এ বারের ইউপিএসসি পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম শিলিগুড়ির চৈতন্য খেমানি। ফাইল চিত্র।
তাঁদের কারও ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল, আইপিএস অফিসার হওয়ার। কেউ আবার পরীক্ষায় ভাল ফলের হাত ধরে ভবিষ্যতে ‘সবুজ স্থাপত্য’-এর পথে হাঁটতে চান। কেউ ভাল ফল করলেও তাতে খুশি নন। আরও ভাল ফলের আশায় চলছে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি। গত এক মাসে এ রাজ্য থেকে সর্বভারতীয় বিভিন্ন পরীক্ষায় সাফল্যের মুখ দেখেছেন ওঁরা। যা সম্ভব হয়েছে তাঁদের ঐকান্তিক চেষ্টা আর একাগ্রতার ফলে।
এ বারের ইউপিএসসি পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম শিলিগুড়ির চৈতন্য খেমানি। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে তাঁর র্যাঙ্ক ১৫৮। আগামী দিনে আইপিএস অফিসার হতে চান। শিলিগুড়ির ডন বস্কো স্কুলের ছাত্র চৈতন্য আইএসসি পরীক্ষায় পাশ করে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হংসরাজ কলেজ থেকে বাণিজ্য বিভাগে পাশ করেন ২০১৯ সালে। জানান, স্কুলজীবন থেকেই ইচ্ছে ছিল ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার। তৃতীয় বারে এসেছে সাফল্য। এ জন্য নিজেই পড়াশোনা করেছেন। রাজ্য সরকারের সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিসেস স্টাডি সেন্টার থেকে পার্সোনালিটি টেস্টের জন্য তালিম নিয়েছেন।
প্রাক্তন নগরপাল সুধাংশুকুমার সিংহের নাতি ঈশান সিংহের এই পরীক্ষায় সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ২৩৪। বজবজের মোল্লারহাটের বাসিন্দা ঈশান জানালেন, ছোট থেকেই আইপিএস অফিসার হওয়া তাঁর স্বপ্ন। তাঁর এই সাফল্য এসেছে তৃতীয় বারে। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ছাত্র ঈশান রসায়ন নিয়ে স্নাতকোত্তরপড়াশোনা করেছেন সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব রাজস্থান থেকে। আরও জানান, রাজ্য সরকারের সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিসেস স্টাডি সেন্টার থেকে এই পরীক্ষার জন্য তালিম নিয়েছেন।
ইউপিএসসি-তে সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ২৯৪ এসেছে রাজারহাট-নিউ টাউনের ঋষভ সিংয়ের। চতুর্থ বারের চেষ্টায় সফল হলেও ফল আশানুরূপ হয়নি তাঁর কাছে। তাই জানালেন, ফের এই পরীক্ষায় বসতে চান। তার প্রস্তুতিও শুরু করেছেন। তাই বেশির ভাগ সময়ে ফোন বন্ধ রাখছেন। বাড়িতে রয়েছেন একাধিক সিভিল সার্ভেন্ট। বাবা অশোক সিং রয়েছেন ইন্ডিয়ান ফরেস্ট সার্ভিসে। দাদা সুশান্ত এবং বৌদি রশ্মিতা আইপিএস অফিসার। আইআইটি ধানবাদের মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার ঋষভ চান আইএএস হতে। সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিসেস স্টাডি সেন্টার থেকে এই পরীক্ষার তালিম নিয়েছেন ঋষভও। জানালেন, ফের এই পরীক্ষায় বসতে সেখানেই তালিম নিতে চান তিনি।
সর্বভারতীয় জয়েন্ট এন্ট্রান্সে ১০০ পার্সেন্টাইল পেয়ে প্রথম হয়েছেন সোহম দাস। রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার মেধা তালিকাতেও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন তিনি। ডিপিএস রুবি পার্কের ছাত্র, লেক গার্ডেন্সের বাসিন্দা সোহম আইআইটি, মুম্বইয়ে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়তে চান। বললেন, ‘‘এনসিইআরটি-র বই ও স্কুলের নোটস পড়েই বোর্ডের পরীক্ষার প্রস্তুতি চালিয়েছি। আর জয়েন্টের প্রস্তুতি চলেছে স্কুল ও অনলাইন টিউশনের মাধ্যমে।’’ পড়াশোনা বাদে অন্য শখপূরণের সময় নেই সোহমের। সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট, মোবাইল— কিছুই নেই তাঁর। অনলাইন ক্লাসটুকু করার জন্য যেটুকু ফোনের ব্যবহার। এখনপুরোদমে চলছে অ্যাডভান্স জয়েন্টের প্রস্তুতি।
সর্বভারতীয় জয়েন্টে ৯৯.৬ শতাংশ নম্বর পেয়ে ২৬৮ র্যাঙ্ক পেয়েছেন ভারতীয় বিদ্যাভবনের ছাত্রী রূপকথা দে। ভবিষ্যতে আইআইটি রুরকি বা আইআইটি খড়্গপুরে স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে পড়ে ‘সবুজ স্থাপত্য’ (গ্রিন আর্কিটেকচার) নিয়ে কাজ করতে চান। দমদম পার্কের বাসিন্দা রূপকথার কথায়, “সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। যে ভাবে সবুজ ধ্বংস হচ্ছে, সেখানে গাছ না কেটে বিশ্ব উষ্ণায়ন কমিয়ে, কার্বন ফুট প্রিন্ট কমিয়ে সবুজ স্থাপত্য নিয়ে কাজ করতে চাই।” রূপকথা জানান, জয়েন্টে সাফল্য পেতে একাদশ শ্রেণি থেকেই জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেন লক্ষ্য করে পড়াশোনা করতে হবে। এখন জয়েন্ট এন্ট্রান্স অ্যাডভান্সের প্রস্তুতি চলছে তাঁর।