Goons

Gulshan Colony: দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল! এত কাণ্ডের পরও কেন নিয়ন্ত্রণে আসে না গুলশন কলোনি?

লালবাজারের কর্তা পুলিশি নজরদারির কথা বললেও তার ‘ফাঁক’ গলে রবিবারও দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এলাকায় বোমাবাজি হয়েছে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২২ ০৬:৩৫
Share:

প্রতীকী ছবি

এ যেন দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল! পুলিশি তল্লাশিতে কখনও উদ্ধার হচ্ছে বোমা, কখনও প্রোমোটিং সংক্রান্ত বিবাদের জেরে চলছে গুলি। আবার কখনও ভিন্‌ রাজ্যের পুলিশের হানায় গ্রেফতার হচ্ছে একের পর এক বাংলাদেশি। অপরাধ যেন পিছু ছাড়ে না গুলশন কলোনির। রবিবারের দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যের ঘটনাতেও আরও এক বার খবরে উঠে এসেছে গুলশন কলোনির নাম।

Advertisement

কিন্তু কেন? কেনই বা নিয়ন্ত্রণে আসে না এই এলাকার দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য?

এর কারণ হিসেবে এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ কখনও দায়ী করছেন প্রোমোটিং-রাজকে, কেউ আবার এলাকা দখল এবং রাজনৈতিক দলের একাংশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদতের কথা তুলে ধরছেন। তাঁদের আরও অভিযোগ, পুলিশ সব জানা সত্ত্বেও পরিস্থিতির বদল হয় না! যদিও ওই এলাকায় দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্যের কথা স্বীকার করছেন না কলকাতা পুলিশের এক কর্তা। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও কিছু ঘটলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেয়। নজরদারিও চলে নিয়মিত।’’

Advertisement

লালবাজারের কর্তা পুলিশি নজরদারির কথা বললেও তার ‘ফাঁক’ গলে রবিবারও দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে এলাকায় বোমাবাজি হয়েছে বলে অভিযোগ। কয়েক রাউন্ড গুলিও চলে। পুলিশ যদিও গুলি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। মাসখানেক আগে কয়েক জন দুষ্কৃতী জেল থেকে ছাড়া পেয়ে এলাকায় এসে তাণ্ডব চালিয়েছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। কয়েক মাস আগে এই গুলশন কলোনি থেকেই ২২ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। পুলিশের নজর এড়িয়ে এই এলাকায় ঘাঁটি গেড়ে ধৃতেরা নানা বেআইনি কাজ চালাত বলেই তাদের জেরা করে জানা গিয়েছে। গত বছরের জানুয়ারিতে অভিযান চালিয়ে গুলশন কলোনির একটি নির্মীয়মাণ বাড়ি থেকে ১৬টি তাজা বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। সঙ্গে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির মশলা। তার দিনকয়েক পরেই প্রোমোটিং সংক্রান্ত বিবাদের জেরে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটে সেখানে।

কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের গুলশন কলোনি, মার্টিনপাড়ায় ভোটারের সংখ্যা কমবেশি ১৫০০। তবে ওই এলাকায় প্রায় এক লক্ষের কাছাকাছি মানুষ বসবাস করেন বলে খবর, যাঁদের অধিকাংশই উত্তরপ্রদেশ, বিহারের লোক। অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে থাকা এই এলাকার একটি বড় অংশকে বরাবরই রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, গত কয়েক বছরে আশপাশের এলাকায় বেআইনি নির্মাণ হলেও ওই এলাকার তেমন কোনও উন্নয়ন হয়নি। অথচ, দখল হয়েছে একের পর এক সরকারি জমি! কখনও
সরকারি জমি দখল করে তৈরি হয়েছে নির্মাণ, কখনও ভেড়ি বুজিয়ে গড়ে উঠেছে বসতি। জলাভূমি বুজিয়ে, মোটা টাকার বিনিময়ে সেখানে অনেককে বসিয়ে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। যাকে কেন্দ্র করেই তৈরি হয়েছে প্রোমোটিং-চক্র।

কিন্তু কেন এই দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য? স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘আসলে সরকারি জমির একাংশ দখল করে, বেআইনি বাড়ি বানিয়ে লোক বসিয়ে দেওয়া হয়। বিনিময়ে মোটা টাকা নেওয়া হয়। কোনও কিছুই এলাকায় এই ‘দাদাদের’ নজর এড়িয়ে করা যায় না। প্রোমোটিংকে কেন্দ্র করেই এলাকায় একের পর এক গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। তাদের মধ্যেই কখনও গুলি, কখনও বোমাবাজি হচ্ছে।’’ এলাকার এই ‘দাদাদের’ একাংশের মদতেই সেখানে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এত রমরমা বলেও অভিযোগ।

যদিও এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুশান্তকুমার ঘোষ বলেন, ‘‘আমি তিন মাস আগে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েছি। ভোট ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় বেআইনি নির্মাণ বন্ধ হয়েছে। তবে সরকারি জমি দখলের অভিযোগের তদন্তের দাবি আমিও জানাচ্ছি। এলাকায় আর কোনও বেআইনি নির্মাণ হতে দেব না।’’

তবে কি বেআইনি নির্মাণ বন্ধ হলেই এলাকায় বন্ধ হবে দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য?— এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে গুলশন কলোনির বাতাসে।Gulsha

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement