হগ মার্কেট

আগুনে গলছে মাছের বরফ, চিন্তা জোগানের

সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটা। হগ মার্কেটের আলুর বাজার দাউ দাউ করে পুড়ছে। আলু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাথায় হাত মাছ ব্যবসায়ীদেরও। ক্ষতির আশঙ্কা সেখানেও। মাছ বাজারে আগুন লাগেনি ঠিকই। কিন্তু আলুর বাজারের আগুনের তাপে সেখানে মজুত রাখা মাছের বরফ গলতে শুরু করেছে। দমকল আর পুলিশ বাজারের আশপাশের এলাকা ঘিরে দিয়েছে। রটে গিয়েছে আলু বাজারে অগ্নিকাণ্ডের জেরে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে মাছের বাজারও।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৫ ০৩:১৫
Share:

অগ্নিকাণ্ডের পরে মাছবাজার। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র।

সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটা। হগ মার্কেটের আলুর বাজার দাউ দাউ করে পুড়ছে। আলু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাথায় হাত মাছ ব্যবসায়ীদেরও। ক্ষতির আশঙ্কা সেখানেও।
মাছ বাজারে আগুন লাগেনি ঠিকই। কিন্তু আলুর বাজারের আগুনের তাপে সেখানে মজুত রাখা মাছের বরফ গলতে শুরু করেছে। দমকল আর পুলিশ বাজারের আশপাশের এলাকা ঘিরে দিয়েছে। রটে গিয়েছে আলু বাজারে অগ্নিকাণ্ডের জেরে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে মাছের বাজারও। আর তাতেই উৎকন্ঠায় পড়ে যান মাছ ব্যবসায়ীরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেকেই এই নিয়ে দোলাচলে, পরদিন সকালে মাছের বাজার খুলবে কিনা। তবে সন্ধ্যার পরে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বাজার) আমিরুদ্দিন জানান, মাছের বাজার খোলা থাকবে।

Advertisement

দীর্ঘ দিনের পুরনো ওই মাছ বাজারে বড় ব্যবসা রয়েছে সরোজ ওঝার। শহরের বহু নামী রেস্তোরাঁ ও কেটারিং সংস্থার হেঁসেলে মাছের প্রতিদিনের সরবরাহ হয় তাঁর দোকান থেকেই। তিনি জানান, ক্ষতির আশঙ্কা দু’ভাবে। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত বিয়ের মরসুম। প্রত্যেকে ভাল পরিমাণ মাছ আগাম মজুত করে বসে রয়েছে। বাজার বন্ধ থাকলে মাছের বরফ বদলানো যাবে না। সে ক্ষেত্রে মাছ পচে গেলে ব্যাপক ক্ষতি। জমানো মাছের জন্য নতুন মাছ ঢুকতে না পারলে বরাত নেওয়া মাছ দেওয়া যাবে না।’’

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিদিন ওই বাজারে পাঁচ থেকে ছ’লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়। মঙ্গলবার থেকে লাগাতার তিন দিন বিয়েবাড়ি রয়েছে। এই বিয়ের মরসুমে ব্যবসার আর্থিক পরিমাণ দ্বিগুন হয়ে যায়। ক্যাটারিং সংস্থাগুলি বিপুল পরিমাণে মাছের বরাত দিয়ে বসে থাকে। ফলে সরবরাহে ঘাটতি হলে সমস্যা সব দিকেই হয়। মাছ বাজারের আর এক বড় ব্যবসায়ী গোপাল রোজা বলেন, ‘‘শুধুই বিয়েবাড়ি নয়, হোটেল-রেস্তোঁরাগুলিও প্রচুর পরিমাণে মাছ নেয়। ফলে মাছ মজুদ রাখতেই হয়। আজ মাছ-বাজারে আগুন লেগেছে শুনে অনেকেই ফোন করে খবর নিতে থাকেন, কাল মাছ দিতে পারব কিনা।’’

Advertisement

এক সময়ে সেই আশঙ্কা বেশ প্রকট ভাবে তৈরি হচ্ছিল। আলুর বাজার পুড়ে ভষ্মীভূত। সমগ্র এলাকা ঘিরে রেখেছে পুলিশ। মাছ বাজারের তিনটি গেটের মধ্যে দু’টি বন্ধ। একটি মাত্র গেট খোলা। সেখানেও পুলিশ। সেই পুলিশকর্মীরা নিজেরাও তখন জানেন না, মাছবাজার মঙ্গলবার খোলা থাকবে কিনা।

আগামীকাল তিনটে বিয়েবাড়ি ধরা রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার একটি ক্যাটারিং সংস্থার। সংস্থার তরফে রানা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খবর শুনে ভয় পেয়ে আমাদের মাছ সরবরাহকারী গোপালবাবুকে ফোন করি। তিনটি বিয়েবাড়ির জন্য কাল ভেটকি আর কাতলা মিলে প্রায় দেড়শো কিলো মাছের প্রয়োজন। গোপালবাবুদের ওখানে মাছের বরফ গলে যাওয়ায় আজই অর্ধেক পরিমাণ মাছ আমরা তুলে নিয়ে ফ্রিজে রেখে দিয়েছি।’’

ভবানীপুরের একটি ক্যাটারিং সংস্থার তরফে শাশ্বতী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরাও আগুনের খবর পেয়ে সরবরহকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি। ওঁদের থেকে মাছ না পাওয়ার কোনও খবর এখনও নেই। তবে বিকল্প ব্যবস্থা রাখতে অন্যান্য বাজারগুলির সঙ্গেও আমাদের যোগাযোগ রাখতে হচ্ছে।’’

কলকাতার বড় ফুড চেনগুলি অবশ্য মাছ বাজারে আগুন লাগার খবর ছড়িয়ে পড়ায় বিশেষ আতঙ্কিত ছিল না। তারা জানায়, সাধারণত দু’-তিন দিনের মাছ তারা সব সময়ে মজুদ রাখে।

ঘটনা যা-ই হোক, এ দিন দুপুরে কলকাতার অন্যতম পুরনো ওই মাছবাজারে আগুন লাগার খবরে প্রভাবিত হন অনেক বড় মাছবাজারের ব্যবসায়ীরাও। মানিকতলা বাজারের সম্পাদক প্রভাত দাস বলেন, ‘‘আমরা নিউ মার্কেটে আগুনের খবর পেয়ে ঠিক করে ফেলেছিলাম যে প্রয়োজনে এ দিকে আসা গাড়িগুলি নিউ মার্কেট ও আশপাশের বাজারে পাঠিয়ে দেব। যাতে সঙ্কট তৈরি না হয়।’’ একই কথা জানান পাতিপুকুরের ব্যবসায়ী স্মরজিৎ নস্কর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement