—ফাইল চিত্র।
দু’দিন আগেই এন আর এসে কর্তব্যরত ফার্মাসিস্টকে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল এক জুনিয়র ডাক্তারের বিরুদ্ধে। এ বার খাস স্বাস্থ্য ভবনে নিজের কার্যালয়ে সার্জারির এক চিকিৎসকের হাতে আক্রান্ত হলেন স্বাস্থ্য আধিকারিক। প্রথমে সরকারি হাসপাতাল, তার পরে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যের সদর দফতরে এমন ঘটনা চিকিৎসকদের ভাবমূর্তির পক্ষে আদৌ কতখানি স্বাস্থ্যকর, সেই গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিল।
স্বাস্থ্য দফতরের খবর, অভিযুক্ত চিকিৎসক ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ থেকে সার্জারিতে স্নাতকোত্তর পাশ করেন। তার পরে বন্ড চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন লেডি ডাফরিন এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। সম্প্রতি তিনি কোচির একটি প্রতিষ্ঠানে ইউরোলজি পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। সেই কারণে নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নিতে এ দিন স্বাস্থ্য ভবনের তেতলায় অতিরিক্ত সহ স্বাস্থ্য অধিকর্তা (পি অ্যান্ড ই) নীলাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন। সেখানকার আধিকারিকদের একাংশ জানান, তীব্র বাদানুবাদ চলাকালীন আচমকা নীলাঞ্জনবাবুর ঘর থেকে ‘সিকিওরিটি হেল্প’ বলে চিৎকার শোনা যায়। অন্য কর্মীরা গিয়ে দেখেন, দেওয়ালে ঠেসে রয়েছেন নীলাঞ্জনবাবু। আর রাগে ফুঁসছেন ওই চিকিৎসক। তত ক্ষণে নীলাঞ্জনবাবুর মাথায়, ঘাড়ে অভিযুক্ত
চিকিৎসক তিন-চারটি ঘুষি চালিয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ।
এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘কেন মারা হল জানতে চাইলে ওই চিকিৎসক বলেন, অনেক ক্ষণ অপেক্ষা করছি। কিছুতেই উনি নো অবজেকশন সার্টিফিকেট দিচ্ছেন না। এনওসি না পেলে স্বাস্থ্য ভবনের বাইরে গায়ে আগুন দেব।’’
এ কথা শুনেই পুলিশে খবর দেন আধিকারিকেরা। ওই চিকিৎসককে ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় নিয়ে গিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়। পরে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে সিটি স্ক্যান, বুকের এক্স-রে এবং ইসিজি করান নীলাঞ্জনবাবু। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানিয়েছেন, তাঁর তরফে প্ররোচনা ছিল না। আচমকাই তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন ওই চিকিৎসক।
এন আর এসের পরে স্বাস্থ্য ভবনে সেই একই ধরনের অভিযোগের পুনরাবৃত্তি। এ দিনই এন আর এসে মুখে কালো ব্যাজ পরে মৌন মিছিল করেন ফার্মাসিস্টরা। থানায় স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। স্বাস্থ্য ভবনের চিকিৎসক-আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘ডাক্তারদের এমন রণং দেহি মূর্তি কল্পনার অতীত।’’
উল্টো দিকে, স্বাস্থ্য প্রশাসনও দায় এড়াতে পারে না বলে মত চিকিৎসক সংগঠনগুলির। অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্থ সার্ভিস ডক্টর্স-এর সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য প্রশাসকদের ব্যবহার,
প্রশাসনিক কাজকর্মে উদাসীনতা এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কতটা হতাশ হলে এক জন মেধাবী চিকিৎসক এমন আচরণ করতে পারেন, তা ভাবা উচিত।’’ সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরে চূড়ান্ত নৈরাজ্য চলছে। হতাশা থেকে তৈরি হচ্ছে অসহিষ্ণুতা।’’ ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরামের সম্পাদক কৌশিক চাকীর কথায়, ‘‘রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা বিশৃঙ্খলার রোগে আক্রান্ত।’’
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনে এসে ডাক্তারকে কেউ মারবেন, এটা মেনে নেওয়া যায় না। তাই দীর্ঘক্ষণ আলোচনার
পরে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তা না হলে ভুল বার্তা যেত। হিংসাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’’