘‘শোভন কিছুই করেনি। ওয়ার্ডে জেতার পরে এলাকায় আর দেখা যায়নি। আমপান হল, করোনা গেল, আমি ছুটে বেড়িয়েছি। কোথায় ছিল শোভন চট্টোপাধ্যায়?’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘মানুষকে এখন মিথ্যা বোঝানোর চেষ্টা করছে। ২২ বছর আমাকেও মিথ্যা বলে ঘুরিয়েছে। আমিও আগামী ২২ বছর ঘোড়দৌড় করাব। তার পরে ডেকে বলব, না-ও এ বার বিচ্ছেদ।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement