Garden Reach Building Collapse

উপবাস ভঙ্গের আনন্দ নিমেষে বদলে গেল শোক আর কান্নায়

রবিবার রাত থেকেই ফতেপুরের রাস্তায় ভিড় জমেছিল। এ দিন বেলা যত গড়িয়েছে, ততই সেই ভিড় বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০২৪ ০৭:৩১
Share:

গার্ডেনরিচ এ ফতেপুর বাজার এলাকা তে একটি নির্মীয়মান বহুতল ভেঙে পড়ার পর এক জীবিত ব্যাক্তি কে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র।

গোটা তল্লাটে যেন ‘যুদ্ধ’ লেগে গিয়েছে। চার পাশ
পুলিশে-পুলিশে ছয়লাপ। ঘনঘন আসছেন মন্ত্রী, সান্ত্রীরা। রাস্তার পাশে পাশে জটলা থেকে ভেসে আসছে বুকফাটা আর্তনাদ। ঘটনাস্থল গার্ডেনরিচের ফতেপুর। রবিবার রাতে নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ৯ জন মারা গিয়েছেন। আহতের সংখ্যা আরও বেশি। রবিবার মধ্যরাতের ওই ঘটনার পর থেকেই উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছিল। সোমবার কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, দমকল, পুলিশ, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর অক্লান্ত কাজের মধ্যেই ঘটছিল নানা টুকরো-টুকরো ঘটনা।

Advertisement

রবিবার রাত থেকেই ফতেপুরের রাস্তায় ভিড় জমেছিল। এ দিন বেলা যত গড়িয়েছে, ততই
সেই ভিড় বেড়েছে। সঙ্গে বাড়ছিল ধ্বংসস্তূপের তলায় আটকে থাকা মানুষগুলির ভবিতব্য নিয়ে উৎকণ্ঠাও। তারই মাঝে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এক দল যুবক। স্বেচ্ছাসেবার পাশাপাশি তাঁদের শ্যেন দৃষ্টিতে ছিল
সংবাদমাধ্যমও। ভুল করে ক্যামেরা কিংবা মোবাইল বার করলেই রক্ষে নেই। ধেয়ে আসা, গালিগালাজ, এমনকি মারধরও জুটছিল। তবে, পরিস্থিতি কখনওই নিয়ন্ত্রণের বাইরে যায়নি।

রবিবার রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখা গিয়েছিল, একচিলতে গলি প্রায় অন্ধকার। বাতাসে চাপ ধরে ভেসে বেড়াচ্ছে কংক্রিটের
গুঁড়ো। রমজান মাসে এমনিতেই এই তল্লাট রাত জাগে। তবে আর পাঁচটা রাতের মতো রবিবার সেখানে আলস্য কিংবা হাসিঠাট্টার
উপস্থিতি ছিল না। দিনভর উপোসের পরে রাতে পেটে দু’মুঠো খাবারের পরেই মাথায় ভেঙে পড়েছে বহুতল। কিছু ক্ষণ আগেও পাশে বসে থাকা মানুষটা ‘নেই’ হয়ে গিয়েছে। আলসেমি ঝেড়ে, ঘুম থেকে উঠে এসে উদ্ধারে হাত লাগিয়েছেন স্থানীয় বহু মানুষই। তবে ওই সরু গলিতে উদ্ধারকাজ সহজ ছিল না। হাতুড়ি, কংক্রিটের ঢালাই কাটার ছোট যন্ত্র নিয়ে এসে কাজ শুরু হয়। বাইরে পাহাড়পুরের রাস্তায় তখন সার সার পুলিশের গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স দাঁড়িয়ে। কিন্তু ওই ধ্বংসস্তূপের ভিতরে কে কোথায় আছেন, সেটাই বোঝা দায়। রাতভর তাই
পথেই রাত জেগেছিল জনতা।

Advertisement

এ ভাবেই রাত কেটে গিয়েছিল। সোমবার সকাল থেকেই নতুন উদ্যমে উদ্ধারকাজ শুরু হয়।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী তাদের দক্ষ কুকুরদের নিয়ে আসে। ওই চারপেয়েরা ধ্বংসস্তূপে গন্ধ শুঁকে শুঁকে মানুষের সন্ধান দিয়েছে। সেই মতোই খুঁড়েছেন
উদ্ধারকারীরা। প্রাণ বাঁচাতে ধ্বংসস্তূপের ভিতরে অক্সিজেন, জল পাঠানোর চেষ্টা হয়েছে। এর মধ্যেই সকালে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মুখ্যমন্ত্রী ক্ষতিপূরণের আশ্বাসও দিয়ে যান। সকাল থেকেই ভিড় আরও বাড়তে শুরু করে ফতেপুরে।
রাস্তার উপরে, কাছের একটি হাসপাতালের সামনে দফায় দফায় জটলা হয়েছে। ভিড়ের মধ্যে কে যে ‘স্থানীয়’, কে ‘বহিরাগত’,
তা বুঝতে হিমশিম খেয়েছে পুলিশ। শেষমেশ সেখানেও স্থানীয়দেরই সাহায্য নিতে হয়েছে উর্দিধারীদের। তারই মাঝে ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে একের
পর এক দেহ বার করে এনেছেন উদ্ধারকারীরা।

উদ্ধারকাজ যত এগিয়েছে, শীর্ণ গলি ততই ভরে উঠেছে ধুলোয়। সেই ধুলোর আস্তরণ উজিয়ে
পুলিশ কুকুরের নাক কাজ করছিল না! রাত ৯টা নাগাদ তাই ভগ্নস্তূপ সাফাইয়ের কাজ সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখা হয়। গুঁড়িয়ে
যাওয়া বাড়িটির ভগ্নস্তূপ সরিয়ে নেওয়ার কাজ ফের শুরু হবে আজ, মঙ্গলবার সকালে। সেই সময়ে ফের পুলিশ কুকুর নিয়ে আসা হতে পারে।

এ দিন বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তিনিও মৃতদের
পরিবারকে ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেন। বেআইনি নির্মাণ নিয়ে কঠোর হওয়ার কথাও বলেন। এসেছিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এবং দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা
কেন্দ্রের (বন্দর এলাকা যাঁর আওতায়) দলীয় প্রার্থী সায়রা শাহ হালিম। পুলিশ তাঁদের আটকালে দু’পক্ষে এক প্রস্ত কথা-কাটাকাটিও হয়।
সন্ধ্যার পরে উদ্ধারকাজে সাময়িক বিরতি দেওয়া হয়। প্রাথমিক কাজ সমাপ্ত হওয়ায় উদ্ধারকারী দলের সদস্যদের একাংশকে
ফেরত পাঠানো হয়। উদ্ধারকারী দলের এক কর্তাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যা ধুলো জমে আছে, তাতে
এখন নড়াচড়া করা মুশকিল। কাল সকালে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে নামতে হবে।’’

রবিবার মধ্যরাতের আগে উপবাস ভঙ্গের আনন্দ ছিল ফতেপুরে। আলস্য, পরিহাস ছিল বাসিন্দাদের মধ্যে। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে বদলে গিয়েছে সব। শোক, আর্তনাদ, সব খোয়ানোর বেদনায় ফতেপুর যেন ‘অভিশপ্ত নগরী’।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement